জাতীয়

‘বন্দুকযুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়’

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অপরাধীদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে গত কয়েকদিন বন্দুকযুদ্ধের সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে।

Advertisement

কেবল শনিবার দিবাগত রাতে ছয় জেলায় ছয় জন নিহত হয়েছেন। বলা হচ্ছে বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের চারজন মাদক ব্যবসায়ী, একজন ডাকাত ও অপর একজন ছিনতাইকারী। এ ছাড়া শনিবার ভোরে যশোরের ভয়নগরের পায়রা-নওয়াপাড়া সড়কে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনজন নিহত হন। বলা হয়, তারাও মাদক চোরকারবারী।

ওই ঘটনার বিষয়ে র‌্যাব-৬ খুলনা কোম্পানি কমান্ডার জাহিদ জানান, শুক্রবার গভীর রাতে র‌্যাব সদস্যরা নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে যশোরের অভয়নগর উপজেলার পায়রা-নওয়াপাড়া সড়কে তল্লাশি চেকপোস্ট বসায়। শনিবার ভোরে ওই চেকপোস্টে এসে তিন মোটরসাইকেল আরোহী গুলিবর্ষণ করে। এতে র‌্যাবের দুই সদস্য এএসআই জুয়েল ও এএসআই সায়েম আহত হন। এরপর র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। এতে ওই তিন দুর্বত্ত আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন : ছয় জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৬

Advertisement

তার আগে গেল ১৫ মে কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হামিদুল বাহিনীর প্রধান হামিদুল ইসলাম (৪৫) নিহত হন। র‌্যাবের দাবি হামিদুল শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। একইদিন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হন। বলা হয় তিনিও মাদক ব্যবসায়ী। ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব গুলিসহ একটি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও নগদ টাকা উদ্ধার করে।

১৭ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরে মাদকের আখড়া হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া বরিশাল কলোনিতে র‌্যাবের অভিযানে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। র‌্যাব-৭ এর এএসপি মিমতানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, রাতে র‌্যাবের একটি টিম বরিশাল কলোনিতে মাদক উদ্ধারের প্রস্ততি চালালে, মাদক ব্যবসায়ীরা টের পেয়ে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।

১৮ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ৪নং বেড়িবাঁধ ঘাট এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ব্যক্তি নিহত হন। র‌্যাবের দাবি নিহত ব্যক্তি একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে অস্ত্র, গুলি ও ৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয় বলেও জানানো হয়।

আরও পড়ুন : যশোরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩ মাদক চোরাকারবারী নিহত

Advertisement

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ার’ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বিভিন্ন ‘ক্রসফায়ারের’ নিরপেক্ষ তদন্ত করতে বলছেন বহুদিন ধরে। তাদের ভাষ্য, যথাযথ আইনের মাধ্যমেই অপরাধীদের বিচার হতে হবে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘বন্দুকযুদ্ধ কোনো সমাধান হতে পারে না৷ এটা একটা পথ, যেটা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়। মাদক ব্যবসা যারা করে, তারা তো ভয়ঙ্কর লোক। সে ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে যদি গোলাগুলিতে কেউ মারা যায়, সেটা ঠিক আছে। কারা ব্যবসা করছে, কারা এদের মদদ দিচ্ছে, এর মূল খুঁজে বের করতে হবে৷ তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের পথ খুঁজতে হবে।’

গত ১৪ মে দুপুরে মাদকসেবী, মাদকের ডিলার, সাপ্লাইয়ার ও স্মাগলারদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, যারা মাদকসেবন করেন তারা ছেড়ে দিন, মাদক বহনকারীরা বহন বন্ধ করুন, যারা ডিলার ও স্মাগলার তারা মাদক সরবরাহে সাবধান হোন। সারাদেশে মাদক ও মাদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে-কাউকে বাদ দিয়ে নয়। সামগ্রিকভাবে কাজ করবে র‌্যাব।

আরও পড়ুন : ‘সারাদেশে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাদকবিরোধী অভিযান চলবে’

তিনি বলেন, ‘যারা নিয়মিত ড্রাগ গ্রহণ করেন, তারা ড্রাগ নেয়া ছেড়ে দেবেন; যারা খুচরা বিক্রি করেন তারা ছেড়ে দেবেন; যে সমস্ত লোকজন ডিলারে বিক্রি ও খুচরাদের সরবরাহ করেন তারা ছেড়ে দেবেন; স্মাগলাররা যারা দেশের বাইরে থেকে মাদক নিয়ে আসেন তারা বন্ধ করবেন। খুচরা, ডিলার, স্মাগলার যার কাছে যা (যে পরিমাণ) মাদক মজুত আছে, তাদের পরামর্শ দিচ্ছি-তা র‌্যাব ক্যাম্পের বাইরে ফেলে যাবেন, ভালো হবে।’

‘ক্রসফায়ারে’ কি মাদক সমস্যার সমাধান সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এভাবে সমাধান মিলবে না। সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সব সময়ই শর্ট-কার্ট পদ্ধতিতে সমাধান চায়। যেটা সম্ভব নয়, বরং একটা অপরাধনির্মূল করতে গিয়ে আরেকটা অপরাধের জন্ম দিচ্ছে। ফলে মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আমি মনে করি, আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই এর সমাধান সম্ভব। উৎসগুলো খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে।’

এনএফ/আরআইপি