প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘দলবল দেখে আমরা আদেশ দেই না।’ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশ (শর্ট অর্ডার) চাইতে গেলে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। রায় ঘোষণার পর বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বহালের সংক্ষিপ্ত রায় চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এ সময় তার সঙ্গে অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
এ জে মোহাম্মদ আলীর আবেদন নাকচ করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
আরও পড়ুন >> আপাতত মুক্তি পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া
আদালত বলেন, সংক্ষিপ্ত আদেশ দেয়ার বিধান আপিল বিভাগের রুলসে নেই। তবে তাড়াতাড়ি জামিনের রায় প্রকাশ করা হবে বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীকে আশ্বস্ত করা হয়।
Advertisement
রায় ঘোষণার পর আপিল বিভাগ বেলা ১১টার দিকে বিরতিতে যায়। সড়ে ১১টায় আদালত বসার পর আইনজীবীরা রায়ের সংক্ষিপ্ত কপি চাইতে আদালতে যান।
আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের সংক্ষিপ্ত আদেশ চাচ্ছি। বেলবন্ড দাখিলের জন্য সংক্ষিপ্ত আদেশ দরকার। আপনাদের আজকের রায় পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। হয়তো আপনাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। আমাদের দিতে অসুবিধা নেই।’
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়া তো আরও কয়েকটি মামলায় শোন অ্যারেস্ট আছেন। এছাড়া আপিল বিভাগ থেকে এ ধরনের শর্ট অর্ডার দেয়ার নজির নেই।’
তখন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘এ ধরনের শর্ট অর্ডার দেয়ার নজির নেই।’
Advertisement
প্রধান বিচারপতি খালেদার আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনার আবেদন রিফিউজ (নাকচ) করা হলো।’
এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগের রুলসে শর্ট অর্ডার দেয়ার বিধান আছে।’
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী প্রশ্ন করেন, ‘হাইকোর্টের বিধান কি আমাদের জন্য মানা বাধ্যতামূলক?’
জবাবে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি তা বলছি না। আপনারা চাইলে তা দিতে পারেন।’
আরও পড়ুন >> খালেদার জামিন বহাল
প্রধান বিচারপতি আবার বলেন, ‘আপনার আবেদন রিফিউজ (নাকচ) করা হলো।’
আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি তো একা এসেছি। দলবল নিয়ে আসেনি।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা কেমন কথা? দলবল নিয়ে আসলেই কি আমরা আদেশ দিয়ে দেই? দলবল দেখে আমরা আদেশ দেই না।’
বেঞ্চের অপর বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার এ জে মোহাম্মদ আলীর মন্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি গুরুতর আপত্তিকর কথা বলেছেন। আপনি আমাদের ফোর্স করতে পারেন না। আপনারা ভুলে যান যে, কোর্টে আপনারা আইনজীবী। অফিসার অব দ্য কোর্ট। কোনো দলের লোক নন।’
তখন এ জে মোহাম্মদ আলী তার মন্তব্যের জন্য আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এ পর্যায়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ জে মোহাম্মদ আলীকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যেখানে নাকচ করে দিয়েছেন সেখানে আপনি তর্ক করছেন কেন?’
শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার আবেদন আমরা বিবেচনা করতে পারলাম না। বিবেচনা করার সুযোগ নেই।’
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে জামিন পেলেও খালেদার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় শোন অ্যারেস্ট থাকায় আপাতত তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বুধবার খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখার রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত খালেদা জিয়া জামিন বহাল রেখেছেন। তবে তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় শোন অ্যারেস্ট থাকায় আপাতত মুক্তি পাচ্ছেন না।
এফএইচ/এমএআর/পিআর