রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই বছর যাবৎ কর্মচারী পদে কেউ না থাকলেও কর্মরত দেখিয়ে মাসে মাসে ওই কর্মচারীর নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ভর্তুকির টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
Advertisement
অভিযোগ রয়েছে বিপ্লব নামের ওই কর্মচারীকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখিয়ে দুই বছর আগে অব্যাহতি দেয় শাহ মখদুম হল প্রশাসন। তবে এই পর্যন্ত তার কাছে অব্যাহতির নোটিশ পৌঁছায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১০ মে) তারিখ পর্যন্ত তার বাড়িতে এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশ পৌঁছায়নি বিপ্লবের বাড়িতে। কিন্তু বিপ্লবকে কর্মরত দেখিয়ে প্রতিমাসে ভর্তুকি বাবদ হল কর্তৃক ২ হাজার ৪ শত টাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ৩ হাজার ৬ শত টাকাসহ মোট ৬ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
গত মার্চ মাসের টাকাটিও ডাইনিং কর্মচারীর (টেবিল বয় বিপ্লব) নামে উত্তোলন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ ও হিসাব দপ্তর থেকে হল প্রশাসনের কাছে সে টাকাটি এসেছে। যাতে গত ১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে স্বাক্ষর করেছেন শাহ মখদুম হল প্রাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম। যার মেমো নং-৭০৫০/এসএম/১৮। এই হিসাবে গত দুই বছরে প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ওই ডাইনিং টেবিল বয় বিপ্লবের নামে উত্তোলনের অভিযোগের তীর হল প্রাধ্যক্ষসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
Advertisement
হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষরিত কাগজ দেখে, হলে খোঁজ নেয়া হয় বিপ্লব নামের কর্মচারীর। তবে ডাইনিংয়ে কর্মরত কর্মচারীরা জানান, তার চাকরি নেই অনেক আগে থেকেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. বিপ্লব নামের ওই কর্মচারী উল্টো অভিযোগ করে বলেন, আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিনি। সাদা কাগজে সই নেয়ার মাধ্যমে তাকে কাজে আসতে নিষেধ করা হয়। ক্ষমা চেয়েও পার পাননি তিনি। এ ঘটনায় তার উপর হাত তোলেন হল প্রাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম। আর অব্যাহতির বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। তবে এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশ গত দুই বছরে আমার কাছে পৌঁছায়নি।
খোঁজ নেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ কর্মচারীদের সংস্থাপন শাখার জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের গত বৃহস্পতিবার (১০ মে) পর্যন্ত চাকরিতে বহাল ছিলেন বিপ্লব নামের ওই কর্মচারী। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে বিপ্লবের একটি পদত্যাগ পত্র নিয়ে হাজির হন শাহ মখদুম হলের কর্মকর্তা নাসির।
জাহাঙ্গীর হোসেন আরও বলেন, ২০১৭ সালের অক্টোবর বা ডিসেম্বর মাসে বিপ্লব নামের কর্মচারী চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে এ সংক্রান্ত একটি পদত্যাগ পত্র নিয়ে হাজির হয়। এবং তাকে পদত্যাগ দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন হল কর্মকর্তা নাসির। এ বিষয়ে নাসির জাহাঙ্গীর নামের কর্মকর্তার কাছে দাবি করেন, ভুলক্রমে তার পদত্যাগ পত্রটি সংস্থাপন শাখায় পৌঁছায়নি।
Advertisement
এদিকে বিপ্লবের স্ত্রী রেখা বেগমও অভিযোগ করেন, আমার স্বামী নেশা খাইত বলে হল প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম আমাকে তার বাড়িতে কাজে নিয়েছিলেন। তবে বাড়িতে কাজ করিয়ে হল থেকে স্বামীর বেতনটা দেয়ার কথা বলেন। এরই মধ্যে আমার ছোট সন্তান পেটে থাকায় আমি কাজ করতে পারতাম না। একদিন পড়েও যায়। তবে তার মধ্যেও কাজ করতে হয় আমাকে। না পারলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রেখা বেগমের। এর পর ৬ মাস কাজ করার পর আর কাজে যান নাই তিনি বলে জানান।
রেখা বেগম আরও বলেন, ৬ মাসে আমাদেরকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বলা হয় বাকি টাকা পিয়নের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার বাড়িতে কোনো পিওন আসেনি। শুনেছি আমার স্বামীর নামে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এর আগেও করা হতো।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এদিকে ২০১৫ সাল থেকে হলে ৪০টি সিট বাড়িয়ে ডরমিটরি করা হয়েছে দুইটি। ডরমিটরিতে শিক্ষার্থীদেরকে আবাসিকতা দিয়ে সিট প্রতি ১০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে সে টাকাটির নির্দিষ্ট ৩০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হচ্ছে না।
তবে শাহ মখদুম হল প্রাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম টাকা উত্তোলনের বিষয়টিকে অস্বীকার করে দাবি করেন, বিপ্লব নামের ওই কর্মচারী এখন হলে চাকরি করে না। ভুল করে টাকাটি চলে এসেছে।
আর স্বাক্ষর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি স্বাক্ষর করেছি তবে টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়নি। ওই নামে টাকাগুলো এখনও জমা আছে। এর বাইরে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
এমএএস/জেআইএম