দেশজুড়ে

পতিসরে আধুনিক রবীন্দ্র জাদুঘরের দাবি

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর আত্রাইয়ের পতিসর কাছাড়ি বাড়ি। এখানে গড়ে উঠেছে রবীন্দ্র জাদুঘর। কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত ব্যবহৃত হাতে গোনা কিছু জিনিসপত্র স্থান পেয়েছে জাদুঘরটিতে। প্রতিনিয়ত এ জাদুঘর দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসছেন। তবে নামে জাদুঘর হলেও প্রকৃতপক্ষে জাদুঘরটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তেমন কিছু নেই বললেই চলে।

Advertisement

অন্যদিকে পতিসরে রবীন্দ্র জাদুঘরের বাইরে তেমন কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে পর্যটকদের ফিরে যেতে হয়। জাদুঘরের পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্র, ভালো রেস্টুরেন্ট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা ও পর্যটকরা। নওগাঁ, নাটোর, পাবনা ও রাজশাহী জেলার কেন্দ্রবিন্দু বলে পরিচিত কবিগুরুর পতিসর কাছাড়ি বাড়ি। এটি আধুনিকায়ন করা হলে পর্যটকদের আগ্রহ বাড়বে। পাশাপাশি বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।

উপজেলার নিঝুম-নিস্তব্ধ-নিভৃত গ্রাম পতিসর। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া কালিগ্রাম পরগনার জমিদারি দেখাশোনার জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সাল থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত নিয়মিত পতিসরে আসতেন। তার মৃত্যু পর পতিসর কাছারী বাড়িতে রবীন্দ্র জাদুঘর স্থাপন করা হয়। জাদুঘরে স্থান পায় কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত বাথটাব, আরাম কেদারা, নোঙর, সিন্ধুক, ঘড়ি, গ্লোব, খাজনা আদায়ের টেবিল, খাট, আলমারি ও কবিগুরুর বিভিন্ন ছবি।

এদিকে কাছারীবাড়ির সামনের পড়ে আছে বিশাল ফাঁকা মাঠ। সীমানা প্রাচীর না থাকায় সেখানে এলাকার সাধারণ মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকেন। এর পাশেই রয়েছে দীঘি। এ স্থানগুলো অযত্নেই পড়ে আছে।

Advertisement

স্থানীয় আবু বক্কর সিদ্দিক ও শফিউল ইসলাম পাপ্পু বলেন, জাদুঘর দেখতে দেশ-বিদেশসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজনরা আসেন। জাদুঘর দেখতে সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিটের মতো। এরপর আর দেখার মতো কিছু থাকে না। বিনোদনের ব্যবস্থা এবং খাবারের জন্য কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। ফলে পর্যটকদের জন্য সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। জাদুঘরের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য দীঘির পাড়ে বসার ব্যবস্থা ও সুইমিং পুল এবং রেস্টুরেণ্টের ব্যবস্থা করলে পর্যটক বৃদ্ধির পাশাপাশি বেকারের কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে।

স্থানীয় খলিুলর রহমান বলেন, রবীন্দ্রনাথ কে জানতে পতিসরে রয়েছে ‘আহমেদ রফিক পাবলিক লাইব্রেরি’। দেখভালোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জ্ঞানের আলো ছাড়ানো মশাল আজ নিজেই অন্ধকারে পড়ে রয়েছে। আধুনিক লাইব্রেরি তৈরি করা হলে পাঠকদের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, কবিগুরু পতিসরকে আধুনিকায়ন করতে গড়ে তোলা হয়েছে ডাক বাংলো, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, রবীন্দ্র জার্নাল, রবীন্দ্র সরোবর, রবীন্দ্র বাগিচা, রবীন্দ্র সেতু, রবীন্দ্র সড়ক, পিকনিক স্পট, সান বাঁধানো হয়েছে নাগর ঘাট, নাগর নদীর উপর ব্রিজ। ব্যক্তি উদ্যোগে কার্যক্রম চলছে ১০ম তলা আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট। জাদুঘরকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে, জমিদার বাড়িকে পরিষ্কার করা হয়েছে। পতিসরকে আস্তে আস্তে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করা হচ্ছে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি পতিসরকে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। যেখানে পর্যটকরা পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করে কিছুটা আনন্দ উপভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।

Advertisement

আব্বাস আলী/আরএ/পিআর