একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি রমজানে ভোট প্রস্তুতিকে জোরালো করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকবেন নেতারা।
Advertisement
দলের নেতাদের অভিমত, কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, দল গোছানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে রমজানে স্থানীয়ভাবে ইফতারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। যেহেতু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটিই শেষ রমজান তাই বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার স্থানীয় পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন কিছুটা বেশি হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় রমজানের প্রথম দিন থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতারের অংশ নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরছেন তারা।
অপরদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রভিত্তিক পোলিং এজেন্ট নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলতি মাস থেকেই শুরু করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ পোলিং এজেন্টকে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করেছে দলটি।
Advertisement
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা অনেকটাই গুছিয়ে আনা হয়েছে। দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্বে ৫০০ জনকে পোলিং এজেন্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় কেন্দ্রভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণ দেবেন। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার পাশাপাশি সঠিকভাবে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি শেখানো হবে।
নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জানুয়ারি সিলেটে জনসভার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। পর্যায়ক্রমে বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, চাঁদপুরে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক জনসভা করেছে আওয়ামী লীগ। এসব জনসভায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলের নেতারা মনে করেন, নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। রমজানে ইফতার আয়োজনের পাশাপাশি পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রস্তুতির পালে বাতাস আরও জোরালো হবে। সর্বস্তরের নেতাকর্মীদেরও সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় রাখা সম্ভব হবে। ফলে আসন কেন্দ্রিক তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের পাশাপাশি সমন্বয়ও তৈরি হবে।
Advertisement
ইতোমধ্যেই ‘জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এতে শেখ হাসিনা চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম কো-চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সদস্য সচিব মনোনীত হয়েছেন। দলের উপদেষ্টা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচন পরিচালনার অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েও কমিটি গঠনের চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ। বিভাগীয় পর্যায়ের এ কমিটিতে দলের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যকে আহ্বায়ক, সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সাংগঠনিক সম্পাদককে সদস্য করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচনে পোলিং এজেন্টরা ভোটারদের ভোটদানে সহযোগিতা করে। ভোটারদের মধ্যে বেশির ভাগই অল্প শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত এবং অনেকে একেবারেই অশিক্ষিত। তারা ভোট দেয়ার সময় তারা অস্বস্তি বোধ করেন। পোলিং এজেন্টরা তাদের ভোট দিতে সহায়তা করবে।
এছাড়া একজন পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব, কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করার জন্য প্রতিবারই আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকি। এর নেতৃত্বে থাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বলে জানান তিনি।
দলটির অপর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান বলেন, প্রতি রমজানেই দলীয় নেতাকর্মীদের এক জাগায় নিয়ে আসা, শুভেচ্ছা বিনিময় ও দল গোছানোর জন্য ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। বরং এবারের আয়োজন আরও জোরালো হবে। কারণ আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে টানতে ঘন ঘন এলাকায় যাবেন। নানা কর্মসূচিতে অংশ নিবেন।
এইউএ/এএইচ/জেআইএম