তিনি সুন্দরী, মায়া ছড়িয়ে হাসেন। অভিনয়ের সাবলীলতা দিয়ে জয় করেছেন দর্শকের মন। লাক্স তারকা হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরুটাই করেছিন চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। জাহিদ হাসান, ফেরদৌসের মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন নন্দিত চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদের ‘আমার আছে জল’ ছবিতে। বলছি হালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমের কথা।
Advertisement
এরপর আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি দেখিয়েছেন অভিনয়ের প্রতিভা। জিতেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। তবে গেল কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত তিনি বড় পর্দাতে। হঠাৎ করে মডেলিংয়ে দেখা মিললেও নাটক-টেলিফিল্মে নেই আর। সম্প্রতি হাতে আছে বেশ কিছু সিনেমা।
তারমধ্যে আগামী রোজা ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘সুলতান-দ্য সেভিয়ার’ নামের একটি চলচ্চিত্র। যৌথ প্রযোজনায় এটি মিমের তৃতীয় ছবি। তবে ওপার বাংলার সুপারস্টার জিতের বিপরীতে প্রথমবারের মতো কাজ করছেন তিনি। কিন্তু ছবিটি নিয়ে বেঁধেছে বিপত্তি। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অনুমতি পায়নি এটি। পাশাপাশি আদালত থেকে আদেশ দেয়া হয়েছে কোনো উৎসবে বাংলাদেশে যৌথ প্রযোজনা ও সাফটা চুক্তিতে আমদানি করা ছবি মুক্তি দেয়া যাবে না। তাই আসছে ঈদে এর মুক্তি প্রায় অসম্ভব।
সম্প্রতি এফডিসিতে একটি ফ্যাশন হাউজের ফটোশুটে অংশ নিলেন মিম। সেখানেই জাগো নিউজের সঙ্গে ‘সুলতান-দ্যা সেভিয়ার’ ছবিটি নিয়ে কথা বলেন তিনি। মিম বলেন, ‘আপনাদের মতো আমি নিজেও ধোঁয়াশায় রয়েছি আসছে ঈদে ‘সুলতান’ মুক্তি পাবে কী না। শুনছি ছবিটি এখনো বাংলাদেশ থেকে যৌথ প্রযোজনার ছবি হিসেবে নির্মাণের অনুমতি পায়নি। আর আদালত থেকেও নাকি নির্দেশ এসেছে ঈদে যৌথ প্রযোজনার ছবি মুক্তি নিষিদ্ধ করার জন্য। সেক্ষেত্রে এই বিষয়ে আমার পক্ষে কিছু বলা মুশকিল। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানই ভালো বলতে পারবে ঈদে ছবিটি মুক্তি পাবে কী না।’
Advertisement
সুলতান সম্পর্কে মিম বলেন, ‘জিতের সঙ্গে করা ‘সুলতান’ ছবিটি ভালো গল্প ও নির্মাণের। দুই বাংলার তারকারা এতে অভিনয় করেছেন। হলে আসলে ছবিটি দর্শক উপভোগ করতেন বলে মনে হয় আমার। এই ছবির জন্য আমার খুব প্রিয় মানুষ তৌকীর আহমেদ ভাইয়ের ‘ফাগুন হাওয়া’ ছবিটিতে শিডিউল দিতে পারিনি। চমৎকার গল্প ছিলো ‘ফাগুন হাওয়া’য়। আমি মনে করি, যে কোনো অভিনেত্রীর জন্যই ‘ফাগুন হাওয়া’ একটি স্বপ্নের চলচ্চিত্র। বাধ্য হয়ে সেটি ছেড়ে দিতে হয়েছে আমাকে। বিপাশা হায়াত আপুর সঙ্গে দেখা হলে তিনিও বলেছিলেন, ছবিটি আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। ছেড়ে দেয়াটা ঠিক হয়নি। আসলে ভাষা আন্দোলন নিয়ে এটি আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র হবে আমি জানি। তবুও ঝুঁকিটা নিয়েছিলাম ‘সুলতান’ ঈদে মুক্তি পাবে সেই আশাতেই। যদি সেটা না হয় তবে খারাপ লাগবে।’
যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে মিম বলেন, ‘দেখুন এটা হতাশার যে যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো নানাভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে যৌথ প্রযোজনার ছবির ক্ষেত্রে তারকাদের অনীহা তৈরি হচ্ছে। এদেশের অল্প ক’জন শিল্পীদেরকেই কলকাতা থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু ছবি নির্মাণের পর সেগুলো যদি বাংলাদেশে মুক্তি না দেয়া যায় তবে কলকাতার প্রযোজকরা হতাশ হয়ে আর যৌথ প্রযোজনার ছবিতে লগ্নি করবে না। কোটি কোটি টাকা তারা ঢালছেন। হতাশ হলে, ক্ষতিগ্রস্থ হলে তো আগ্রহ দেখাবেন না। এমনিতেই ইন্ডাস্ট্রিতে ছবি নেই, ব্যবসা নেই। সেক্ষেত্রে যৌথ প্রযোজনার ছবিও এভাবে আটকে থাকলে সমস্যা আরও বাড়বে। বিকল্প এবং সময়োপযোগী কিছু ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।’
বলা হচ্ছে অনিয়মের কারণেই আটকে থাকছে যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো। একই অভিযোগ উঠেছে ‘সুলতান’র বেলাতেও। অনুমতি না পেয়েই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে এবং মুক্তির চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মিম বলেন, ‘নিয়ম ভাঙা সবসময়ই অন্যায়। আমি বা আমরা শিল্পী। কাজ করতে চাই। বিদেশের মাটিতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছি, সেটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে চাই। শিল্পী হিসেবে নিজের কাজ প্রসঙ্গে যা নিয়ম তা মেনে চলার চেষ্টা করি আমি। আমি শিল্পী হিসেবে প্রত্যাশা করি যৌথ প্রযোজনা হবে সংশ্লিষ্ট সকল দেশের জন্য ইতিবাচক এবং লাভজনক। তাহলেই কোনো ঝামেলা থাকবে না।’
নতুন কী খবর আছে বলুন- এম কথা শুনেই মুচকি হাসলেন মিম। বললেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিতেই তো নতুন খবর নেই। ছবি নেই, খবরও নেই। সবাই বিকল্প কিছু ভাবছে মনে হয়। কিন্তু যারা সিনেমাকেই জীবনের ব্রত করে নিয়েছি তারা কী করবো?’
Advertisement
কেন, নতুন ছবির প্রস্তাব নেই? মিম বললেন, ‘আছে। দেশীয় প্রযোজনার। কিন্তু সেগুলো ফিরিয়ে দিতে হয়। কেননা ওইসব ছবির গল্প, নির্মাতা, গবেষণা টিম, টেকনোলজি- সবকিছুই দুর্বল। কোনো ভবিষ্যতও দেখতে পাই না। কেন শুধু শুধু মহরত করে নিউজ হবো! নামের শেষে ছবির সংখ্যা বাড়ানোর সিনেমা আমি করতে চাই না। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মানসম্পন্ন কাজের জন্য ছুটেছি, এখনো তাই। এজন্যই এই মুহূর্তে উল্লেখ করার মতো কিছু নতুন খবর নেই। তবে কিছু ভালো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হচ্ছে। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে ভালো খবর পাবেন।’
প্রসঙ্গত, মিম-জিৎ ছবিটি পরিচালনা করেছেন রাজা চন্দ। ‘সুলতান-দ্য সেভিয়র’ ছবিটি বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে প্রযোজনা করেছে জিতস ফিল্ম ওয়ার্কস ও সুরিন্দর ফিল্মস। জিৎ-মিম ছাড়াও ছবিটিতে অভিনয় করেছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’খ্যাত তারকা তাসকিন রহমান ও কলকাতার নায়িকা প্রিয়াঙ্কা। আরও রয়েছেন নবাগত আসফাক রানা, আমান রেজা, সাদেক বাচ্চু, নাদের চৌধুরী, রেবাকা রউফ, শহিদুল আলম সাচ্চু প্রমুখ।
এরইমধ্যে ছবিটির কলকাতার অংশের শুটিং শেষ হয়েছে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশে শুটিংয়ের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।
এলএ/এমএস