একটি যোগাযোগ স্যাটেলাইট থেকে তিন ধরনের সেবা পাওয়া যায়— ১. সম্প্রচার, ২. টেলিযোগাযোগ ও ৩. ডাটা কমিউনিকেশনস।দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে সরাসরি পৌঁছাতে টেলিভিশন এবং রেডিও স্টেশনগুলো ব্রডকাস্টিং সেবা ব্যবহার করে থাকে। ইন্টারনেট সেবা সরবরাহকারীরা (আইএসপি-ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ইন্টারনেট সেবা দিতে স্যাটেলাইট ব্যবহার করেন। সেল ফোন এবং ল্যান্ড ফোন অপারেটররা তাদের সাবস্ক্রাইবারদের সঙ্গে সংযোগ তৈরির জন্য স্যাটেলাইটের টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহার করতে পারেন।
Advertisement
বর্তমানে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলো তাদের সম্প্রচারের জন্য বিদেশি মালিকানাধীন স্যাটেলাইটের ওপরে নির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধু-১ স্যালেটলাইট এই বিদেশ নির্ভরতা কমাবে এবং আমাদেরকে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ে সহায়তা করবে।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো ছাড়াও বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট দিয়ে বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলো এবং তাদের দর্শক-শ্রোতাদের সেবা প্রদানেরও সুযোগ তৈরি হতে পারে। আর এর মধ্যদিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। বর্তমানে যে চাহিদা আছে, তাতে আমরা ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের অর্ধেক ব্যবহার করে স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলোর চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা করেছি। আর বাকি অর্ধেক ব্যবহার করা হবে অন্য দেশের চ্যানেলগুলোকে সেবা প্রদানের জন্য।
বর্তমানে ডাটা সার্ভিসের জন্য অপটিক্যাল ফাইবারকে পছন্দের শীর্ষে রাখা হয়ে থাকে। অবশ্য, দ্বীপ এবং পার্বত্য অঞ্চলের মতো এলাকাগুলোতে পৌঁছানো কঠিন হওয়ায়, সেখানে ডাটা সার্ভিসের বিকল্প উপায় হতে পারে স্যাটেলাইট। পাশাপাশি, জরুরি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে ভূমিভিত্তিক যোগাযোগ সেবায় বিঘ্ন ঘটলে ডাটা ও টেলিযোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রে যোগাযোগ স্যাটেলাইট থেকে বাড়তি সেবা নেওয়া যেতে পারে।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি আমাদের স্বপ্নদর্শী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রত্যয়জনিত সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। ২০২১ সাল নাগাদ তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির পদযাত্রায় তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন, তারই সবচেয়ে দক্ষ তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি বাংলাদেশে প্রযুক্তিভিত্তিক রূপান্তরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ এরইমধ্যে একটি নিম্নআয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার জন্য নির্ধারিত তিনটি মানদণ্ডও পূরণ করেছে। আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্বপ্নদর্শী নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। এ যাত্রায় বলা যায়— দেশের ইতিহাসে একটি নতুন ডিজিটাল অধ্যায়ের সূচনা করে বঙ্গবন্ধু-১ একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক স্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে আরও সফলতা অর্জনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবেও বিবেচিত হবে।
আমি যতদূর জানি, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ হবে মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপনকারী ৫৭তম দেশ। বঙ্গবন্ধু-১ সবসময় আমাদের প্রথম স্যাটেলাইট হিসেবেই বিবেচিত হবে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, এটি কোনোভাবেই আমাদের শেষ স্যাটেলাইট হবে না। আমাদের আশা, সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের উৎক্ষেপিত স্যাটেলাইট সিরিজের প্রথম উৎক্ষেপিত স্যাটেলাইট বলেই পরিচিতি পাবে বঙ্গবন্ধু-১।
এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা যে জ্ঞান অর্জন করছেন, তা তারা কাজে লাগাতে পারবেন। আমরা আশা করতে পারি, সে দিনটি বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট তৈরি করতে সক্ষম হবেন এবং দেশের মাটিতেই তা তৈরি হবে।
Advertisement
চাঁদে অবতরণের অনুপ্রেরণীয় কাহিনী বিশেষ করে নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং –এর চাঁদে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের স্কুলগুলোতে পড়ানো হয়। বিষয়টি এখনও বিস্ময় জাগায় আর মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের শিশুদের আরও বড় পরিসরে ভাবতে উৎসাহ যোগায়। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা আশা করছি, আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ভবিষ্যতে সফল নভোচারী হতে ও উদ্ভাবনী বিজ্ঞানী হতে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারবো।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে থ্যালেস আলেনিয়া ও স্পেসএক্সের দারুণ কাজের জন্য তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের সর্বপ্রথম স্যাটেলাইটের সঙ্গে তাদের নাম ও অবদানও ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সবশেষে এই স্যাটেলাইটটি যে মহান মানুষের নামে নামকরণ করা হয়েছে আজকের দিনে আমি তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে চাই। তিনি হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৪ই জুন সর্বপ্রথম স্যাটেলাইট ভূ-কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে মহাকাশ জগতে প্রবেশ করান।
৯ বছর আগে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্ন নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ শুরু হয়েছিল। সর্বপ্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা আরও একটি স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি আরও একটি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কাছে পৌঁছে গেছি।
জুনাইদ আহমেদ পলকতথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীme@palak.net.bd
এনএফ/পিআর