মতামত

রমজানে ভেজাল বন্ধে চাই জোরদার অভিযান

খাদ্যে ভেজাল মেশানো নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে দিন দিন এই ভেজালের পরিমাণ মহামারী আকার ধারণ করছে। এমন কোন খাদ্যদ্রব্য নেই যেখানে ভেজাল মেশানো হচ্ছে না। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে রমজানে ইফতার সামগ্রীতেও মেশানো হচ্ছে ভেজাল। অথচ খাদ্য সামগ্রী নিয়ে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীলতা দেখানোর কথা থাকলেও দেশে এর উল্টোটাই লক্ষণীয়।

Advertisement

বাজারে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিত পাস্তুরিত দুধের শতকরা ৭৫ ভাগই ব্যাকটেরিয়া দূষিত! এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। আইসিডিডিআর,বি-এর গবেষকরা শিশুদের পুষ্টির প্রাথমিক উৎস বাণিজ্যিকভাবে পাস্তুরিত দুধ সম্পর্কে নতুন গবেষণায় এ ফলাফল দেখতে পেয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, খামার থেকে শুরু করে বিক্রয়ের দোকান পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে দুধ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত। যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এটি শুধুমাত্র বিপজ্জনক হতে পারে যদি এ দুধ ‘কাঁচা’ (ফুটানো ছাড়া) অবস্থায় পান করা হয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো দেশে প্রায়ই কাঁচা দুধ পানের প্রবণতা দেখা যায়।

সত্যি বলতে কি ভেজাল এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আসল চেনাই দায়। সব জিনিসেই ভেজাল দেওয়া হচ্ছে অধিক মুনফার আশায়। মুড়িতে হাইড্রোজ, ফলমূলে কার্বাইডসহ নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল, মাছে ও দুধে ফরমালিন, সবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক, জিলাপি-চানাচুরে মবিল, বিস্কুট, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংস, জুস, সেমাই, আচার, নুডলস এবং মিষ্টিতে টেক্সটাইল ও লেদার রং, পানিতে ক্যাডমিয়াম, লেড, ইকোলাই, লবণে সাদা বালু, চায়ে করাতকলের গুঁড়া, গুঁড়া মসলায় ভুসি, কাঠ, বালু, ইটের গুঁড়া ও বিষাক্ত গুঁড়া রং। ফলে কোন খাবারই নিরাপদ নয়।

Advertisement

মুড়ি উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড, যা হাইড্রোজ হিসেবে পরিচিত। এটি মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খাদ্যে মেশালে সেটি যে ক্ষতির কারণ হবে এটা তো বলা বাহুল্য। হাইড্রোজ মেশানোর ফলে মুড়ি ফুলে ফেঁপে উঠে। দেখতে চকচকে এবং বড়সড় হয়। এর ফলে বেশি দামে বিক্রি করা যায়। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা এ কারণে মুড়িতে হাইড্রোজ মেশায়। বিশেষজ্ঞের মতে, হাইড্রোজ একটি শক্তিশালী ক্ষারীয় পদার্থ। খাদ্যের সঙ্গে এটি পেটে গেলে মানব দেহে রক্তের শ্বেতকণিকা, হিমোগ্লোবিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। অথচ মানুষকে নিরুপায় হয়ে হাইড্রোজ মেশানো মুড়ি খেতে হচ্ছে।

রমজানে ভেজাল বন্ধে নানা ধরনের উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে। রমজানে জনসাধারণ যেন ন্যায্যমূল্যে নির্ভেজাল পণ্য ও ইফতারসামগ্রী কিনতে পারেন সেজন্য মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা। মাসজুড়ে চলবে এ অভিযান। কোথাও পুলিশি পোশাকে, কোথাও সাদা পোশাকে চলবে এ নজরদারি। ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দিতে এবার একসঙ্গে কাজ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, র‌্যাব ও পুলিশ। ৪০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন রাজধানীসহ সারাদেশে এ অভিযান পরিচালিত হবে।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোন নজির নেই। এজন্য শাস্তির মেয়াদ এবং পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাছাড়া অভিযানও অব্যাহত রাখতে হবে। খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের মান ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ৭টি মন্ত্রণালয় কাজ করে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখানে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এ কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু দিনের পর দিন এই অবস্থা চলতে পারে না। ভেজালের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। মানুষজন যাতে ভেজালমুক্ত থাকতে পারেন সেটি নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই।

এইচআর/এমএস

Advertisement