রমজান মাসে রোজা পালন করা আল্লাহর নির্দেশ। রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে একজন মুমিন তার বিগত জীবনে যাবতীয় অন্যায় ও পাপাচারকে আগুনে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেয়। পুত-পবিত্র জীবন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা অসুস্থ, সফরকারীসহ অনেককেই রমজানের রোজা না রাখার ব্যাপারেও নসিহত করেছেন। কিন্তু বিনা ওজরে কেউ যদি রমজানের রোজা না রাখে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। আর ফরজ রোজা ছেড়ে দেয়া মারাত্মক অপরাধও বটে। কারণ রোজা ছেড়ে দেয়ার অর্থই হলো আল্লাহর নির্দেশের অমান্য করা।
আরও পড়ুন : রমজানের ফজিলত লাভের উপায়
ওজর ছাড়া পবিত্র রমজান মাসের রোজা ছেড়ে দেয়ায় ২টি কারণ থাকতে পারে। একটি হলো- হয় সে তা ফরজ বলে অস্বীকার করে এবং রোজাকে ইবাদত বলেও অস্বীকার করে। আর দ্বিতীয়ত- না হয় সে আলসতা করে রোজা রাখা থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
Advertisement
>> যদি কেউ রোজাকে ফরজ হিসেবে অস্বীকার করে বা ইবাদত হিসেবে অস্বীকার করে তবে সে ব্যক্তি মুরতাদ তথা ইসলামকে অস্বীকার করে বসে।
প্রথমত- ফরজ রোজাকে অস্বীকারকারীর অপরাধ ইসলাম তথা ইসলামি সরকারের কাছে হত্যাযোগ্য অপরাধ।
দ্বিতীয়ত- ফরজ রোজা অস্বীকারকারী ব্যক্তি মারা গেলে তাকে গোসল দেয়া, কাফন পরানো এবং জানাযা দেয়া যাবে না। এমনকি মুসলিমদের কবরস্থানেও তাকে দাফন করা যাবে না।
তবে যদি কেউ নওমুসলিম হয় অথবা আলেম-ওলামাদের থেকে দূরে থাকার কারণে না বুঝে এ ধরনের কথা বলে থাতে তবে তার কথা ভিন্ন।
Advertisement
আরও পড়ুন : তারাবিহ নামাজের নিয়ত ও দোয়া
>> আবার যদি কেউ অলসতা বশতঃ রমজানের ফরজ রোজা পালন না করে; তবে তার জন্য ভয়ানক কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।
হজরত আবু উমামাহ বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম; এমন সময় আমার কাছে দুই ব্যক্তি উপস্থিত হল।
তারা আমার উভয় বাহুর উধ্বাংশে ধরে আমাকে এমন এক দুর্গম পাহাড়ে উপস্থিত করালো এবং বললো, ‘আপনি এ পাহাড়ে আরোহন করুন।’
আমি বললাম, ‘এ পাহাড়ে আরোহন করতে আমি অক্ষম।’ তারা বলল, আপনার চলাচল আমরা সহজ করে দেব।’ সুতরাং আমি এ পাহাড়ে চড়লাম।
অবশেষে যখন পাহাড়ের চুড়ায় আরোহন করলাম, তখন বেশ কিছু চিৎকার-ধ্বনি শুনতে পেলাম।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এ চিৎকার-ধ্বনি কাদের? তারা বললেন, ‘এ হলো জাহান্নামীদের চিৎকার-ধ্বনি।
পুনরায় তারা আমাকে নিয়ে চলতে লাগলেন। হঠাৎ দেখলাম একদল লোক তাদের পায়ের গোড়ালির ওপর মোটা রশি দিয়ে (বাধা অবস্থায়) লটকানো আছে, তাদের কশগুলো কেঁটে ও ছিড়ে আছে। তা থেকে রক্ত ঝরছে।
প্রিয়নবি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ওরা কারা। তারা বলল, ওরা হল তারা, যারা সময় হওয়ার আগেই ইফতার করে নিত।’ (বাইহাকি, ইবনে খুযাইমা, ইবনে হিব্বান, মুসতাদরেকে হাকেম)
আরও পড়ুন : রোজার নিয়ত ও সাহরি-ইফতারের দোয়া
রোজার রাখা বা ইফতার করার ক্ষেত্রে অলসতা বা ইফতারে তাড়াহুড়ো করার কোনো সুযোগ নেই। আর ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা অস্বীকার করারও কোনো সুযোগ। যারা উল্লেখিত অবস্থায় পড়বে তারাই মহাক্ষতিগ্রস্ত।
পরিশেষে…রমজানের ফরজ রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়া মারাত্মক অপরাধ। যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য রমজানের রোজার প্রতি অবিচল আস্থা বিশ্বাস স্থাপন ঈমানের অন্যতম বিষয়।
মুসলিম উম্মাহর উচিত, ওজর ছাড়া রোজা থেকে বিরত না থাকা। রমজানের রোজা যথাযথ আদায় করা। রমজানের রোজাকে ঈমানের মুল স্তম্ভ হিসেবে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং রমজান মাসব্যাপী রোজা পালন করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজা যথযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস