অর্থনীতি

১৫ দিন আম না কেনার পরামর্শ

অপরিপক্ব আম পাকিয়ে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। ক্যালসিয়াম কারবাইড ও ইথোফেন হরমোন স্প্রে দিয়ে পাকানো হয়েছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন পাকা আম না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ফলের আড়তে যৌথ অভিযানে নামে র‌্যাব ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এ সময় ছয় প্রতিষ্ঠানের ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে অংশ নেন র‌্যাব ১০-এর অতিরিক্ত এসপি মহিউদ্দিন ফারুক, বিএসটিআইয়ের ফিল্ড অফিসার ইঞ্জিনিয়ার মো. শহীদুল ইসলাম ও মো. খাইরুল ইসলাম।

সরেজমিনে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে দেখা গেছে, আড়তের অধিকাংশ আম বাইরে হলুদ ও পাকা মনে হলেও ভেতরে কাঁচা। স্বাদে টক। গাছ থেকে অপরিপক্ব অবস্থায় পাড়া হয়েছে।

আড়তের কয়েকটি আম পরীক্ষা করে ইথোফেন হরমোন স্প্রের অস্তিত্ব পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় এক হাজার মণের বেশি আম ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া ৪০ মণ নষ্ট ও পঁচা খেজুর জব্দ করে র‌্যাব।

Advertisement

অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘এখন বাজারে বিক্রি হওয়া পাকা আমগুলো আসলে অপরিপক্ব। এগুলো পরিপক্ব হতে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে। এখানে এক হাজার মণের বেশি আম জব্দ করা হয়েছে, যা ক্যালসিয়াম কারবাইড ও ইথোফেন হরমোন স্প্রে দিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ইথোফেন হরমোন স্প্রে মূলত জমিতে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু অভিযুক্তরা সরাসরি আমে ব্যবহার করেছে। এই আম খেলে ডায়রিয়া, পেটের ও লিভারের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, মাত্রাতিরিক্ত ইথোফেন হরমোন মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যান্সার ও কিডনি নষ্টসহ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আম যখন পরিপূর্ণ পাকবে (পরিপক্ব হবে) তখন আপনারা খাবেন। আমি ভোক্তা সাধারণের কাছে অনুরোধ করবো, আগামী অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন আপনারা আম কিনবেন না। কারণ আমের বাইরের অংশ দেখলে মনে করবেন এগুলো পাকা বা পরিপক্ব। আসলে এটি ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পরিপক্ব দেখানো হচ্ছে। বাইরে থেকে হলুদ ও পাকা মনে হলেও ভেতরে কাঁচা।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘শুধু হলুদ টকটকে দেখে আম কিনবেন না, পরিপক্ক হয়েছে কি না দেখে কিনবেন। আমটি সঠিক সময়ে পাড়া হয়েছে কি না খোঁজ-খবর নেবেন।’

ভেজালকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে র‌্যাবের এ ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, যারা ফল বা খাবার নিয়ে ভেজাল করছে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। সে যেই হোক না কেন তাকে শাস্তি পেতে হবে। ভেজালকারীদের ধরতে মাঠে তদারকি করে এমন সংস্থাগুলো যৌথভাবে কাজ করছে, সুতারাং ভেজাল হতে সাবধান হোন।

‘দেশে জেলাগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরার আম বাজারে আগে আসে। ওই জেলার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা কথা বলে জেনেছি চলতি মাসের ২০ থেকে ২৫ তারিখের পর আম পরিপক্ব হবে। কিন্তু এখন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লোভে বেশি মুনাফার আশায় অপরিপক্ব আমকে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকাচ্ছে। এতে করে তারা শুধু মানুষের শারীরিক ক্ষতি করছে না, দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষতিও করছে। আজকে এক হাজার মণের বেশি আম নষ্ট করা হলো। এটি ২০ থেকে ২২ দিন পর গাছ থেকে পারলে এ ক্ষতি হতো না’,- বলেন তিনি।

সারওয়ার আলম বলেন, অভিযানে আপেল ও আঙুর পরীক্ষা করা হয়। এসব ফলে ফরমালিন বা ক্ষতিকারক ক্যামিকেলের উপাদান পাওয়া যায়নি। এটি আমাদের জন্য ভালো খবর। এ ছাড়া বেশিরভাগ খেঁজুরের মান ভালো।

‘আম ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, আগামী ২০ মে থেকে বাজারে আসবে সব ধরনের গুটি আম। এরপর ২৫ মে গোপালভোগ, হিমসাগর ও ক্ষিরসাপাতি ২৮ মে বাজারে আসবে। আগামী ১ জুন লক্ষণভোগ, ৫ জুন ল্যাংড়া ও বোম্বায়, ১৫ জুন আমরূপালি, ফজলি ও সুরমা ফজলি বাজারে আসবে। আশ্বিনা আম আসবে ১ জুলাই থেকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে আম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত ৭ বছরে এ অঞ্চলে আমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। গত বছর এ অঞ্চলের ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। সেখানে উৎপাদন হয় এক লাখ ৮১ হাজার ১০৭ টন।

উৎপাদন ছাড়িয়ে গেলেও গত অর্থবছরে সেভাবে গতি পায়নি আম রফতানি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে ৩ লাখ ২৪ হাজার কেজি আম সরবরাহ করে বাংলাদেশ। কিন্তু রাজশাহীর রফতানিযোগ্য ১৫ হাজার টনের মধ্যে রফতানি হয়েছে মাত্র ২৩ টন আম।

এসআই/জেডএ/পিআর