রাজনীতি

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের এক চোখ বন্ধ : রিজভী

খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের সকল অভিযোগ স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের গোচরে আনা হলেও তারা এক চোখ বন্ধ করে কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিজেদের সাংবিধানিক স্বাধীনতা অস্বীকার করে সরকারের কাছে পরাধীন হওয়ার জন্য আত্মসমর্পণ করেছে।’

Advertisement

মঙ্গলবার (১৫ মে) দুপর পৌনে একটার দিকে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি।

রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারেরই ফটোকপি। সরকারের ‘কম্প্রোমাইজড কপি’। সেই জন্য তাদের কারণে একতরফা নির্বাচনের জয়জয়কার। তাই আওয়ামী ভোট-সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া, ভোটারদের ভোট কেড়ে নিতে বাধাহীন। এখন পর্যন্ত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভয়-ভীতি আর রক্তচ্ছটায় পরিব্যাপ্ত।’

তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সরকারি জয়োল্লাসের ধরন থেকে বোঝা যাচ্ছিল নির্বাচনের দিন ভোটের পরিণতি কী হবে। আজ ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই ‘হাসিনা মার্কা’ নির্বাচনের স্বরুপ আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে। ধানের শীষের এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কয়েকদিন ধরে তাদের বাড়িতে বাড়িতে হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, মহিলা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করাসহ আওয়ামী লীগের রক্তাক্ত নির্বাচন বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকার সমর্থিত টিভি চ্যানেলগুলোতেও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট সন্ত্রাস ও ভোট জালিয়াতির চিত্র প্রচারিত হয়েছে।’

Advertisement

রিজভীর ভাষায় খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালিয়েছে। তিনি এসবের একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, দৌলতপুরের ৪নং ওয়ার্ডের দেয়ানা উত্তর পাড়া ভোট কেন্দ্রে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ২১নং ওয়ার্ডের উদয়ন বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা ভোটারদের বের করে দিচ্ছে। ২৪নং ওয়ার্ডের গণি বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থকদের বের করে দিয়েছে। ৩১নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র-২৭৭ ও ২৭৮ লবণচোরা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কমিশনার প্রার্থী আসাদুজ্জামান রাসেলের নেতৃত্বে কেন্দ্র দখল করে নৌকা মার্কায় জাল ভোট চলছে। ২৪নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র-২০১ ও ২০২ ইকবাল নগর বালিকা ভোট কেন্দ্রে নৌকা মার্কায় জাল ভোট চলছে। ২২নং ওয়ার্ডের ফাতেমা স্কুল কেন্দ্রে নৌকা মার্কায় জাল ভোট কাটা হচ্ছে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ওয়ার্ড ১১ কেন্দ্র নং-৮০ বিএনপি এজেন্টদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে। বুথের সামনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিজেদের এজেন্টদেরকে বলছে, নৌকা মার্কায় জাল ভোট দেয়ার জন্য।

৩০নং রুপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের প্রার্থীর ভোটার ও সমর্থকদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। ৩১নং ওয়ার্ডের ২৭৫ ও ২৭৬ নং কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে, ধানের শীষের কর্মীদের মারধর করে বের করে দিচ্ছে।

Advertisement

২৫নং ওয়ার্ডের ২১৭ নং কেন্দ্র দারুল কোরয়ান সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যালট পেপার নিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারছে। ওয়ার্ড নং-২৬, গল্লামারী লায়ন্স স্কুল কেন্দ্রের সামনে যুবলীগ নেতা হাফিজের নেতৃত্বে কেন্দ্রটি সন্ত্রাসীরা দখল করে নিয়েছে। ওয়ার্ড নং ২৪, ইকবাল নগর স্কুল কেন্দ্র ও সোনাপাতা স্কুল কেন্দ্রে কোনো ব্যালট পেপার নেই। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভোরেই ব্যালট কেটে বাক্সভর্তি করে রেখেছে।

ওয়ার্ড নং-১৯, ইসলামাবাদ কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেয়া যাবে না, ভোট দিলেও প্রকাশ্যে সিল দিতে হবে বলে আওয়ামী ক্যাডাররা অস্ত্র হাতে হুমকি দিচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে থেকে বিএনপি নেতাকর্মী ও ভোটারদেরকে মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। ওয়ার্ড নং-৪, কেন্দ্র নং-২৫, ২৬, ২৮ ও ৩১ থেকে ধানের শীষের সকল এজেন্টদের বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ১৮ নং ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট ও ভোটারদের বের করে দিয়েছে। ২৪ নং আব্দুল গণি সরকারি প্রাথমিক বি. কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারছে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা।

ওয়ার্ড নং-২৫, কেন্দ্র নং-২২০ নুরানী বহুমুখী মাদরাসা ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারছে। ওর্য়াড নং-২৬, বানিয়া খামার সরকারী প্রা. বি. ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের সকল এজেন্টদের বের করে দিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রটি দখলে নিয়েছে।’

এ সময় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজ, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এসআর/পিআর