পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর মাত্র দু’দিন বাকি। তবে গত কয়েক বছর ধরে চলে আসা ধারা ভেঙে এবার চট্টগ্রামের ভোগপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল থাকলেও চড়া হতে শুরু করেছে সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম। অযুহাত হিসেবে বলা হচ্ছে বৃষ্টির কথা।
Advertisement
এদিকে, রমজান মাস শুরুর এক সপ্তাহ আগ থেকে নগরীর বাজারগুলো মনিটরিং শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মনিটরিং টিম। তারা নগরীর বাজারগুলোতে মূল্য তালিকা টাঙানো, পাইকারি ও খুচরা রসিদ সংরক্ষণ, ওজনে কারচুপির ওপর মনিটরিং করছেন। প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে আসছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
প্রতিবছর শবে বরাতের পর প্রথম দশ দিন অস্থির থাকে ছোলা ও ডালের বাজার। পাইকারি ও খুচরা বাজারে দফায় দফায় দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন ক্রেতারা। কিন্তু এবারের চিত্রটা একটু ভিন্ন। চট্টগ্রামের বিখ্যাত পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে রোববার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বছরও আমদানি হয়েছে বিপুল পরিমাণ পণ্য। তাই অনেকটা স্থিতিশীল ভোগপণ্যের বাজার।
খাতুনগঞ্জে গত সপ্তাহে মানভেদে ছোলা বিক্রি হয়েছিল প্রতিকেজি ৪৮–৫০ টাকা দরে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫১–৫৭ টাকা। আর মিয়ানমারের উন্নতমানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬১–৬৩ টাকা দরে। কিন্তু খুচরা বাজারে বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকা দরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম প্রায় ৫ টাকা বেড়েছে। তবে হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
Advertisement
পাশাপাশি আদার ঝাঁজও অনেকটাই বেড়েছে। চার দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি ৮০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা দরে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫১–৫২ টাকা দরে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা দরে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়িরা জানান, সারা বছর তারা এই মৌসুমটার অপেক্ষায় থাকেন। পাইকারি বাজারে গত এক সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ টাকা দাম হয়তো বেড়েছে, তাবে তা একেবারে নগন্য।
খাতুনগঞ্জের জনতা ট্রেডার্সের ম্যানেজার ফিরোজ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘রমজান মাসকে কেন্দ্র করে খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা প্রচুর পরিমাণে ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, মটর ও খেজুরের মত পণ্য আমদানি করেছেন। এখনও প্রতিদিন সেসব পণ্য গুদামজাত করা হচ্ছে। বর্তমানে এসব পণ্যের দাম পাইকারি বাজারে সহনীয় পর্যায়ে আছে।’
চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোলায়মান বাদশা জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় বর্তমানে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম কম রয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে এ বছর প্রচুর পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। এছাড়াও গত বছরের অনেক পণ্য অবিক্রিত থেকে গেছে।’
Advertisement
চড়া হচ্ছে সবজি ও মাছের বাজার : আজ (১৪ মে) সকালে নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার ও কাজীর দেওড়ী বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের সবজিতে ১০–১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ব্যবসায়িরা বলছেন, বৃষ্টিতে প্রভাব পড়েছে সবজি বাজারে। সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সবজির দাম বেশি বেড়েছে।
নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারে প্রতি কেজি কাঁকরোল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, তিতকরলা ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, টমেটো ৩৫ টাকা, লাউ ২৫ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, পেঁপে ও কচুর ছড়া ৩০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৫০–৬০ টাকা।
ব্যবসায়ী জামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহ অনেক কমে গেছে। পটিয়া, দোহাজারী, সীতাকুন্ড ও মিরসরাই থেকে সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি থাকায় সবজির দাম বাড়তি রয়েছে।’
কাজীর দেওড়ি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১৫ দিনের ব্যবধানে মাছের দাম কেজিতে প্রায় ৩০–৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা; বড় আকারের কাতলা মাছ ৪০০ টাকা; চিংড়ি মাছ আকারভেদে ৪শ থেকে ৮শ টাকা এবং দেশি জীবিত রুই ৪শ টাকা।
মাছ ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মৌসুম খারাপ তাই সাগরের মাছ বন্ধ। আবার এ মাস থেকে কাপ্তাই লেকে মাছ মারা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া হ্যাচারির মাছ সরবরাহ অনেকটা কমে আসছে। সব মিলিয়ে এসব কারণে মাছের দাম কিছুটা বাড়তি।’
এদিকে নগরীতে হাড় ছাড়া গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা দরে। আর হাড়সহ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা। অপরদিকে ফার্মের মুরগি প্রতি কেজি ১৪০ টাকা ও দেশি মুরগি ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এমএমজেড/জেআইএম