২০০২ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার তাক লাগানো খেলার কথা সবারই মনে থাকার কথা। এশিয়ায় আয়োজিত ফুটবলের প্রথম কোনো বৈশ্বিক টুর্ণামেন্টে স্বাগতিকরা ইতালি এবং স্পেনের মতো ফুটবল পরাশক্তিদের হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছিলো। সন হিউং মিনের বয়স ছিল তখন ১০ বছর। স্বদেশিদের মতো হং মিংবো, আন ঝুংওয়ান এবং সিউল খিয়নদের মতো কোরিয়ান ফুটবল তারকাদের প্রতি মুগ্ধ ছিলেন সন হিউং।
Advertisement
তবে এতোজনের মাঝে যিনি সনের শৈশবের নায়ক হতে পেরেছিলেন তিনি হচ্ছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক তারকা পার্ক জি সুং। শৈশবে মুগ্ধ হওয়া সেই নায়কের সাথে ৯ বছর পর একই সাথে খেলার সৌভাগ্যও হয়েছিলো সনের। শৈশবের সেই নায়ক পার্ক, ২০০২ বিশ্বকাপের স্মৃতিচারণ, রাশিয়া বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার লক্ষ্য আর বর্তমানে টটেনহাম হটস্পারের জীবন নিয়েই ফিফা ডটকমের সাথে কথা বলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা সন হিউং মিন।
প্রশ্ন : ইতিমধ্যে সেই কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপের ১৬ বছর পার হয়ে গেছে। যেখানে তায়েগুক ওয়ারিওর্সরা সেমিফাইনাল খেলেছিলো। সেই টুর্নামেন্টকে ঘিরে আপনার কোন স্মৃতিগুলো এখনো মনে পড়ে এবং সেগুলো এই মুহূর্তে আপনাকে কীভাবে অনুপ্রেরণা জোগায়?
সন হিউং মিন : সেই টুর্নামেন্টকে ঘিরে আমার প্রচুর স্মৃতি রয়েছে। আমি সবগুলো খেলাই টিভিতে দেখেছিলাম। আমার মনে পড়ে, যখন কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা স্পেনকে হারালাম তখন সবাই খুশিতে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলো। আমরা কেউই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে দক্ষিণ কোরিয়া ওই ম্যাচে জিতেছে। আমরা বিশ্বকাপে আরো ভালো কিছুর জন্য উদগ্রীব হয়েছিলাম। তখন আমিসহ সবাই লাল টি-শার্ট পরেছিলাম, দলকে সমর্থন জানানোর জন্য।
Advertisement
প্রশ্ন : সেই টুর্নামেন্টে আপনার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি কোনটি?
সন হিউং মিন : যখন আপনি ইতালি এবং স্পেনের মতো দলের সাথে খেলেন এবং তাদের হারান- এটা সহজ কিছু নয়। অবশ্যই আমাদের জন্য স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা ছিলো; কিন্ত আমরা তখন অবিশ্বাস্য রকমের ভালো খেলেছিলাম। আমি পুরো বিশ্বকাপ থেকে একটা মুহূর্ত পছন্দ করতে পারবো না। ২০০২ সালের প্রতিটি মুহূর্তই আমার জন্য অসাধারণ ছিলো।
প্রশ্ন : আপনার শৈশবের আদর্শ কে? যাকে দেখে আপনি ফুটবল খেলতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
সন হিউং মিন : তখন অনেক দুর্দান্ত খেলোয়াড়ই আমাদের দলে ছিলো; কিন্ত আমার জন্যে আমার আদর্শ ছিলেন পার্ক জি সুং। আমি যখন ছোট ছিলাম, কোরিয়ায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অনেক খেলাই দেখানো হতো। বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। আর পার্ক সেখানেই খেলতো। ওখানে উনি অনেক ট্রফিও জিতেছেন। উনি এখনো কোরিয়ার সেরা খেলোয়াড়। উনি এখনো আমার আদর্শ।
Advertisement
প্রশ্ন : শেষ পর্যন্ত তার সাথে সিনিয়র পর্যায়ে খেলতে পারাটা কেমন ছিলো আপনার জন্য?
সন হিউং মিন : আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি তার সাথে কাতারে হওয়া এশিয়া কাপে খেলি। তখন আমার বয়স ১৮। যার খেলা আমি টিভিতে দেখে বড় হয়েছি, তার সাথেই আমি তখন ট্রেনিং করছি। এটা অসাধারণ ব্যাপার। তার কাছ থেকে শেখার মতো অনেক কিছুই ছিলো। তিনি অনেক পেশাদার ছিলেন। তিনি কি করতেন তার সবটাই আমি অনুসরণ করতাম; যেমন তিনি কি খান, কতোক্ষণ ঘুমান- এসব। আর সবচেয়ে বড় কথা, ওই টুর্নামেন্টে আমার রুমমেট ছিলেন তিনি; কিন্ত আমি তার সাথে বেশি কথা বলতে পারিনি। কারণ সে সময় খুবই লজ্জা পাচ্ছিলাম। এটা এমন একটা স্মৃতি, যেটা আমি কখনোই ভুলবো না। এটা অবিশ্বাস্য একটা অভিজ্ঞতা। আমাদের এখনো যোগাযোগ রয়েছে। তিনি শুধু একজন ভালো খেলোয়াড়ই নন, একজন ভালো মানুষও বটে।
প্রশ্ন : আপনি তো ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে ছিলেন। প্রথম বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিলো আপনার জন্য?
সন হিউং মিন : আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে খুবই গর্বিত অনুভব করেছিলাম। সবাই চার বছর ধরে বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় থাকে; কিন্ত সবাই সে সুযোগটা পায় না, যেহেতু এখানে কোয়ালিফাই করাটা খুব কঠিন। আমার বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং আমি জানি, এখানে আসা কতোটা কঠিন। ২০১৪ সালে আমাদের অনেক তরুণ খেলোয়াড় ছিলো, যাদের কখনো বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা হয়নি। আমরা সবাই বিশ্বকাপের জন্য বাছাই পর্ব খেলেছি; কিন্তু বিশ্বকাপ সম্পূর্ণ আলাদা একটা মঞ্চ। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রশ্ন : এবার আপনাদের গ্রুপে সুইডেন, মেক্সিকো এবং জার্মানি রয়েছে। গ্রুপটাকে কীভাবে দেখছেন?
সন হিউং মিন : এটা একটা কঠিন গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপই কঠিন। সুইডেন আমাদের চেয়ে ভালো দল, মেক্সিকো আমাদের চেয়ে ভালো দল এবং জার্মানি তো অবশ্যই; কিন্ত যখন আমরা খেলি, তখন জিততে চাই। কেউই হারতে চায় না। ফুটবলে ১১ জনের বিপক্ষে ১১ জনেরই খেলতে হয়। অবশ্যই কোয়ালিটি পার্থক্য গড়ে দেয়; কিন্তু আমাদেরও সবার চেয়ে বেশি প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রশ্ন : এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার লক্ষ্য কি গ্রুপ পর্ব থেকে নক আউট পর্যন্ত যাওয়া?
সন হিউং মিন : অবশ্যই আমি ‘হ্যাঁ’ বলতে চাই; কিন্তু ফুটবল শুধু ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’-এর ব্যাপার না। যদি আমরা ভালো খেলি এবং সবাই একটা দল হয়ে খেলি তাহলে কেন নয়? আমি আশা করি, আমরা পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারবো। এটা একটা কঠিন গ্রুপ; কিন্তু আমি আমার দেশকে বিশ্বাস করি। আমি আমার দেশের জন্য গর্বিত, আমার সতীর্থ্যদের জন্য গর্বিত। আমি মনে করি, আমরা নকআউটে যেতে পারবো। তবে এজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের।
প্রশ্ন : ইংল্যান্ডে টটেনহাম হটস্পারের হয়ে খেলে আপনি জীবনটাকে কেমন উপভোগ করছেন?
সন হিউং মিন : আমার সবসময়ই স্বপ্ন ছিলো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা। আমি এখনো মাঝেমাঝে বিশ্বাস করে উঠতে পারি না বিষয়টা। তবে লন্ডনে জীবনটা ভালোই উপভোগ করছি। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শহর। আমি ট্রেনিং গ্রাউন্ডে যাওয়া এবং সেখানে অবিশ্বাস্য খেলোয়াড়দের সাথে অনুশীলন করাটা উপভোগ করি।
একই সঙ্গে ওয়েম্বলিতে খেলা এবং বাইরে অ্যাওয়ে ম্যাচগুলো খেলতে যাওয়াটাও উপভোগ করি। এখানে বলতে গেলে প্রতিটা মূহুর্তই উপভোগ করি। মাঝেমাঝে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমি ভাবি, এসব কিছুই স্বপ্ন। প্রিমিয়ার লিগ এমন একটা লিগ যেখানে আমি খেলার কথা শৈশব থেকে চিন্তা করে এসেছি। এটা অবিশ্বাস্য!
প্রশ্ন : প্রিমিয়ার লিগে খেলাটা একজন খেলোয়াড় হিসেবে উন্নতি করতে কতোটুকু সাহায্য করেছে?
সন হিউং মিন : আমি অনেক কিছুতেই উন্নতি করেছি। শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই। আমার খেলাও আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। টটেনহাম ম্যানেজমেন্টের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে এক ধাপ ওপরের খেলোয়াড় বানিয়েছে, বুন্দেসলিগায় খেলার সময় থেকে। এখানে ট্রেনিং সেশনগুলো অনেক কঠিন; কিন্তু তারা আমাকে খেলোয়াড় হিসেবে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে ,যখন আমি টটেনহামের হয়ে খেলি কিংবা দেশের হয়ে।
আরআর/আইএইচএস/আরআইপি