অর্থনীতি

এখন বৈদেশিক সাহায্যের তেমন প্রয়োজন নেই : ফরাসউদ্দিন

এখন আমাদের অবশ্যই শিল্পায়নের দিকে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। শনিবার (১২ মে )রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক অফিসার্স বাংলাদেশ-এর এক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি।

Advertisement

ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘দশটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। তারপর ৪৭ বছরে অনেক দূর আমরা পাড়ি দিয়েছি। আমাদের ব্যাংকিং অনেক ম্যাচিউরড (বিকশিত) হয়েছে। একটা সময় দেশের অর্থনীতির এমন দুরবস্থা হয়েছিল-বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর এলসি (লেটার অব ক্রেডিট-ঋণপত্র) রিফিউজড (প্রত্যাখাত) হত। সেখান থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। বিশেষ করে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ একটা প্রায় স্বপ্নের দেশে পৌঁছায়। একটা প্রচণ্ড গতির মহাসড়কে আমরা উঠেছি।’

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে নানা সমস্যার কথা বলছেন জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, ‘এলডিসি দেশের সম্মান অত্যন্ত কম। আমরা অসম্মানজনক অবস্থান থেকে উঠে এসেছি। ক্ষতি বলতে যেটা হবে, আমরা যে বিদেশ থেকে ঋণ নিই সেটার সুদের হার বাড়বে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এত মজবুত যে, আমাদের বৈদেশিক সাহায্যের তেমন প্রয়োজন নেই। তবে, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সম্পৃক্ত থাকার জন্য এবং কিছু পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য বৈদেশিক সাহায্য আমাদের নিতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন বিভিন্ন দেশে কোটা ফ্রি (কোটা মুক্ত) রফতানি সুবিধা থাকবে না। কান্ঠামি- শব্দটি আপনারা জানেন কি না, এর অর্থ হচ্ছে কোনো ধরনের যুক্তি ছাড়া। যুক্তরাষ্ট্র কান্ঠামি করে আমাদের কোটা ফ্রি সুবিধা দিচ্ছে না। জিএসপিতে (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যসুবিধা) কিছু সমস্যা হবে। ২০০৮-০৯ সালে আমাদের রফতানি ছিল ১৪ বিলিয়ন মর্কিন ডলার, এখন ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কাজেই এই যে শক্তি, এভাবে যদি আমরা চলতে থাকি, তবে সামান্য অসুবিধা এখানে-সেখানে হলেও আমাদের তেমন ক্ষতি হবে না।’

Advertisement

‘যদি, একটা বড় যদি আছে। সামনে বাজেট, আমরা প্রকাশ্যে বলেছি, অপ্রকাশ্যে বলেছি- আমাদের কী করা দরকার। এখন যেটা করা দরকার, আমাদের অবশ্যই শিল্পায়নে যেতে হবে। কৃষি শিল্পায়নও অবশ্যই করতে হবে।’

ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর ২২ লাখ লোক শ্রমিক খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। গত ৪৭ বছরে দেশে একটি দক্ষ উদ্যোক্তা শেণি তৈরি হয়েছে। এখানে অনেকে হয়তো নয়-ছয় করেন, সাধারণভাবে আমাদের উদ্যোক্তারা অত্যন্ত শক্তিমান। আমরা আমদানিমুখী দেশ, সেটা ভাঙতে হবে। আমরা ৬ বিলিয়ন ডলারের বস্ত্র আমদানি করি, এই বস্ত্রের উপর আরএমজি (তৈরি পোশাক শিল্প) নির্ভর করে। আমি যদি দেশের ভেতর বড় বড় কাপড়ের কল স্থাপন করতে পারি, তাদের নানান সুবিধা দিতে হবে। আমরা দেশেই কাপড় তৈরি করব। আমাদের বড় ধরনের অর্থ সাশ্রয় হবে।’

‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ: স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে ব্যাংকারদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহা. মহিউদ্দিন হাওলাদার।

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ফরাসউদ্দিনকে অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। এছাড়া এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আরও চারজনকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে সংগঠনটি।

Advertisement

আরএমএম/এসআর/এমএস