অর্থনীতি

কথা রাখেনি কসাই

কথা রাখেননি মাংস ব্যবসায়ীরা (কসাই)। রমজান মাস উপলক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) রাজধানীতে মাংসের (গরু, মহিষ ও ছাগল) দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না কসাইরা। তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে ডিএসসিসি নির্ধারিত দাম থেকে বেশি টাকা নিচ্ছেন।

Advertisement

শুক্রবার প্রথম রোজায় রাজধানীর রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, হাজীপাড়া, শান্তিনগর ও যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এবার রমজান উপলক্ষে ডিএসসিসি থেকে দেশি গরুর মাংস প্রতিকেজি ৪৫০ টাকা, বিদেশি বোল্ডার গরুর মাংস ৪২০ টাকা, মহিষের মাংস ৪২০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

তবে রমজানের প্রথমদিন শুক্রবার গরু ও মহিষের মাংস সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত দামে কোনো বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে না। গরু-মহিষের মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৭০-৫০০ টাকায়। তবে খাসির মাংস ৭০০-৭২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

Advertisement

শুক্রবার রামপুরা অঞ্চলের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৭০-৪৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে খিলগাঁও ও শান্তিনগরে। যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে গরুর মাংস ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মহিষের মাংস বিক্রি করছেন বলে কোনো ব্যবসায়ী স্বীকার করেন নি।

এদিকে রোজার কারণে মুরগির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সাদা বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। আর লাল কক মুরগির দাম বেড়ে হয়েছে ১৯০- ২০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৭০-১৮০ টাকা কেজি।

সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্ধারণ করে দেয়ার পরও বেশি দামে মাংস বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে রামপুরার ব্যবসারী কালু মোল্লা বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসে নি। তাছাড়া আমাদের যে দামে গরু কেনা পড়ছে তাতে ৪৮০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। এই দামে কারও পোষালে নেবে, না পোষালে চলে যাবে। আমরা তো জোর করে কাউকে মাংস ধরিয়ে দিচ্ছি না।’

মালিবাগ হাজিপাড়ার ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন তো কত কথাই কয়। দেশে তো কত আইন আছ, সবকিছু কি বাস্তবায়ন হয়। মাংসের ব্যবসা করি আমরা, আমরাই জানি কি দামে বিক্রি করতে হবে। আর ব্যবসায়িরা কাউকে জোর করে দেয় না, স্বেচ্ছায় মানুষ মাংস কিনে নিয়ে যায়। তাহলে এখানে দাম নির্ধারণ করে দেয়ার কী আছে?’

Advertisement

এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন বাজারে সব সবজির দাম চড়া। কই সরকার তো সবজির দাম নির্ধারণ করে দেয় না। দাম শুনে ক্রেতার যে সবজি পছন্দ হয় তা কিনে নিয়ে যায়। তেমনি মাংসও দাম শুনে ক্রেতারা কেনে। আর সব ব্যবসায়ী তো একই মানের মাংস বিক্রি করে না। ক্রেতারা বাজার ঘুরে যারটা ভালো লাগবে তারটা কিনবে।

যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, সকালে ধলপুর বাজারে গরুর মাংস কিনতে গেলে এক ব্যবসায়ী ৪৮০ টাকা কেজি চান। আর এক ব্যবসায়ী দাম চান ৫০০ টাকা কেজি। বাজার ঘুরে ৪৮০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনেছি।

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম সিটি কর্পোরেশন ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করার পরও গরুর মাংসের দাম এতো কেন? উত্তরে তারা বলেন, আমরা ৪৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারব না। আপনার নিতে ইচ্ছা হলে নেবেন, না নিলে চলে যাবেন। ৪৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস কেনার মানুষের অভাব নেই।’

রামপুরার শিমুল আক্তার বলেন, ‘৪৮০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনেছি। ওজন দেয়ার সময় কসাই বলেছিলেন এক কেজিতে ২০০ গ্রাম হাড্ডি নিতে হবে। ওজন দেয়ার পর দেখি হাড্ডি, চর্বিই ৩০০ গ্রামের ওপরে। ব্যবসায়ীরা দাম কম তো নেয়ই না, উল্টো ওজন দেয়ার সময় বিভিন্নভাবে ফাঁকি দেয়। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই, বাধ্য হয়েই কিনতে হয়।’

এমএএস/এমএমজেড/এমএস