এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে তাৎপর্যপূর্ণ যে নির্দেশনা হাইকোর্ট দিয়েছিলেন তা জানেনই না দেশের অধিকাংশ মানুষ। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই আদালতের ওই নির্দেশনা জানেন না। ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এর কথা জানলেও তা নামেমাত্র জানেন।
Advertisement
আর বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা, পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মজীবী জানেন না হাইকোর্টের নির্দেশনাটি। ১৪ শতাংশ নির্দেশনাটি জানলেও পরিষ্কার ধারণা নেই তাদের। এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন না, ভাবেনও না।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য। ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ : আইনের প্রয়োগ ও কার্যকারিতা’ নিয়ে এই গবেষণা চালানো হয়।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান ১ এর স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন।
Advertisement
প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, মূলত নির্দেশনার বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্র কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা ও না মানার ঝোঁকের কারণে এই অবস্থা। হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রণয়নের দীর্ঘ নয় বছর পরও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কর্ম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি হলে তার প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা। যৌন হয়রানি বন্ধ বা প্রতিকারে করণীয় কী, তা নিয়ে সচেতনতাও কম।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করছেন তারা হাইকোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে খুবই কম জানেন। সচেতনতার মাত্রা নগণ্য। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন না, ভাবেনও না।
গবেষণায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ-সংক্রান্ত কোনো কমিটির কথা জানেন না। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা, পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যমের ২০ জন ব্যক্তির ওপরও গবেষণাটি করা হয়।
অন্যদিকে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সক্রিয় কমিটি রয়েছে। যদিও তা ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনায় অপ্রতুল ও অভিযোগের পরিমাণও নগণ্য।
Advertisement
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ইউবিকোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. এসএম আকবর। এ সময় বিশেষজ্ঞ পর্যালোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডিরেক্টর উজমা চৌধুরী, ‘নিজেরা করি’ সংগঠনের সমন্বয়ক খুশি কবির, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাল্টিসেক্টরাল প্রজেক্টের ডিরেক্টর আবুল হোসেন, ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক নবনীতা চৌধুরী, নারী মুক্তি ও উন্নয়ন সংঘের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মমতাজ আরা বেগম।
২০০৯ সালে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির মতো কোনো ঘটনা ঘটলে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিচার নিশ্চিত করার কথাও বলেন হাইকোর্ট।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধে যতদিন না একটি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ আইন গ্রহণ করা হয় ততদিন পর্যন্ত সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ নির্দেশনাই আইন হিসেবে কাজ করবে। কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এই নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।’ জেইউ/জেডএ/পিআর