বিএনপির শাসনামলে ব্যাংকের টাকা চুরির সংস্কৃতি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি।
Advertisement
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বিচারাধীন ৩২টি অর্থ পাচার মামলার বেশির ভাগই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। বর্তমান সরকারের সময় দুই লাখ কোটি টাকা লুটপাটে বিএনপির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যাচার দাবি করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারলে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই তথ্যের উৎস দিতে হবে। অন্যথায় জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত মিথ্যাচারের জন্য। তিনি বলেন, বিএনপির যেসব উল্লেখযোগ্য নেতা রয়েছেন তাদের মধ্যে তারেক জিয়া, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, মোর্শেদ খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত বিদেশে অর্থপাচার ও মানিলন্ডারিং মামলা চলমান রয়েছে। লুৎফজ্জামান বাবর, আলী আসগর লবী, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ ও তার স্ত্রীসহ অনেক বিএনপি নেতাদের বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। রাজ্জাক বলেন, দুই লাখ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই তথ্যের উৎস দিতে হবে। এর সঙ্গে কারা জড়িত সে তথ্যও দিতে হবে। ঢালাওভাবে বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।
সরকারি ব্যাংকের ২৫ শতাংশ ঋণ ২০ থেকে ২২ জন লোকের কাছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটাও সেভাবে সত্য নয়। তারা আমাদের সময়ে ঋণ নেয়নি। ২০ থেকে ২৫ জনের কথার তথ্যও সঠিক নয়। যে তথ্য আছে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসায়-শিল্পের সঙ্গে জড়িত, শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সরকারের সময়ে সংগঠিত দুর্নীতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, দুর্নীতি অভিযোগ আনা আর প্রমাণিত হওয়া এক নয়। সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ পর্যন্ত দুদকে হাজিরা দিয়েছেন। আইন, বিচার বিভাগ এবং দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমরা এটুকু বলতে পারি, সরকার বা দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কেউ যদি দুর্নীতি পরায়ণ প্রমাণিত হয়- সে মনোনয়ন পাবে না, দল থেকে বহিষ্কার হতে পারে। সে বিষয়ে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা এবং এ সময় খেলাপি ঋণের বা শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১৭ সালে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে খেলাপি বা শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। যেখানে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪২২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ বাড়ার কথা থাকলেও এর পরিমাণ ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যা এই সেক্টরের উন্নয়নকেই নির্দেশ করে।
Advertisement
আওয়ামী লীগের এই নেতার দেওয়া তথ্য মতে, ২০০৬-০৭ সালে জিডিপি’র পরিমাণ ছিল ৪,৭২,৪৭৭ কোটি টাকা এবং এ সময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১,৫২,৮৫৮ কোটি টাকা যা জিডিপি’র ৩২ শতাংশ এবং শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৪.৩৪ শতাংশ। অপরদিকে ২০১৭-১৮ সালে জিডিপি’র পরিমাণ ছিল ২২,৩৮,৪৯৮ কোটি টাকা এবং এ সময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭,৯৮,১৯৬ কোটি টাকা যা জিডিপি’র ৩৫.৬৬ শতাংশ এবং খেলাপি বা শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৩.৩২ শতাংশ। আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪-২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না হলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও বৃদ্ধি পেত। এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল তার রেশ শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, মো.আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।
এইউএ/জেএইচ/ওআর/আরআইপি/জেআইএম
Advertisement