একাত্তরে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় গজানাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ মিয়াসহ (৬৬) তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
Advertisement
তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে পাঁচটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আমলে নেয়া হবে কি না এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে।
রোববার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে আজ শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও তার সঙ্গে ছিলেন রেজিয়া সুলতানা চমন।
আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া বাদে মামলার অপর দুই আসামিরা হলেন- মো. জামাল উদ্দিন আহম্মদ ওরফে মো. জামাল উদ্দিন (৬৫) ও শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ (৭০)। আসামি গোলাপ মিয়া ও জামাল উদ্দিন কারাগারে আছেন। অপর আসামি শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ পলাতক।
Advertisement
গত ৮ মার্চ আবুল খায়ের গোলাপ মিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭ জনকে হত্যা, ৬ নারীকে ধর্ষণ, ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৩০ জনকে অপহরণ-নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাঁচটি অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এ মামলার মোট সাক্ষী ২৩ জন।
তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ
এক. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর ভোর ৫টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মো. জামাল উদ্দিন আহম্মেদ ২০/২৫ জন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জ থানার মামদপুর হিন্দুপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিন বাবু রায়কে হত্যা করে। একই দিন আসামিরা গৌরী রাণীসহ মোট ১০ জনকে আটক ও অপহরণ করে দিনারপুর আর্মিউদ্দীন আহমদ ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। এদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী চারজনকে হত্যা করে। দুই নারীকে পাকিস্তানি আর্মিরা ধর্ষণ করে এবং রাজাকাররা বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
দুই. ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর ভোর ৫টায় আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের কান্দিরগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দরছ মিয়াকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে দিনারপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে। তারা দরছ মিয়ার বসতঘর পুড়িয়ে দেয়।
Advertisement
তিন. ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মিকে সঙ্গে নিয়ে নবীগঞ্জের দেওপাড়া গ্রামে হিন্দুপাড়ায় অভিযান চালিয়ে নিরাই নমশুদ্রসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী তিনজনকে অপহরণ করে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।
চার. ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর ভোর ৫টার দিকে আসামি শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ অন্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের বনগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে জহুর উদ্দিন, জনূ উল্লাহ ও দেওয়ান মামুন চৌধুরীকে অপহরণ আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। পরে অর্থের বিনিময়ে জহুর উদ্দিন ও দেওয়ান মামুন চৌধুরী মুক্তি পেলেও জনূ উল্লাহকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ গুলি করে হত্যা করে। এ অভিযানের সময় জহুর উদ্দিনের মা ও এক বোন পাকিস্তানি আর্মিদের হাতে ধর্ষণের শিকার হন।
পাঁচ. ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মো. জামাল উদ্দিন আহম্মেদ একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের লোগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুই নারীকে ধর্ষণ করে এবং অগ্নিসংযোগ করে কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
এফএইচ/আরএস/জেআইএম