> বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা> নালিশ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী> হয়রানির ভয়ে বিষয়টি চেপে যান ২৩ শতাংশ ভুক্তভোগী> ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের শিকার ১২.৭৮% পুরুষও> সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ
Advertisement
সাইবার অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে এ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এমন পরামর্শ দিয়েছেন অধিকাংশ ভুক্তভোগী। ‘সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন’র এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংগঠনটির তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৮ বছরের কম ১০.৫২%, ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম ৭৩.৭১%, ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ১২.৭৭% এবং ৪৫ বছরের বেশি ৩%।
Advertisement
সাইবার অপরাধ প্রতিকারের উপায় নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব এবং লোকলজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অপরাধের শিকার হওয়া ৪৪ শতাংশ ভুক্তভোগী মনে করেন, ‘অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি দেয়া গেলে ঘুণপোকা খ্যাত এ নীরব ঘাতকের হাত থেকে পরিত্রাণ মিলবে। ২৯ শতাংশ আইনের প্রয়োগ বাড়ানো এবং ২৭ শতাংশ সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে আক্রান্ত সাইবার অপরাধের মধ্যে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের শিকার হন ১৪.২৯ শতাংশ নারী। একই ধরনের অপরাধের শিকার হন ১২.৭৮ শতাংশ পুরুষ। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি হ্যাকিং/তথ্য চুরির শিকার নারী- পুরুষের অনুপাতে পুরুষের অবস্থান দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।
এক্ষেত্রে ১৩.৫৩ শতাংশ পুরুষ আক্রান্ত হলেও নারীর আক্রান্তের হার ৫.২৬ শতাংশ। অপরাধের ধরনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ছবি বিকৃতির মাধ্যমে অনলাইনে অপপ্রচারে নারী-পুরুষের এ অনুপাত অনেকটাই বিপ্রতীপ বলা চলে। এ অপরাধে আক্রান্ত নারীর হার ১২.০৩% হলেও পুরুষের বেলায় তা ৩.৭৬%।
অনলাইনে হুমকিমূলক বার্তাপ্রাপ্তির হার নারীর ক্ষেত্রে ৯.৭৭% এবং পুরুষ ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে ৩.৭৬%।
Advertisement
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২১ শতাংশের মধ্যে ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নালিশ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ২৩ শতাংশ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির ভয়ে পুরো বিষয়টি চেপে যান। অন্যদিকে সামাজিক ভাবমর্যাদা রক্ষায় পুরো বিষয়টি গোপন রাখেন ১৭ শতাংশ এবং প্রভাবশালীদের ভয়ে নিশ্চুপ থাকেন ৫ শতাংশ ভুক্তভোগী।
ব্যক্তিপর্যায়ে ভুক্তভোগীদের প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিষয়টি পর্যালোচনা এবং তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে ১৩৩ ভুক্তভোগীকে নয়টি প্রশ্ন করা হয়।
গবেষণা পর্যালোচনামূলক আলোচনায় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ইলেক্ট্রনিক সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক (যুগ্ম সচিব) আবুল মানসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এক জরিপে উঠে এসেছে, নবম ও দশম শ্রেণির মেয়েরা সাইবার ক্রাইমের শিকার বেশি হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে ১০০টা স্কুলে সচেতনতামূলক বই বিতরণ করেছি। এ বই শুধু মেয়েদের জন্য নেয়, তাদের বাবা-মা ও ভাইদের পড়ার জন্যও। যদি সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায় তাহলে ৫০ শতাংশ অপরাধ এমনিতেই কমে আসবে। এছাড়া ভুক্তভোগীদের সহায়তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ৯৯৯ জরুরি সেবা এবং সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন তো আছেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সাইবার ক্রাইম বন্ধে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। আগে যে সম্পর্ক কিংবা লেনদেন ছয় মাসে হতো, ডিজিটাল অনলাইনের যুগে এখন এক ঘণ্টায় হয়। অল্প সময়ে অনেকে কিছু চিন্তা-ভাবনা না করেই অনেক কথা বলে ফেলেন। এরপরই তারা সাইবার হামলার শিকার হন।
‘অনেক ভুক্তভোগী আমাকে বলেছেন, তারা ভাবতেই পারেননি এমনভাবে হামলার শিকার হবেন। এই অপরাধ বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বর্তমানে অধিকাংশ সাইবার অপরাধ ফেসবুক-কেন্দ্রিক। আইসিটি বিভাগকে আহ্বান জানাব তারা যেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন; যাতে কেউ হামলার শিকার হলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।’ এআর/এমএ/এমএআর/আরআইপি