খেলাধুলা

‘আন্ডাররেটেড’ সাকিবের গুরুত্ব অপরিসীম!

বিশ্ব ক্রিকেটের বর্তমান সময়ে খাঁটি অলরাউন্ডার খুঁজে পাওয়া বেশ দূরহ ব্যাপার। ব্যাটে বলে সমানভাবে খেলে যেতে পারা সব্যসাচী ক্রিকেটারদের দারুণ চাহিদা বিশ্বের যেকোন প্রান্তের ক্রিকেটে। কিন্তু এই প্রজাতির ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বের সেরা হয়েও অবমূল্যায়িত ক্রিকেটারদের তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। যার প্রমাণ মেলে আইপিএলের নিলামের সামগ্রিক চিত্রের সাথে সাকিবের অবস্থার তুলনা করলেই।

Advertisement

আইপিএলের নিলামে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যান্য অলরাউন্ডারদের যেখানে দাম ছাড়ায় ৬-৮ কোটি রুপি। সেখানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবকে মাত্র ২ কোটি রুপিতে দলে পেয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। রাজস্থান রয়্যালস ব্যতীত আর কোন দল আগ্রহ দেখায়নি সাকিবের ব্যাপারে। তবে নিলামে অবমূল্যায়িত সাকিব এরই মধ্যে হায়দরাবাদের হয়ে দেখিয়েছেন তার সামর্থ্য, বুঝিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার গুরুত্ব।

নিলামে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ গোছালো একটি দল গঠন করে হায়দরাবাদ। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু হতেই বুমেরাং হয়ে যায় দলটির ব্যাটিং লাইনআপ। মনিশ পান্ডে, ইউসুফ পাঠান, ঋদ্ধিমান সাহাদের নিয়ে গড়া মিডলঅর্ডারের ব্যর্থতায় সাকিবের ওপর বর্তায় দলের ব্যাটিং-বোলিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এখনো পর্যন্ত খেলা ১২ ম্যাচেই সাকিব প্রমাণ করে দিয়েছেন তার গুরুত্ব।

১২ ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৬৬ রান এবং বল হাতে ১২টি উইকেট নিয়েছেন সাকিব। সংখ্যার বিচারে রান এবং উইকেটসংখ্যায় আইপিএলের অন্যান্য অলরাউন্ডারদের তুলনায় পিছিয়েই থাকবেন সাকিব। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি এবং সাকিবের অবদান বিবেচনায় সবার উপরেই থাকবেন বাঁহাতি এই স্পিনিং অলরাউন্ডার।

Advertisement

এখনো পর্যন্ত নেয়া ১২ উইকেটের মধ্যে সাকিব ৪টি নিয়েছেন পাওয়ার প্লে’তে। প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে’তে ওভারপ্রতি মাত্র ৭.৮০ করে রান দিয়েছেন তিনি এবং তার করা ৪২ শতাংশ বল থেকেই কোন রান নিতে পারেনি প্রতিপক্ষ। পাওয়ার প্লে’র এই ৬ ওভারে সাকিবের বোলিংয়ে ১টি বাউন্ডারি হাঁকাতে ৫টি করে বল অপেক্ষা করতে হয়েছে বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের।

টুর্নামেন্টে হায়দরাবাদের প্রথম ম্যাচে ৪ ওভার বল করে মাত্র ২৩ রান খরচায় সাকিব তুলে নেন দুই উইকেট। জানিয়ে দেন নিজের উপস্থিতি। পরের ম্যাচেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে বল হাতে ২১ রান খরচায় ২ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে মাত্র ১১৯ রান ডিফেন্ড করতে নেমে কিপটে বোলিংয়ে সাকিব ৪ ওভারে খরচ করেন কেবল ১৬টি রান, তুলে নেন ১টি উইকেট। এর পরের ম্যাচে আবার ১৩২ রান ডিফেন্ড করতে নামা হায়দরাবাদের পক্ষে মাত্র ১৮ রান খরচায় ২ উইকেট নেন সাকিব।

বৃহস্পতিবার রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে হায়দরাবাদ। দুই দলের প্রথম দেখায় ৫ রানে জয় পায় সাকিবের হায়দরাবাদ। সেই ম্যাচে বোলিংবান্ধব কঠিন উইকেটে ৩৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার পর বল হাতে ৪ ওভারে ৩৬ রান খরচায় প্রতিপক্ষের অধিনায়ক বিরাট কোহলিসহ ২ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠান সাকিব।

Advertisement

এসব সংখ্যার বিচারে হয়তো সাকিবের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝা যাবে না। তবে হায়দরাবাদের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করলেই বুঝা যায় বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের গুরুত্ব। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ব্যাটিং বান্ধব উইকেটেও পাওয়ার প্লে’তেই নির্দ্বিধায় সাকিবের হাতে বল তুলে দিয়েছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে সাকিবও কার্যকরী স্পিনে সঠিক সময়ে উইকে তুলে নেয়ার পাশাপাশি রানের গতি থামিয়ে রাখার কাজটা করেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়।

হায়দরাবাদের হয়ে চলতি আসরে উইকেটসংখ্যায় শীর্ষে আফগানিস্তানের লেগস্পিনার রশিদ খান। কিন্তু তার এই সাফল্যে সাকিবের আঁটসাঁট বোলিংয়ের গুরুত্বটা মূল্যায়ন করা হয়না তেমনভাবে। একপ্রান্তে সাকিব রানের গতি থামিয়ে রাখার কারণেই অন্যপ্রান্তে অবলীলায় আক্রমণাত্মক বোলিং করতে পেরেছেন আফগান তরুণ রশিদ।

সবমিলিয়ে এখনো পর্যন্ত বল হাতে ওভারপ্রতি মাত্র ৭.৭২ করে রান খরচ করেছেন সাকিব। যার ফলে পাওয়ার প্লে’র শেষভাগ থেকে শুরু করে মাঝের ওভারগুলোয় বোলিং নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি হায়দরাবাদকে। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা থেকে হায়দরাবাদ অধিনায়ক উইলিয়ামসনকেও যথাযথ পরামর্শ দিতে পারেন তিনি।

তবু সংখ্যার বিচারে আইপিএলের অন্যান্য অলরাউন্ডারদের পিছিয়ে থাকবেন সাকিব। কিন্তু এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে সাকিব ব্যাটিং করছেন রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের বোলিং বান্ধব কঠিন উইকেটে। এছাড়াও অন্যান্য দলে অলরাউন্ডারদের সামনে যেখানে সুযোগ থাকে দলের সেরা পজিশনে খেলার, সেখানে সাকিবের কাঁধে রয়েছে হায়দরাবাদের ঘাটতির জায়গাগুলো পূরণ করার দায়িত্ব।

কার্যকরী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কিপটে বোলিংয়ে সাকিব তার কাজ করে যাচ্ছেন আপন ধারায়। আর ম্যাচের পরিস্থিতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া, দলের অবস্থা বুঝে নিজের খেলার ধরণ গুছিয়ে নেয়া এবং যথাসময়ে যথাযথ পারফর্ম করতে পারার কারণেই সাকিব আল হাসান হায়দরবাদের পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের একজন অমূল্য রত্ন!

এসএএস/জেআইএম