রাজনীতি

বিএনপি না আসলে নির্বাচন থেমে থাকবে না : কাদের

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরি করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আশার বিষয় হলো এবার কেউ সেই ফাঁদে (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা) পড়ছে না।

Advertisement

রোববার দুপুরে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি অংশ নিলে বড় দল হিসেবে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। কিন্তু অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যার ঘাটতি হবে না। সেটা এবার হবে না। বিএনপি নির্বাচনে না আসলে নির্বাচন থেমে থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বড় দুর্ভাগা এ দেশ। দেশের মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি নিয়েও বিতর্ক হয়। যে রণধ্বনি মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিজয়ী করেছে, তাকে কেন যেন মনে হয় শুধু আওয়ামী লীগের। আর কেউ রণধ্বনি উচ্চারণ করে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্ট হতে চাই না। এটাকে ভাগ করতে চাই না। মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের সম্পদ ভাবতে চাই না। কিন্তু এ দেশে এরা কারা, যারা মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনিকে তাদের স্লোগান হিসেবে মেনে নেয় না। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে প্রকাশ্য একটি দলের ভাইস চেয়ারম্যান স্বাধীনতার শত্রু বলতে দ্বিধা করে না।

Advertisement

তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা চাইনি, এমন দম্ভোক্তি যারা উচ্চারণ করে। তাদের সঙ্গে ওয়ার্কিং আন্ডারস্টান্ডিং’র কোনো সুযোগ আছে? যারা ৭ মার্চের ভাষণ স্বীকার করে না, তারা কিসের মুক্তিযোদ্ধা তা আমাদের ভাবতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকেই আজ সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দেন। ঐক্যের কথা বলেন। তারা বলেন, নির্বাচনে বিএনপিকে আনার কি উদ্যোগ আপনাদের ? এ উদ্যোগ কি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ছিল না? সেদিন গণভবনের আমন্ত্রণে যদি বেগম জিয়া আসতো তাহলে দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে ওয়ার্কিং আন্ডারস্টান্ডিংএর নবতর অধ্যায় সুচিত হতো। সংসদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার অভিযোগ হতো না, এ আপরাধ তাদের । বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তারাই তৈরি করেছেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চায় না। তারা চান জাতীয়তাবাদী নির্বাচন কমিশন। বিএনপি স্বাধীন বিচার বিভাগ চায় না, তারা চান জাতীয়তাবাদী বিচার বিভাগ। তারা চান নির্বাচন কমিশন আগেই বিজয়ের গ্যারন্টি তাদের দেয়ার। তারা না জিতলে নির্বাচন কমিশন খারাপ, সরকার খারাপ।

তিনি বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পর্যবেক্ষকরা দুই তিনটা অনিয়মের কথা বলেছেন। তাতে আমরা ডিফার করি না। এত বড় একটা নির্বাচনে দুই তিনটা অনিয়ম হতে পারে। কিন্তু এর জন্য গোটা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বিএনপি। খুলনায় আমাদের প্রার্থী ক্লিন ইমেজের, সৎ, সন্ত্রাসে নেই। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থীর বিষয়ে সবাই জানে।

Advertisement

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ গাজীপুরেও মনোনয়ন দিয়েছে নতুন প্রজন্মের একজনকে, যে ক্লিন ইমেজের। সৎ, তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তাকে মনোনয়ন দিয়ে আমরা অর্ধেক বিজয়ী হয়ে গেছি। কারণ আমরা কোনো অসৎ, অযোগ্য, মানুষের টাকা পয়সা লুট করে খায়, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস করে এ ধরনের কোনো লোককে আমরা মনোনয়ন দিই নাই। এখানেই শেখ হাসিনার বিজয় হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে জিতেছেন (বিএনপি), তাতে আমরা একবারও বলেনি ওখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে। আমরা বলি নাই যে কীভাবে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে নতুন নতুন সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এগুলো নিয়ে আমরা কথা বলি না। নির্বাচনে হেরে গেছি, মেনে নিয়েছি। বার কাউন্সিলের নির্বাচনের তিনদিন পর বলা হচ্ছে এখানেও নাকি কারচুপি হয়েছে। একি শুনি মন্থরার মুখে।

ক্ষমতাসীন দলের লোকের পকেট ভারি করার জন্য ঈদের আগে সড়ক মহাসড়ক মেরামত করা হচ্ছে বিএনপির এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্ষাকালে সড়ক মহাসড়ক সংস্কার করবো না? ধরিয়ে দেন কোথায় ক্ষমতাসীনরা। আমার দায়িত্বের সাত বছরে সচিবালয়ের বারান্দায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখি নাই। আমার কাছে কাজের জন্য কর্মীরা আসে না। কিন্তু বিএনপির আমলে তাদের নেতাকর্মীদের জন্য দাঁড়ানোই যেতো না।

তিনি বলেন, আমাদের দল একটা নিয়মে চলে। অনেকই অভাব-অনটনে আছেন। তারপরও কোস সুবিধা দিতে পারি নাই। ই-টেন্ডার। বুঝিয়ে বলি, কষ্ট পান। তারপরও এ অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দিলে কেউ গ্রহণ করবে না। এটা বিএনপির অভ্যাস।

যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিবায়াত, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেন, আতাউর রহমান আতা, আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, মঞ্জুর আলম শাহীন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কাজী আনিসুর রহমান, ইকবাল মাহমুদ বাবলু, মিজানুল ইসলাম মিজু, রওশন জামির রানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাঈনুল ইসলাম খান নিখিল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

এইউএ/জেএইচ/পিআর