টিফিনের সময় অন্য সহপাঠীরা যখন টাকা দিয়ে কিছু কিনে খেত তখন ক্লাসে বসে বই পড়ত তারিনা। দরিদ্রের কষাঘাতে বেড়ে ওঠা তারিনা বুঝতে পারতো টিফিনের খাবার তার জন্য না। নুন আনতে পান্তা ফুরায়- এমন ঘরে জম্ম যার, মাঝে মধ্যে না খেয়েও মাদরাসায় যেতে হয়েছে তারিনাকে। মেয়ে বড় হয়ে মাথার ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন ভেবে গত বছর তার বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন মা-বাবা। কিন্তু প্রতিবাদী তারিনা সেই উদ্যোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
Advertisement
এভাবেই দরিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করে তারিনা আক্তার এবারে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ওয়ারেছিয়া ইসলামীয়া আলিম মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে গত জেডিসিতে ৪ দশমিক ৮০ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তারিনা বদরগঞ্জ পৌর শহরের শাহাপুর গ্রামের শ্রমিক অহিদুল ইসলাম ও গৃহিণী জিয়াছমিন খাতুনের মেয়ে। তার ছোট ভাই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তিন শতক জমির ওপর বসতবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। সেখানে একটি আধাপাকা ঘরে বসবাস করেন সবাই। তারিনার বাবা অহিদুল ইসলাম একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে যে মজুরি পান তা দিয়ে ঠিকমতো তাদের সংসার চলে না।
প্রতিবেশী রুবিনা বেগম বলেন, গত রোববার মাদরাসার এক স্যার মোবাইল ফোনে রেজাল্টের খবর দেন। এ সময় আনন্দে কেঁদে ফেলেন তারিনা। তার মা ভেবেছিলেন হয়তো মেয়ে ফেল করেছে। এ জন্য তিনি মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। এ সময় তার এক সহপাঠি বাড়িতে এসে জানায়, তারিনা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পাস করেছে। এরপর প্রতিবেশীরা মিষ্টি খাওয়ার আবদার করলে বিপাকে পড়েন জিয়াছমিন। কারণ বাড়িতে কোনো টাকা নেই। প্রতিবেশীদের আবদার পূরণ করতে একজনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা ধার নিয়ে মিষ্টি মুখ করান জিয়াছমিন ।
ভবিষ্যতের বিষয়ে জানতে চাইলে তারিনা আক্তার বলে, খেয়ে না খেয়ে মাদরাসায় ক্লাস করেছি। টিফিনের সময় হলে অন্যরা যখন হইহুল্লোড় করতো, কিছু কিনে খেত তখন আমি ক্লাসে বসে বই পড়তাম। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে। কিন্তু গরিব ঘরে জন্ম নিয়ে এ স্বপ্ন পূরণ হবে কি-না তা নিয়ে এখন সংশয় দেখা দিয়েছে।
Advertisement
মা জিয়াছমিন খাতুন বলেন, বেটি (মেয়ে) ভালো এজাল (রেজাল্ট) করি মোর হইল জঞ্জাল। গ্রামের মানুষ সবাই কওচে (বলছে) তোমার বেটি ভালো এজাল করেছে। সে যতদূর পড়তে চায়, তাকে পড়ান। মানুষের কথায় বুকটা ভরি গেলো। কিন্তু মুই কী দিয়া পড়াইম। শুনোচো তার ভালো কলেজোত ভর্তি হইতে এবং বই খাতা কিনতে ম্যালায় টাকা নাগবে। কিন্তু এই টাকা পাইম (পাবো) কোটে (কোথায়) ।
ওয়ারেছিয়া ইসলামী আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম বলেন, মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী। তার বাবা-মা গরিব হওয়ায় তাকে লেখাপড়ায় আমরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি।
জিতু কবীর/আরএ/পিআর/জেআইএম
Advertisement