বিনোদন

কাউকে ফলো করি না, নিজের মতো হতে চাই : লাক্সতারকা মানতাশা

গেলো শুক্রবার পর্দা উঠেছে চ্যানেল আই প্রেজেন্টস লাক্স সুপারস্টার প্রতিযোগিতার নবম আসরের গ্র্যান্ড ফিনালের। প্রায় ১২ হাজার প্রতিযোগিকে পেছনে ফেলে এবারের আসরে লাক্স সুপারস্টার বিজয়ীর মুকুট জয় করে নিয়েছেন মিম মানতাশা। সেই স্বপ্ন জয়, ভবিষ্যতের নানা কথায় শনিবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। লিখেছেন ইমরুল নূর-

Advertisement

জাগো নিউজ : বিজয়ী ঘোষণা হবার মুহূর্তটা কেমন ছিল? মানতাশা : কখনোই সেটা বলে বোঝানো যাবে না। জীবনের সেরা মুহূর্ত হয়ে থাকবে এটি।

জাগো নিউজ : চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে এই সময়টুকু কিভাবে কাটাচ্ছেন?মানতাশা : বিজয়ী হবার পরও ক্যাম্পেই ছিলাম। আজকেই শেষ হবে। প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় পর বাসায় ফেরা হবে রোববার সকালে। আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে, খুব ভালো ও আনন্দঘন একটা সময় কাটছে।

জাগো নিউজ : পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দটা উপভোগ করবেন। সবাই নিশ্চয় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য.....মানতাশা : জ্বি। এটা ভেবে অনেক আনন্দ লাগছে যে সবার জন্য খুশির সংবাদ নিয়ে যাচ্ছি। এই পুরোটা সময় ক্যাম্পে ছিলাম। সন্ধ্যার পর থেকে পুরো সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটাবো। অনেক কিছু শেয়ারিং হবে, হৈ চৈ হবে।

Advertisement

জাগো নিউজ : কিছুদিন আগে পর্যন্তও ছিলেন আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো। এখন লাক্স সুপারস্টার বিজয়ী হওয়ায় আপনার নামের আগে ‘তারকা’ খ্যাতি বসেছে। অনুভূতিটা কেমন?মানতাশা : অনেক ভালো লাগছে। তাছাড়া আমাদের এইবারের ব্যাচের সবাই খুবই ভালো এবং টেলেন্টেড ছিল। তাদের মধ্য থেকে আমি বিজয়ী হয়েছি এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া।

জাগো নিউজ : তারকা হিসেবে নিজের মধ্যে কোনো পরিবর্তন অনুভব করছেন কি?মানতাশা : না। আমার কাছে তেমন কিছুই মনে হচ্ছে না যে আমি অনেক বড় কিছু হয়ে গিয়েছি। একদম আগের মতোই আছি। আমার মনে হচ্ছে এই সাফল্য কেবল মূল সাফল্যের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে। লাক্স সুপারস্টার প্রতিযোগিতা একটি বিরাট সুযোগ নিজের গুণ ও মেধাকে বিকশিত করবার। আমার অনেক কিছু জানতে হবে, শিখতে হবে, অনেক কিছু করতে হবে। আমার দায়িত্বটা অনেক বেড়ে গেছে এখন। সবার এক্সপেকটেশনের জায়গাটা অনেক বেড়ে গেছে। তাদের এই আশাটা পূরণ করতে পারবো কি-না সেটাই এখন আমার চিন্তার বিষয়।

জাগো নিউজ : লাক্স সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় যুক্ত হওয়ার গল্পটা জানতে চাই....মানতাশা : এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার আগ পর্যন্ত আমি শুধু সাধারণ একটা মেয়ে ছিলাম। পড়াশোনা নিয়ে থাকতাম। মিডিয়ায় কোনো কাজও করিনি। এটা দিয়েই পদার্পণ বলা যায়। নিজেকে আরও ভালো করে জানতে চেয়েছি। পারবো কি-না জানি না, তবে নিজেকে একটা চান্স দেওয়া প্রয়োজন মনে করেছি। এই ভেবেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। তবে অভিনয়ের প্রতি ইচ্ছে ছিল সবসময়।

জাগো নিউজ : এখানে অংশ নেওয়ার পর পুরো জার্নিটা কেমন ছিল বা অভিজ্ঞতাটা কেমন? মানতাশা : অভিজ্ঞতাটা বর্ণিল ছিল। সবকিছু নতুন নতুন ছিলো, চ্যালেঞ্জিং ছিল। খুব ভালোও ছিল। ভালো ছিল এই কারণে বলবো আমার যে, আমাদের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন যিনি তার পুরো টিম অনেক বেশি সাপোর্টিভ ছিল। অনেক বেশি হেল্প করেছে। অনেক কিছু দেখেছি, শিখেছি এই জার্নিটা থেকে।

Advertisement

জাগো নিউজ : পরিবার থেকে কতটুকু সাপোর্ট পেয়েছেন? কার অনুপ্রেরণা ছিল বেশি?মানতাশা : প্রথমদিকে তেমনভাবে কেউ সাপোর্ট করেনি। কয়েকটি পর্ব ভালো করার পর থেকে সবাই আমাকে সাপোর্ট করতে শুরু করে। আসলে সবার বিশ্বাসটা তখন বাড়ছিল। সবাই ভাবছিলেন, আমি হয়তো কিছু একটা করে দেখাতে পারবো। আর অনুপ্রেরণাটা পেয়েছি আমার বড় আপুর কাছ থেকে। আমার বন্ধুদের কাছ থেকে। তারা আমাকে বলতো- ‘তুমি পারবে মানতাশা, তোমার যোগ্যতা রয়েছে’। আমি সেই বিশ্বাসটাকেই কাজে লাগাতে চেয়েছি।

জাগো নিউজ : মডেলিং বা শোবিজে প্রতিষ্ঠার জায়গায় আইডল হিসেবে কাকে ফলো করেন?মানতাশা : আমার কোনো আইডল নেই। আমি কাউকে ফলো করি না! তবে আমার অনেককেই ভালো লাগে। একেকজনের একেকটা বিষয় ভালো লাগে। কারো কথা, কারো অভিনয়, কারো কাজ বা কারো ব্যক্তিত্ব। কাউকে ফলো করে তার মতো হওয়ার চিন্তা আমার মধ্যে নেই। আমি আমার মতো হবো, অন্য কারো মতো হতে চাই না। আমার নিজের একটা আইডেন্টিটি বানাবো। যেখানে আমার নিজস্বতা থাকবে। এটাই আমি।

জাগো নিউজ : এখানে আসার আগ পর্যন্ত নিজেকে নিয়ে কী স্বপ্ন দেখতেন?মানতাশা : শোবিজে কাজ করবো তেমনটা কখনো ভাবিনি। আমার ইচ্ছে ছিল মহাকাশচারী হবো। ছোটবেলা থেকেই আমি আবার ড্রয়িং করতে খুব পছন্দ করতাম। ভাবতাম ড্রয়িংটাকেই প্রফেশনালি নিয়ে নিবো। সেটা ভেবেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও চারুকলা অনুষদে ভর্তি হয়েছিলাম। এখন সামনে নতুন দিগন্ত। সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। তবে ছবি আঁকার প্রতি যে ভালো লাগা সেটা তো চিরকালই থাকবে।

জাগো নিউজ : মডেলিং, নাটক, সিনেমা। নিজেকে কোথায় প্রতিষ্ঠিত করতে চান?মানতাশা : অভিনয় করতে চাই। সেটা নাটকও হতে পারে কিংবা সিনেমা। যেহেতু অভিনয় করার ইচ্ছেটা বেশি, অভিনয়ই করবো। পাশাপাশি মডেলিংও করবো।

জাগো নিউজ : একটা নাটকে কাজ করার কথা শুনলাম। এটা সম্পর্কে জানতে চাই...মানতাশা : জ্বি। এটা চ্যানেল আইয়ের ঈদের একটা নাটক। এটাতে আমার সঙ্গে থাকবেন তাহসান স্যার।

জাগো নিউজ : প্রতিযোগিতায় আপনার বিচারক হিসেবে ছিলেন তাহসান। প্রথম কাজেই তাকে সহশিল্পী হিসেবে পাচ্ছেন। কেমন লাগছে?মানতাশা : অনেক ভালো লাগছে আবার অনেক ভয়ও করছে। নার্ভাস লাগছে অনেক। তিনি আমার জাজ ছিলেন এখন আমার সহশিল্পী হবেন। জানি না কি হয়। তবে উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখবো আশা করছি।

জাগো নিউজ : আপনার নিজের ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই...মানতাশা : আমার জন্ম পাবনাতে। সেখানকার আদর্শ গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি, মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হই। এখন শেষ বর্ষে আছি। আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, এখন রিটায়ার্ড করেছেন। আমরা তিন বোন ও এক ভাই। আমার বড় দুই বোন আর ছোট একটা ভাই। নিজের জেলা পাবনা হলেও বাবার চাকরির কারণে দেশের অনেক জায়গায় থাকা হয়েছে। এখন পরিবারের সাথে মোহাম্মদপুরে থাকি।

জাগো নিউজ : ভবিষ্যতে মানতাশা নিজেকে কোথায় সমৃদ্ধ দেখতে চায়?মানতাশা : বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। আমি এখনো অনেক ছোট। আমি নিজেকে একটা ভালো জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে তারপর মানুষ ও দেশের জন্য কাজ করবো। বিশেষ করে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে আমার। যারা আসলে প্রপার শিক্ষাটা পায় না, বেঁচে থাকার সুবিধাগুলোও পায় না। আমার কারণে যদি একটা শিশুও জীবনের গতি খুঁজে পায় সেটাই হবে আমার জীবনের সেরা সমৃদ্ধি।

এলএ/জেআইএম