বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পুরাতন হলগুলোতে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড থাকলেও নবনির্মিত হলগুলোতে না থাকায় বজ্রপাতের ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, টর্নেডো, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘বজ্রপাত’।
Advertisement
২০১৬ সালে দেশে মাত্র চারদিনের বজ্রপাতে ৮১ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। বৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে সম্প্রতি বজ্রপাতের ঘটনা আরও প্রবল আকার ধারণ করেছে। এদিকে ময়মনসিংহ ও তার আশপাশের অঞ্চলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ বিবেচনায় ইতোমধ্যেই বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার।
শিক্ষার্থীদের বজ্রপাত থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১৯৯৫ সালের আগে স্থাপিত প্রতিটি হলে সুরক্ষিত বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড থাকলেও বর্তমানে স্থাপিত হলগুলোতে সেই বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডগুলো নেই। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল ও ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের মতো বিশাল আকৃতির হল স্থাপনের সময় বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডের বিষয়টি খেয়ালই করেননি প্রকৌশলীরা। আবার শহীদ জামাল হোসেন হল ও বেগম রোকেয়া হলের সম্প্রসারিত অংশ টিনশেডের হওয়ায় ওই হলের শিক্ষার্থীরা রয়েছে বিশেষ ঝুঁকিতে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল শাখার প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহীন ইসলাম খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড আছে কি-না জানেন না বলে জানান।
Advertisement
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-একটি স্থাপনায় ভাঙাচোরা কিছু বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড থাকলেও শতকরা ৯০ ভাগ স্থাপনাতেই সেগুলোর আর অস্তিত্ব নেই। ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়তে পারে শত শত শিক্ষার্থী।
বাকৃবির ঈশা খাঁ হলের সাবেক ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম স্ট্রাকচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ছাত্র থাকাকালে এ বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডগুলো দেখেছেন। এগুলো কপারের দণ্ড দিয়ে আর্থিং করা ছিল।
তিনি আরও জানান, এগুলোর বাজারে দাম অনেক। সে কারণে অসাধু ব্যক্তিরা এগুলো চুরি করে থাকতে পারে। তবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে পুনরায় এগুলো স্থাপনের উদ্যোগ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাকৃবির এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারুখ বলেন, সাধারণত উত্তপ্ত ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হয়। উত্তপ্ত বায়ু যখন দ্রুতগতিতে ঠান্ডা হয় তখন বজ্র মেঘের সৃষ্টি হয়। এই বজ্রমেঘের ভেতরে বাতাসের দ্রুতগতির আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বাতাসের জলীয়বাষ্প একই সময়ে বৃষ্টিকণা, শিশিরবিন্দু ও তুষার কণায় পরিণত হয়। বৃষ্টিকণা ও তুষার কণার পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে তুষারের ইলেকট্রন চার্জ ধাক্কা খায়। ফলে স্থির বৈদ্যুতিক চার্জের সৃষ্টি হয়। আকাশে মেঘের ভেতর বিদ্যুতের অতিরিক্ত চার্জ সঞ্চিত হতে হতে একসময় প্রবল শব্দে মাটিতে নেমে আসে ও বিপরীতধর্মী চার্জের সঙ্গে মিলিত হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়। এটা প্রতিরোধ করতে বড় বড় স্থাপনায় অবশ্যই বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড থাকতে হবে।
Advertisement
তিনি আরও জানান, দণ্ডটি সাধারণত তামা (কপার), কপার কোটেড স্টিল বা গ্যালভানাইজড স্টিলের হয়ে থাকে। এগুলো ক্ষয় নিরোধক ও পর্যাপ্ত সাইজের হতে হবে যাতে বজ্রপাত সহজে প্রবাহিত হতে পারে।
অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারুখ বলেন, সম্প্রতি বজ্রপাতের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় সীমানায় স্থাপিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটে পতিত হলে প্রতিষ্ঠানের গবেষণা সরঞ্জামাদির ব্যাপক ক্ষতি হয়। আশেপাশে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড থাকলে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো।অ
শাহীন সরদার/আরএআর/আরআইপি