দেশজুড়ে

আমের রাজধানীতে ভারতীয় আম

আগামী ২০ মে থেকে রাজশাহী অঞ্চলের বাজারে মিলবে আম। তবে এরই মধ্যে ভারতীয় বাহারি আম চলে এসেছে আমের রাজধানী রাজশাহীতে। ফল দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভিনদেশি ‘গোলাপ খাশ’, ‘দিলশাদ’, ‘বৈশাখী’ ও ‘বউ কথা কও’ জাতের আম নিয়ে।

Advertisement

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে ভারতীয় গোলাপ খাশ ও দিলশাদ আম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। আর বৈশাখীর দাম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। বউ কথা কও বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। মৌসুমের আগে আম পেয়ে ঝুঁকছেন ক্রেতারাও। ফলে বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব আম।

নগরীর সাহেব বাজারের ফল বিক্রেতা আসমত আলী বলেন, গত সপ্তাহে তিনি ২০ কেজি গোলাপ খাশ আম নিয়ে এসেছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই পুরোটাই বিক্রি হয়ে গেছে। রাজশাহীর আম বাজারে আসার আগে আম পেয়ে কিনছেন ক্রেতারা। তবে কেনার আগে বাছবিচারও করছেন।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্থানীয় অন্য ফলবিক্রেতারাও। নাম প্রকাশ না করে ওই এলাকার আরেক ফল বিক্রেতা জানান, স্বাদে ভারতীয় এসব আম রাজশাহীর আমের ধারে-কাছেও নেই। ফলে একবার কিনেই ক্রেতারা বিমুখ হচ্ছেন।

Advertisement

অভিযোগ রয়েছে, এসব আমে মেশানো রয়েছে ক্ষতিকর কেমিকেল। এগুলো কিনে বাসায় রাখতেই গায়ে ভেসে উঠছে কালো দাগ। ফলে আসল আমের স্বাদ পেতে দেশি আম পাকার অপেক্ষা তাদের।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতের অনেক রাজ্যে বৈশাখ মাসের শুরুতেই এসব আম পাকে। তাই মৌসুম শুরুর আগেই আম রফতানি করে দেশটি। আর এ জন্য আম দীর্ঘদিন সংরক্ষণে প্রয়োজন হয় কেমিকেল মেশানোর। মাত্রাতিরিক্ত কেমিকেল মেশানো এসব আমে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরাও।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক আজিজুল হক জানান, মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিন থাকায় মানবদেহের জন্য এসব আম অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফরমালিনের প্রভাবে মানবদেহের কিডনি ও লিভার নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

এদিকে রাজশাহীর বাজারে ভারতীয় আমের সহজলভ্যতা ভালো চোখে দেখছেন না স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এখনও দেশি আম পাকতে শুরু করেনি। তবে মৌসুম শুরুর পর এসব আম বাজারে থাকলে স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর তাই মৌসুম শুরুর আগেই এসব আম আমদানি বন্ধের দাবি জানান তারা।

Advertisement

‘আম ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, আগামী ২০ মে থেকে বাজারে আসবে সব ধরনের গুটি আম। এরপর ২৫ মে গোপালভোগ, হিমসাগর ও ক্ষিরসাপাতি ২৮ মে বাজারে আসবে। আগামী ১ জুন লক্ষণভোগ, ৫ জুন ল্যাংড়া ও বোম্বায়, ১৫ জুন আমরূপালি, ফজলী ও সুরমা ফজলী বাজারে আসবে। মৌসুম শেষের আশ্বিনা আসবে ১ জুলাই থেকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে আম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত ৭ বছরে এ অঞ্চলে আমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। গত বছর এ অঞ্চলের ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। সেখানে উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৮১ হাজার ১০৭ টন।

উৎপাদন ছাড়িয়ে গেলেও গত অর্থবছরে সেইভাবে গতি পায়নি আম রফতানি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে ৩ লাখ ২৪ হাজার কেজি আম সরবরাহ করে বাংলাদেশ। কিন্তু রাজশাহীর রফতানিযোগ্য ১৫ হাজার টনের মধ্যে রফতানি হয়েছে মাত্র ২৩ টন আম।

এফএ/জেআইএম