দেশজুড়ে

পাহাড়ধস : বিন্না ঘাস লাগাতে ৩০ মে আসছেন থাই রাজকন্যা

* বাংলাদেশির উদ্ভাবিত বিন্না ঘাসে থাইল্যান্ডে এসেছে সফলতা 

Advertisement

* ৪-৬ মাসেই মাটির ৬-১২ ফুট গভীরে চলে যায় শিকড়

জাদুর ঘাস খ্যাত ভেটিভার বা বিন্না ঘাস লাগিয়ে পাহাড়ের ক্ষয়রোধ করে দূষণ ও ধস ঠেকানো সম্ভব! এজন্য চট্টগ্রামে ‘ভেটিভার সেন্টার’ উদ্বোধন করবেন থাইল্যান্ডের রাজকন্যা প্রিন্সেস শিরিনধর্ন। এ লক্ষে আগামী ৩০ মে চট্টগ্রামে আসার কথা রয়েছে তার।

রোববার (২০ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগর ভবনে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত পানপিমন সোয়ান্নাপাংচের সৌজন্য সাক্ষাতে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। থাই রাজকন্যা চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড় পরিদর্শন করবেন। মেয়র রাজকন্যার আগমন উপলক্ষে সিটি কর্পোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে রাষ্ট্রদূতকে জানান।

Advertisement

এ সময় দুজনের মধ্যে অনিয়মিত বৈঠকে চট্টগ্রামের বাটালি হিলে বিন্না ঘাস প্রকল্প বাস্তবায়নের সর্বশেষ প্রস্তুতি ও অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা হয়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মেয়র বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী টাইগারপাস মেয়র বাংলো হিল, জিইসির বর্মা হিল, ফয়েস লেক সিটি হিল, ফয়েস লেক বঙ্গবন্ধু হিল, আকবরশাহ হিলে বিন্না ঘাসের পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। আর ভেটিভার সেন্টার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে বুয়েটের প্রফেসর ড. শরীফুল ইসলাম কাজ করছেন। তার সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রধান পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিমও দায়িত্বে থাকবেন।

চসিক সূত্র জানায়, নগরীর পাহাড়ের মাটি-বালু ক্ষয়রোধ ঠেকাতে ভেটিভার বা বিন্না ঘাস লাগানোর প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যেসব পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানির সঙ্গে অতিমাত্রায় মাটি ও বালু নেমে নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় সেগুলোতে এই বিশেষ ধরনের ঘাস লাগানো হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে গরীব উল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন বার্মা হাজী পাহাড়, খুলশী পাহাড় এবং টাইগার পাস মোড়সংলগ্ন দুটি পাহাড়সহ চারটি পাহাড়ে বিন্না ঘাস লাগানো হবে।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, স্বল্প খরচে আবাসন, বাঁধ রক্ষা, পাহাড় ধস ঠেকানো এবং নদীদূষণ কমানোর জন্য পরিবেশবান্ধব ও আবহাওয়া উপযোগী ‘বিন্না ঘাস’। এ প্রকল্পে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম।

Advertisement

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নগরীর ন্যাড়া পাহাড়গুলোতে বিন্না ঘাস দিয়ে পরিবেশসম্মত উপায়ে ট্রিটম্যান করা হবে।

তিনি বলেন, দেখতে ছনের পাতার মতো এ ঘাসের শিকড় অনেক লম্বা হয়। মাত্র ৪ থেকে ৬ মাসেই মাটির ছয় থেকে বার ফুট গভীরে শিকড় চলে যায়, চার পাশে অনেক এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। একটা শিকড়ের সহনশক্তি ইস্পাতের ছয় ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ ছয়টা শিকড় একসঙ্গে করলে এটি ইস্পাতের মতোই শক্তিশালী। অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা আছে এ ঘাসের।

চসিক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের পাহাড়ে বিন্না ঘাস প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর প্রথমবার সিটি মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন থাই রাষ্ট্রদূত। সেই সাক্ষাতে বিন্না ঘাস প্রকল্পের উদ্ভাবক বাংলাদেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ড. শরীফুল ইসলামসহ চসিক শীর্ষ কর্মকর্তা ও থাই কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশির উদ্ভাবিত এই বিন্না ঘাস প্রকল্প থাইল্যান্ডে বাস্তবায়ন করে সফলতা এসেছে। এই ধারাবাহিকতায় ড. শরীফুল ইসলামের উদ্যোগ এবং আবেদনে সাড়া থাই সরকার। এরপর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে চট্টগ্রামের পাহাড়ে বিন্না ঘাস প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রস্তাবনা পেশ করেন সেদেশের রাষ্ট্রদূত। প্রস্তাবনায় সিটি মেয়রের সম্মতি নিয়ে চট্টগ্রামের পাঁচটি পাহাড়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়।

চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ও অগ্রগতি নিয়ে সিটি মেয়রের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো সাক্ষাৎ করেন রাষ্ট্রদূত। বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নে থাই পরিদর্শক দলের হেলিকপ্টার এবং সড়কপথে নির্ধারিত পাহাড়গুলো পরিদর্শনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়।

পরবর্তীতে গত ২৬ এপ্রিল থাই রাষ্ট্রদূত তৃতীয়বার চট্টগ্রাম সফরে আসেন। ওই বৈঠকে চট্টগ্রামের বাটালি হিলে প্রাথমিকভাবে বিন্না ঘাস প্রকল্পের পাইলট ট্রায়াল বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। বৈঠকে সিটি মেয়রের কাছে প্রকল্প উদ্বোধনে থাই রাজকন্যার সম্মতি প্রদানের বিষয়টি জানান থাই রাষ্ট্রদূত।

তখন তিনি জানিয়েছিলেন, মে মাসের শেষ সপ্তাহে থাই রাজকন্যা বাংলাদেশ সফরে আসার কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে চট্টগ্রাম এসে বিন্না ঘাস প্রকল্প উদ্বোধনের সম্মতি প্রকাশ করেছেন। থাই রাজকন্যা চট্টগ্রাম সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে রাজকন্যাকে আন্তরিক অভিবাদন জানান।

প্রকল্পের অগ্রগতি ও সর্বশেষ প্রস্তুতি বিষয়ে গত ৯ মে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে চতুর্থবার সাক্ষাৎ করেন রাষ্ট্রদূত। এই সাক্ষাতে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে থাইল্যান্ডে বিন্না ঘাস প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশগ্রহণকারী দলটিও উপস্থিত ছিল।

সর্বশেষ রোববার (২০ মে) দুপুরে সাক্ষাৎ করলেন থাই রাষ্ট্রদূত। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, চসিক এবং থাইল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আবু আজাদ/জেডএ/এমআরএম