দেশজুড়ে

পায়ে হেঁটে কদর-করফুলের বাড়িতে ইউএনও

অবশেষে বয়স্কভাতার কার্ড নিয়ে খাগড়াছড়ির দুই অসহায় বৃদ্ধা কদর-করফুলের বাড়িতে গেলেন ইউএনও। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্গম পাহাড়ি পথ হেঁটে বৃদ্ধা কদর-করফুলের বাড়িতে যান মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ।

Advertisement

এ সময় ইউএনও সবাইকে অবাক করে দিয়ে দুই বৃদ্ধার হাতে তুলে দেন বয়স্কভাতার কার্ড। সেই সঙ্গে তাদের হাতে তুলে দেন নয় মাসের ভাতার অর্থ।

বয়স্কভাতার কার্ড আর ভাতার অর্থ পেয়ে কেঁদে ফেলেন দুই বৃদ্ধা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে দুই হাত তুলে ইউএনও’র জন্য দোয়া করেন ৯১ বছরের বৃদ্ধা করফুলের নেছা।

বৃদ্ধা কদরের নেছা বলেন, আমি কখনও বয়স্কভাতার কার্ড পাবো ভাবিনি। যতো দিন বাঁচবো তোমাদের জন্য দোয়া করবো। তোমরা সবাই ভালো থেকো এই কামনা করি।

Advertisement

বয়স্কভাতার কার্ড দুই অসহায় বৃদ্ধার হাতে আকাশের চাঁদ হয়ে ধরা দিয়েছে। এ সময় ইউএনও’র সঙ্গে ছিলেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা উৎপল চন্দ্র দাশ, আমতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গনি, তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর, আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. ইউনুছ মিয়া ও সঞ্জীব শর্মা প্রমুখ।

গত ২৯ এপ্রিল জাগো নিউজে ‘তবুও বেঁচে আছেন কদর-করফুল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে।

সংবাদটি প্রকাশের একদিন পরেই মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ তার দপ্তরে আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গনিকে ডেকে আনেন। সেই সঙ্গে দুই বৃদ্ধা বয়স্কভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

ইউএনও’র একটি নির্দেশনাতেই বদলে যেতে থাকে বৃদ্ধা কদর-করফুলের ভাগ্য। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বাড়তে থাকে তাদের কদর। যেখানে বয়স্কভাতার কার্ড পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে ধরনা দিতে হয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে সেখানে দুই বৃদ্ধাকে কার্ড করে দেয়ার জন্য তাদের দুয়ারে হাজির হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

Advertisement

এরপর ‘কদর বাড়লো বৃদ্ধা কদর ও করফুলের’ শিরোনামে জাগো নিউজে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের মাত্র ১২ দিনের মাথায় বয়স্কভাতার কার্ড নিয়ে বৃদ্ধা কদর-করফুলের বাড়িতে যান মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ।

আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গনি বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনার ফলেই তাদের দ্রুত বয়স্কভাতার কার্ড দেয়া সম্ভব হয়েছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা উৎপল চন্দ্র দাশ বলেন, জাগো নিউজ এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার ফলেই আমরা আজ তাদের হাতে বয়স্কভাতার কার্ড তুলে দিতে পেরেছি।

এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, জাগো নিউজকে ধন্যবাদ। তাদের প্রকাশিত সংবাদ দুই বৃদ্ধার ভাগ্যের চাকা বদলে দিয়েছে। প্রশাসনকে তাদের দুয়ারে এনে দাঁড় করিয়েছে। এমন মানবিক দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি গর্বিত। জাগো নিউজই আমাকে এমন সুযোগ করে দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, আমতলী ইউনিয়েনের নতুনপাড়ার বাসিন্দা কদর নেছার বয়স শত পেরিয়ে গেছে আরও ১৭ বছর আগে। আর আবু তাহের সর্দার পাড়ার বাসিন্দা করফুল নেছার বয়স ৯১ বছর। এদের মধ্য কদর নেছা স্বামীকে হারিয়েছেন স্বাধীনতার দুই বছর পরে। আর দুই মাস আগে ১২৯ বছর বয়সে মারা গেছেন করফুল নেছার স্বামী মনু মিয়া। কিন্তু বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও তাদের কপালে জোটেনি বয়স্কভাতা।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এএম/আরআইপি