আইন-আদালত

লঘুদণ্ড ও বয়স জামিনের কারণ হতে পারে না : দুদক

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন-সংক্রান্ত আপিলের শুনানিতে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালত পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। এই লঘুদণ্ড জামিনের কোনো কারণ হতে পারে না। তেমনি বয়স্ক নারী বলেও জামিন দেয়ার কোনো কারণ হতে পারে না।

Advertisement

দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে শুনানি আজকের মতো শেষ হয়েছে। আগামীকাল বুধবার আবারও হবে।

সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়। শুরুতেই দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এরপর দুপুর একটার দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী জামিন বহাল রাখার ব্যাপারে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। দুপুর সোয়া একটার দিকে শুনানি মুলতবি করেন আদালত।

শুনানির শুরুতে পেপারবুক থেকে মামলা-সংক্রান্ত বিষয় আদালতের কাছে পড়ে শোনান দুদকের আইনজীবী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালত পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। এই লঘুদণ্ড জামিনের কোনো কারণ হতে পারে না। দুদক বিচারিক আদালতের এই লঘুদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করেছে।

Advertisement

এর বাইরে খুরশিদ আলম আদালতে বিচারিক আদালতের কয়েকটি আদেশ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আদালতের অনুমতি না নিয়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন। চিকিৎসার কোনো সনদপত্র তিনি আদালতে জমা দেননি। এমনকি হাইকোর্টেও খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কোনো সনদপত্র জমা দেয়া হয়নি।

এ সময় আদালত খুরশিদ আলমের কাছে প্রশ্ন রাখেন, বয়স ও অসুস্থতা জামিনের কোনো কারণ হতে পারে কি-না?

খুরশিদ আলম আদালতকে বলেন, দণ্ড হওয়ার পর বয়স জামিনের কারণ হতে পারে না। বয়স বিবেচনায় নিয়েই বিচারিক আদালত খালেদা জিয়ার সাজা কমিয়েছেন। একই কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিন চাইছেন।

এরপর খুরশিদ আলম খান লঘুদণ্ড ও জামিন নিয়ে উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। হাইকোর্ট যে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে খুরশিদ আলম আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়া কত দিন কারাগারে ছিলেন, সে বিষয়টি সেখানে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সর্বোপরি খালেদা জিয়ার জামিনের ঘোর বিরোধিতা করেন খুরশিদ আলম খান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থততার কথা বলে সে পেপারবুক আসামিপক্ষ আদালতে দিয়েছে, সেখানে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের বক্তব্য দেয়া হয়েছে।

Advertisement

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘হাইকোর্টে বিএনপির চেয়ারপারসনের মামলার শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরি হয়ে গেছে। সেখানে দ্রুত শুনানি হোক। আপিলে তিনি খালাস পেলে পাক। খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেখানে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে—এমন তথ্য নেই।

মাহবুববে আলমের বক্তব্যের একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এখানে জামিনের শুনানি হচ্ছে। আপিলের শুনানি হচ্ছে না। এ সময় আদালতে কয়েকজন আইনজীবী হইচই শুরু করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শুনানি হোক না।’

রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের পর খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি শুরু করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। এ সময় আদালত বলেন, কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না।

আদালতে শুনানির সময়ে আজ উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল মঈন খান প্রমুখ।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। এরপর থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। রায়ের পর আপিল করে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া, যার ওপর শুনানি নিয়ে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট তাকে চার মাসের জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আবেদন করে।

এফএইচ/জেএইচ/পিআর