আত্মসন্ধানী ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধের কবি জালাল উদ্দিন খাঁ। তিনি যেমন ছিলেন, সমাজ সচেতন একজন ব্যক্তি, তেমনি ছিলেন, আবেগপ্রবণ, দরদি, মানবতা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত। তবে ধর্ম সম্পর্কে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। ৩১ জুলাই এই গুণীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। কবি জালাল উদ্দিন খাঁ ১৮৯৪ সালের ২৫ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আসদহাটি গ্রামের মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পূর্ব পুরুষ শচীন শর্মা ছিলেন, একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্রাহ্মণ। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুলতান উদ্দিন খাঁ নাম ধারণ করেছিলেন। সুলতান উদ্দিন খাঁর উত্তরপুরুষ সদরুদ্দিন খাঁ ছিলেন জালাল উদ্দিন খাঁর বাবা।গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েও তা সমাপ্ত করতে পারেননি জালাল উদ্দিন খাঁ। তিনি উপজেলার সিংহেরগাঁও গ্রামের হাসমত তালুকদারের মেয়ে ইয়াকুতুন্নেছাকে বিয়ে করে সিংহেরগাঁও গ্রামে শ্বশুরালয়ে বসবাস শুরু করেন। স্ত্রী ইয়াকুতুন্নেছার মৃত্যুর পর থেকেই জালাল খাঁর মধ্যে বৈরাগ্য ভাব দেখা দেয়। শুরু করেন, আত্মসন্ধান ও সংগীত সাধনা। তিনি বিভিন্ন মাজারে চলাফেরা শুরু করেন এবং পীর, ফকির ও সাধকের সান্নিধ্য লাভ করেন। জালাল খাঁ তার দীর্ঘ জীবনে অসংখ্য জনপ্রিয় ও জননন্দিত গীতিকবিতা রচনা করেছেন। তার রচিত ‘জালাল গীতিকা প্রথম খণ্ড’, `জালাল গীতিকা দ্বিতীয় খণ্ড` ‘জালাল গীতিকা তৃতীয় খণ্ড’, ‘জালাল গীতিকা চতুর্থ খণ্ড’, ও ‘জালাল গীতিকা পঞ্চম খণ্ড’ নামে প্রকাশিত পাঁচটি গীতিকবিতার বই রয়েছে। এছাড়া তার ‘বিশ্ব রহস্য’ নামে বহুল তত্ত্ব সমৃদ্ধ একটি প্রবন্ধের বইও রয়েছে।এই গুণী মানুষটি ১৯৭২ সালের ৩১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তার সৃষ্টিকর্মকে লালন ও ধরে রাখার জন্য ‘জালাল একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করার জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও আজও তা হয়ে উঠেনি। এদিকে জালাল উদ্দিন খাঁর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলার সিংহেরগাঁয়ে তার মাজার প্রাঙ্গণে পরিবার ও জালাল ভক্তদের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল, জিকির আসগার ও রাতব্যাপী বাউল গানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ ‘চর্চা’ এর উদ্যোগে উপজেলা সদরের ঝংকার শিল্পীগোষ্ঠী কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।কামাল হোসাইন/এমজেড/এমএস
Advertisement