দেশজুড়ে

বাজারে এসেছে ঈশ্বরদীর লিচু

ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর, সাহাপুর, দাশুড়িয়া ইউনিয়নসহ প্রায় সবগুলো গ্রামে গাছে গাছে এখন পাকা লিচু। সলিমপুর ইউনিয়নের মানুষের প্রধান পেশা লিচুচাষ। লিচু এ এলাকার মানুষকে এনে দিয়েছে সুখ আর সমৃদ্ধি। প্রসিদ্ধ এ লিচুর কদর এখন দেশজুড়ে। লিচুর আয়েই চলে এলাকার মানুষের সারা বছরের ভরণ-পোষণ।

Advertisement

লিচুর ব্যবসা মাত্র তিন সপ্তাহের। জ্যৈষ্ঠের প্রথম থেকে ২০-২২ তারিখ পর্যন্ত। এখন ভরা মৌসুম। প্রতিদিন বিশাল লিচুর হাট বসছে জয়নগর, শিমুলতলা, দাশুড়িয়া, আওতাপাড়া ও সিলিমপুর মোড়ে। হাজার হাজার ঝুড়িতে ভরা হচ্ছে লাল টুকটুকে লিচু। তোলা হচ্ছে ট্রাকে। ঈশ্বরদীর লিচু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঈশ্বরদীর লিচু বাগানগুলোতে এখন বিপুল কর্মচাঞ্চল্য। এখানে দেশি লিচু এবং কলম করে বোম্বাই লিচুর চাষ হয়। লিচু গাছগুলোর মাথায় বাঁশে করে তোলা হয়েছে সাদা কাপড়ের নিশান। এর কোনো কোনোটির সঙ্গে আছে বৈদ্যুতিক বাল্ব।

চরমিরকামারী গ্রামের লিচু চাষি আলম সরদার বললেন, এটা হলো বাদুড় তাড়ানোর ব্যবস্থা। আগে তারা গাছের মগডালে কেরোসিন টিনের ঘণ্টা বেঁধে তার সঙ্গে থাকা লম্বা দড়ি টেনে আওয়াজ করে বাদুড় তাড়াতেন।

Advertisement

বাড়ির বাইরে কেউ কেউ বাঁশের মাচান তৈরি করে তার ওপর চাটাইয়ের ছাউনি দিয়ে টং তৈরি করেছেন। সেখানেই রাতভর আড্ডা জমে। বড় বড় সাউন্ড বক্স বসিয়ে বাজানো হয় জনপ্রিয় বাংলা-হিন্দি গান। বাগানগুলোও সব গায়ে গায়ে লাগানো। সারা রাত থাকে লোক চলাচল। ইদানিং লিচুর বাগান ভাঙার আগে মেয়ে-জামাই বা দূরের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকেও দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন অনেকে। বাগানেই চলে রান্না বান্না। ফলে বাদুড় আর সাহস পায় না লিচুবাগানে হানা দেয়ার।

সলিমপুর গ্রামের সফল চাষি হাসেম উদ্দিন। লিচুর আয় থেকে সংসার চালিয়েও ২ মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছেন। মানুষ করেছেন ২ ছেলেকেও। এখন তার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। বর্তমানে তার মালিকানায় রয়েছে বিশালাকৃতির ৬৫টি লিচু গাছ। প্রতি মৌসুমে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেন।

মানিকনগর গ্রামের মো. হাফিজুর রহমান মুকুলের এবার দুই শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে লিচুচাষ করে আসছেন। মুকুল বলেন, এবার শিলাবৃষ্টির কারণে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারপরও অন্তত ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করবেন বলে আশাবাদি তিনি।

এমন সফলতার খোঁজ মেলে ঈশ্বরদী উপজেলার আনাচে-কানাচে। সবচেয়ে বেশি লিচুবাগান পৌর এলাকা, সলিমপুর, সাহাপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, দাশুড়িয়া, সাঁড়া, মুলাডুলি, জয়নগর, মানিকনগর, মিরকামারি, চরমিরকামারি, আওতাপাড়া, বড়ইচড়া, বাঁশেরবাদা ও কামালপুর চর এলাকায়। বড় আকৃতি, ছোট বিচি, রসে ভরপুর এবং সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর কদর সবখানে। এখন লিচুর ভরা মৌসুম। আর তাই ঈশ্বরদীর গ্রামে গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। গাছ থেকে লিচু পেড়ে গাছের নিচেই প্যাকেট করে সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বেশির ভাগ লিচু।

Advertisement

আলাউদ্দিন আহমেদ/এফএ/এমএস