চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের তিনটি সেমিস্টারের মোট নয়টি কোর্সের ৭০৯টি উত্তরপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
Advertisement
এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ঘৃণ্যতম এ ঘটনার নেপথ্যে ওই বিভাগের দুটি সেমিস্টারের মোট ৮ শিক্ষার্থীর দিকেই সন্দেহের তীর। যাদের সকলের ছাত্রত্বই ছিল সংকটাপন্ন। মূলত এটিকে কেন্দ্র করেই মূল রহস্য উদঘাটনে কাজ করছেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, সন্দেহের তালিকায় থাকা ৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই শিক্ষার্থী প্রায় এক বছর আগে ড্রপ আউট হন। এবার বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে পরীক্ষার অনুমতি পান তারা।
অন্যদিকে, আরও ছয় শিক্ষার্থীরও রয়েছে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ‘সাময়িক অনুমতি’। যদিও একটি সেমিস্টারে তাদের মানোন্নয়ন পরীক্ষার ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। তাই ওই ৮ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাঁচানোর শেষ রক্ষাকবচ ছিল এই পরীক্ষা। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন বিশেষ অনুমতি পাওয়া দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিভাগের ঝামেলাও হয়।
Advertisement
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পুড়িয়ে ফেলা উত্তরপত্রের মধ্যে তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষার উত্তরপত্র ছিল। তবে পুড়িয়ে ফেলা উত্তরপত্রের মধ্যে পঞ্চম সেমিস্টারের উত্তরপত্রই বেশি। যেখানে চারটি কোর্সের মোট পাঁচ বান্ডেল উত্তরপত্র ছিল।
এদিকে ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি। পাঁচ কর্ম দিবসের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে মূল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কমিটির সদস্যরা। এসময় তারা বিভাগের সভাপতি, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও কথা বলেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মহলকে। প্রশ্ন উঠেছে দুর্বৃত্তরা কীভাবে অনুষদে প্রবেশ করে এবং কোন সময়ে এ কাজ সংঘটিত করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫ তলা বিশিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৪র্থ তলায় সিএসই বিভাগ অবস্থিত। অনুষদে প্রবেশের প্রধান ফটক একটি। তবে বিকল্প হিসেবে পেছন দিকে আরেকটি ফটক রয়েছে। যেটি সবসময় বন্ধই থাকে। ভবনটিতে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যান্য সময়ের মতো মঙ্গলবার রাতেও দুইজন আনসার সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আর ভবনের সামনে পেছনে দুটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ফলে এ নিরাপত্তা ভেদ করে এই পথ দিয়ে প্রবেশের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
Advertisement
অন্যদিকে, দুর্বৃত্তরা ভবনের পেছনে দঁড়ি বেয়ে ছাদ দিয়ে মূল ভবনে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু ছাদের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকে। ফলে ছাদ দিয়ে প্রবেশ করার সম্ভাবনা নেই। তবে ঘটনার পরদিন পঞ্চম তলায় অবস্থিত বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরি কক্ষের দুটি দরজার মধ্যে একটি দরজা খোলা পাওয়া যায়। তাই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অফিস চলাকালীন সময়ে দুর্বৃত্তরা ভবনের ভেতরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রবেশ করে এবং বিভাগের সেমিনারে অবস্থান নেয়।
আর দুর্বৃত্তরা মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকেই উত্তরপত্রের জন্যে বিভাগীয় সভাপতির কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করে। ওই কক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরায় সর্বশেষ ১২টা ৩৩ সেকেন্ড পর্যন্ত সচল থাকে। এরপরই ক্যামেরার লেন্স ঘুরিয়ে সংযোগ কেটে দেয়া হয়। আর ভোরের দিকে এসব খাতা ছাদে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। যদিও অনুষদের পেছনের জঙ্গল থেকে এক বান্ডেল উত্তরপত্র পাওয়া যায়। ভোরে আগুন দিয়ে তারা চলে যায় অথবা সকালে আসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে যায়। কারণ সকালেও ছাদের পানির ট্যাংকের সামনে আগুন জ্বলতে দেখেন সবাই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অছিয়র রহমান। তবে বিশেষ অনুমতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
এদিকে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিটন মিত্র বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভাগের সভাপতি, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্তে সম্ভাব্য সবগুলো বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
এমএএস/পিআর