দেশজুড়ে

কোমেনের আঘাতে বিধ্বস্ত উপকূলীয় অঞ্চল

ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ দুর্বল হয়ে সন্দীপ উপকূল অতিক্রম করলেও এর প্রভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কক্সবাজারের অধিকাংশ উপকূল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ঝড়ো ও দমকা হাওয়ার পাশাপাশি ভারি ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে এসব এলাকা। জেলার টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে কোমেন। কোমেন দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে কক্সবাজার উপকূলে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরছেন উপকূলীয় লোকজন। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে।  ঘূর্ণিঝড় চলে গেলেও উপকূলীয় নিন্মাঞ্চলে জোয়ারের পানি রয়ে গেছে। শুক্রবার সকাল ১০টার জোয়ারেও নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পুনরায় প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক উপকূলীয় লোকজন। সামুদ্রিক নৌযানগুলো এখনো নিরাপদ স্থানে নোঙর করে আছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম নাজমূল হক জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ চট্টগ্রাম হয়ে সন্দ্বীপ উপকূল অতিক্রম করার পর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে দেয়া ৭নং বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩নং সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মাছ ধরার সকল ট্রলারকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। শুক্রবার থেকে কক্সবাজারে ভারি বর্ষণ বন্ধ রয়েছে।  টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে শাহপরীরদ্বীপ। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে দ্বীপের বিশাল একটি অংশ। জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বীজ তলা, ফসলি জমি, চিংড়ি ঘের ও ঘর বাড়ি তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার লোকজন শুকনা খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছেন। তিনি আরো বলেন, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে সড়ক যোগাযোগ। টেকনাফ সদর থেকে কোনো ধরনের কাঁচামাল আনা-নেয়া করা যাচ্ছে না। ফলে অর্থনৈতিকভাবেও চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এখানকার বাসিন্দারা। কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় কোমেন এর আঘাতে কুতুবদিয়ার উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের বেড়িবাঁধে ক্ষতি হয়েছে। পূর্বাংশেও ক্ষতির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। এগুলোর সংস্কার দ্রুত করা না হলে জোয়ারের পানি ঢুকে পুনরায় দুর্ভোগে পড়বেন দ্বীপবাসী। সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, কোমেন এর আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেন্টমার্টিনে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় গাছ চাপা পড়ে মোহাম্মদ ইসলাম (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তিনি আরো বলেন, জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। হারিয়ে গেছে ২টি ফিশিং ট্রলার, একটি সার্ভিস বোট, ছোট বড় ৮টি নৌকা ডুবে গেছে। উড়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ির চালা। সব মিলে অন্তত আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মহেশখালীর সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, কোমেন এর আঘাতে দ্বীপের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানে ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে গেছে। তবে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জাগো নিউজকে জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লক্ষাধিক মানুষের মাঝে শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। আগাম প্রস্তুতি থাকায় ঘূর্ণিঝড় কোমেন এর আঘাতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যেখানে ক্ষতি হয়েছে সেখানে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত হয়েছে।সায়ীদ আলমগীর/এমজেড/এমএস

Advertisement