দেশজুড়ে

বন্দর নগরীতে হাঁটুপানি, আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে আবারও তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নগরীর নিম্নাঞ্চলে এখন হাঁটুপানি। ফলে সকাল থেকেই দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার মানুষ।

Advertisement

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা সুজিত কান্তি রায় জাগো নিউজকে বলেন, শুক্রবার রাত থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আগামী মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

চট্টগ্রাম নগরীতে গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ভারী ও হালকা বর্ষণ। কখনও মুষলধারে, আবার কখনও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার রাতে বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

নগরীর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বাকলিয়া, চকবাজার, বাদুরতলা, আগ্রাবাদসহ বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। অনেকের বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। দুর্ভোগে পড়েন অফিস ও নিত্যকাজে বের হওয়া হাজার হাজার মানুষ। চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের।

Advertisement

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, হালিশহর, পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা। এসব এলাকায় সাধারণ জোয়ারেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত দুদিনের টানা বৃষ্টি। টানা বৃষ্টিতে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। জোয়ার আসলেই এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে। এর সঙ্গে টানা বর্ষণ যুক্ত হওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্নাঞ্চলের মানুষদের।

নগরীর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সরাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন জানান, এই এলাকার যাতায়াতের প্রধান সড়ক আগ্রাবাদ এক্সেস রোড। সড়কটি গত দুই সপ্তাহে বৃষ্টির পানিতে অন্তত তিনবার ডুবেছে। প্রতিবারই ডুবেছে সড়ক সংলগ্ন বিস্তৃত আবাসিক এলাকা।

আগ্রবাদ এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, ‘উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের একেবারে শেষ এবং নিম্নাংশে মুহুরীপাড়া, গুলবাগ, দাইয়াপাড়া ও উত্তর আবাসিক এলাকা। এসব এলাকা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত জলমগ্ন থাকে। আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, সিডিএ আবাসিক এলাকাও মহেষখালের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এতে এলাকাবাসীর দুর্বিষহ কষ্ট বর্ষাকালজুড়ে লেগে থাকে।’

চকবাজার এলাকার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি ছাড়াও চকবাজার, বাকলিয়ার অনেক এলাকায় জোয়ারের কারণে প্রায়ই সড়কে পানি ওঠে। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। সড়কে কোমর পানি উঠে যায়। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। হাট-বাজার করা দুঃসহ হয়ে পড়ে।’

Advertisement

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ‘অস্বাভাবিক বেশি’ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অতি সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খানিকটা বেশি।

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা সুজিত কান্তি ধর জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৈশাখের শেষে বৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। তবে টানা বৃষ্টিটা অস্বাভাবিক বেশি বলে মনে হচ্ছে। এ বৃষ্টিপাত আরও দু-একদিন থাকতে পারে।’

এদিকে আগ্রবাদ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে পাঁচ দফা দাবি-সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে এলাকাবাসী।

দাবিগুলো হলো- ‘মুহুরীপাড়ার দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ মুহুরীপাড়ার মোড় থেকে গুলবাদ আবাসিক এলাকা ফুলকলির মোড় পর্যন্ত বিধ্বস্ত সড়কটি সংস্কারকরণ এবং নতুন এক্সেস রোডের উচ্চতা সমন্বয় করে পুনর্নির্মাণ, মুহুরীপাড়া, উত্তরা আবাসিক এলাকা, দাইয়াপাড়া ও গুলবাগ আবাসিক এলাকার ড্রেনগুলো সংস্কার ও সম্প্রসারণ, মুহুরীপাড়ার শেষ প্রান্তে কালভার্টের স্থান থেকে গুলবাগ আবাসিক এলাকার ওপর দিয়ে রাস্তার মাঝখানে নির্মিত অকার্যকর ড্রেনটি বৃহদাকারে পুনর্নির্মাণ, মুহুরীপাড়া রোডের পাশের বাইলেনগুলো সিটি কর্পোরেশনের আওতায় সংস্কার ও উন্নয়ন সাধন।

আবু আজাদ/এমএআর/এমএস