সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবাইশা গ্রামের ১২ বছরের আলোচিত কিশোরী মুক্তামণির ডান হাতের অবস্থা আবারও খারাপের দিকে। তার হাতের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের নিয়ে ফের বসবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
Advertisement
গেল জুলাই মাসে মুক্তামণিকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তার ডান হাতের বিরল চর্মরোগ হেমানজিওমা’র চিকিৎসায় সে সময় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। দীর্ঘ ছয় মাস চিকিৎসার পর হাতের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হলে তাকে এক মাসের জন্য গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর মুক্তামণি আর ঢাকায় ফিরে আসেনি।
আরও পড়ুন >> মুক্তার আঙুল দিয়ে বের হলো ৩৮টি বড় পোকা
গতকাল জাগো নিউজে ‘মুক্তার আঙুল দিয়ে বের হলো ৩৮টি বড় পোকা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এটি ঢামেকের চিকিৎসকদের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে মুক্তামণির বাবা ইব্রাহীমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ডা. সামন্ত লাল সেন।
Advertisement
বুধবার রাত ৮টার দিকে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংবাদটি দেখার পর মুক্তামণির বাবার সঙ্গে আমি দীর্ঘক্ষণ কথা বলি। তার (মুক্তা) বিষয়ে সব খোঁজ-খবর নিয়েছি। তার বাবা আমার কাছে জানতে চান, যদি এখানে (ঢামেক) এনে মুক্তার অবস্থার উন্নতি হয় তাহলে আনবেন। অন্যথায় আনবেন না।’
“আমি তাকে (মুক্তার বাবা) বলেছি, ‘আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। এরপর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।”
তিনি বলেন, ‘মুক্তামণির বাবা জানিয়েছেন, তার হাতে মাঝেমধ্যে দু-একটা পোকা হয়। এজন্য ঢাকায় নিয়ে যদি কোনো উপকার হয় তাহলে তাকে আনা হবে।’
আরও পড়ুন >> আর ঢাকায় আসতে চায় না মুক্তামণি
Advertisement
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবাইশা গ্রামের মুদি দোকানী ইব্রাহিম গাজী ও আসমা খাতুন দম্পতির জমজ দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ১২ বছরের কিশোরী মুক্তামণি। দেড় বছর বয়সে তার ডান হাতে একটি ছোট গোটা হয়। পরবর্তীতে সেটি বড় হতে থাকে। বছর তিনেক আগে সেটি বিরল ধরনের চর্মরোগ হেমানজিওমা হিসেবে শনাক্ত হয়। রক্তনালীতে টিউমার হওয়ার কারণে তার হাত ফুলে যায়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় চর্মরোগে আক্রান্ত ডান হাতটি গাছের বাকলের মতো ফুলে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বন্ধ হয়ে যায় তার স্কুলে যাওয়া।
আরও পড়ুন >> চিকিৎসায় খুশি মুক্তামণিলোকলজ্জার ভয়ে আড়ালে থাকা শিশুটিকে নিয়ে জাগো নিউজসহ একাধিক গণমাধ্যমে গত ৯ জুলাই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেটি তৎকালীন স্বাস্থ্যসচিব মো. সিরাজুল ইসলামের নজরে আসে।
তিনি শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী নিজে মুক্তামণির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। গত ১১ জুলাই মুক্তামণিকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্নের পর শুরু হয় অস্ত্রোপচার। মুক্তামণির অস্ত্রোপচারে ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, বার্ন ইউনিট পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক সাজ্জাদ খোন্দকার, অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল, ঢামেকের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসনসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসক অংশ নেন। প্রায় ছয় মাস ধরে চলা চিকিৎসায় ছয়বার অস্ত্রোপচার হয় তার হাতে।
আরও পড়ুন >> মুক্তার সফল অস্ত্রোপচার : চিকিৎসকদের প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ
অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে কয়েকবার মুক্তামণিকে আইসিইউতে রাখতে হয়। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে চিকিৎসকরা জানান, মুক্তামণি আগের তুলনায় এখন বেশ ভালো আছে।
গত ২৩ ডিসেস্বর মুক্তামণিকে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এক মাসের ছুটি দেয়া হয়। ছুটি শেষে ফিরে এলে আবার তার চিকিৎসা শুরু হবে বলেও জানান চিকিৎসকরা। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও তাকে আর ঢামেকে আনা হয়নি।
এসএইচ/এমএআর/বিএ