রমজান আসার মাসখানেক আগেই খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে দামও কিছুটা বাড়ে। তবে অতীতের এমন অভিজ্ঞতা চোখে পড়েনি এবার। পবিত্র মাহে রমজান দুয়ারে কড়া নাড়লেও খেজুরের বাজারে এর প্রভাব যেন নেই। পুরনো প্রথা ভেঙে এবার স্থিতিশীল রয়েছে খেজুরের বাজার।
Advertisement
রাজধানীর বাদামতলী, রামপুরা, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার ও বাড্ডা অঞ্চলের খেজুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। রোজার আবহাওয়ায় খেজুরের দাম না বাড়লেও বাজারভেদে দামের পার্থক্য রয়েছে। তবে সাধারণ বাজারের তুলনায় সুপার সপে এর দাম কিছুটা বেশি।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব খেজুর পাওয়া যায় তা সরবরাহ করা হয় বাদামতলী আড়ত থেকে। এ আড়ত থেকে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা খেজুর সংগ্রহ করেন। সে কারণে বাদামতলীতে খেজুরের দাম সবচেয়ে কম।
বাদামতলীর ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বাজারে যে খেজুর পাওয়া যায় তা আসে দুবাই ও ভারত থেকে। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে সাধারণত কোনো খেজুর আসে না। সৌদি থেকে যদি প্রকৃত খেজুর আমদানি করা হয় তবে বাংলাদেশে ওই খেজুরের পাইকারি দাম দাঁড়াবে প্রতি কেজি হাজার টাকার ওপরে। কিন্তু এখন বাদামতলীর বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকার মধ্যে।
Advertisement
এখানকার ব্যবসায়ীরা আরও জানান, বাদামতলীতে ১০ কেজির এক কার্টন নাগাল খেজুর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ২৫০ টাকায়। দুই মাস আগেও এ খেজুরের দাম একই ছিল। প্যাকেট করা খালাস খেজুর এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা এবং প্যাকেট ছাড়া খালাস খেজুর এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খেজুরটির দাম দুই মাসেও বাড়েনি।
শুধু নাগাল ও খালাস খেজুর নয় অন্যান্য খেজুরের দামও এবার বাড়েনি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
এছাড়া বাদামতলীতে দাবাস খেজুর এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা, বরই খেজুর এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা, রেজিস খেজুর এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, জেহেদি খেজুর ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কার্টন বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ কেজি খুরমা খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
সালমা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. নাইম বলেন, আমাদের এখানে সবসময় খেজুর পাওয়া যায়। রোজা ও অন্য মাসের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে রোজা শুরুর এক মাস আগে থেকে বিক্রি বাড়ে।
Advertisement
‘চাহিদা বাড়ার কারণে রোজার মাসে খেজুরের দামও কিছুটা বাড়ে। তবে এবার দাম বাড়েনি। দুই মাস আগে যে দামে বিক্রি করেছি, এখনও সেই দামে বিক্রি করছি।’ মানিক এন্টারপ্রাইজের মো. সুমন বলেন, বাদামতলীর ব্যবসায়ীরা খুচরা খেজুর বিক্রি করেন না। সবাই পাইকারি বিক্রি করেন। বর্তমানে যেসব খেজুর পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো খেজুর খালাস। এখানে এক কেজি খালাস খেজুরের দাম পড়ে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। এ খেজুরই মহল্লার ব্যবসায়ীরা ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।
সরেজমিন গতকাল মঙ্গলবার রামপুরা ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানের খেজুর ১২০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। প্যাকেট করা বিশেষ খেজুর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী মো. কামরুল বলেন, আমি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে রমজান উপলক্ষে খেজুর বিক্রি করি। এবার খেজুরের বিক্রি এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। আশা করছি, রোজার আগের দিন ভালো বিক্রি হবে। বিভিন্ন মানের খোলা খেজুর এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। গত বছরের রোজাতেও খেজুরের দাম একই ছিল।
গুলশানের সুপার শপ স্বপ্নে গিয়ে দেখা যায়, এখানে বিভিন্ন মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিষ্ঠানটিতে খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে হাজার টাকার ওপরে। দামের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মী বলেন, নির্ধারিত দামেই আমরা খেজুর বিক্রি করি। এসব খেজুর কোথা থেকে এবং কী দামে কিনে আনা হয়, সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।
এমএএস/এমএআর/এমএস