খেলাধুলা

সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি আমার : জুবায়ের

বর্তমান সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের আনাচে কানাচে সব জায়গায় চলছে লেগ স্পিনারদের জয়জয়কার। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে শুরু করে অভিজাত টেস্ট ক্রিকেট, সব জায়গাতেই কব্জির মোচড়ে ম্যাচের দখল নিজেদের হাতে নিয়ে নেন লেগ স্পিনাররা। অথচ এতোদিন পরে এসেও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে হাহাকার দেখা যায় একজন লেগ স্পিনারের জন্য।

Advertisement

এশিয়া মহাদেশে দক্ষিণের এই ভূ-খণ্ডে লেগ স্পিনারের যে বাম্পার ফলন তা হয়তো বলা যাবে না। তবে ৮০’র দশকে ওয়াহিদুল গণির হাত ধরে শুরু হওয়া লেগ স্পিন চর্চায় এখনো পর্যন্ত বেশ কয়েকজন লেগ স্পিনারের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। যার সর্বশেষ সংযোজন জুবায়ের হোসেন লিখন।

অমিত প্রতিভা আর অপার সম্ভাবনা দেখে ২০১৫ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তাকে জাতীয় দলে ডেকে নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। অভিষেকের পর থেকে খুব একটা খারাপ না করলেও, কোচের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হন লিখন। ফলে তাকে হুট করে ডেকে এনে হুট করে ছুঁড়ে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করেননি হাথুরু।

জাতীয় দলে জায়গা হারানোর পর ঘরোয়া ক্রিকেটেও অনিয়মিত হয়ে যান ২২ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার। নিজ খরচায় সাদা হাতি পোষার মতো সাহস দেখাতে পারেনি ডিপিএল বা বিপিএলের কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি। ফলে ধীরে ধীরে পাদপ্রদীপের আলো থেকে দূরে সরতে থাকেন লিখন, হারিয়ে যেতে থাকেন দেশের ক্রিকেটের ব্যর্থদের ভীড়ে।

Advertisement

তবে শেষের আগেই শেষ করার পক্ষপাতি নন লিখন। এ কারণে পুনরায় প্রায় ব্যক্তিগত উদ্যমেই অনুশীলন শুরু করেছেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। তাকে যথাযথ সহযোগিতাও করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। হুমায়ুন কবির শাহীনকে সাথে নিয়ে প্রতিদিনই ঘাম ঝরাচ্ছেন তিনি মিরপুরের একাডেমি মাঠ কিংবা মূল স্টেডিয়ামে। নতুন করে পূর্ণ উদ্যমে অনুশীলন শুরু করার কারণ হিসেবে লিখন উল্লেখ করেন, এখনও তার সময় শেষ হয়ে যায়নি। ক্যারিয়ারে আরো দীর্ঘ সময় বাকি রয়েছে তার সামনে। রোববার সংবাদ মাধ্যমের সামনে একথা জানালেন তিনি নিজেই।

সারা বিশ্বে লেগ স্পিনারদের জয়জয়কার দেখে নিজের মাঝে কোনো আক্ষেপ কাজ করে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে লিখন শোনান আশার বাণী। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব জায়গায়, সব দলেই আসলে লেগ স্পিনার আছে এবং তারা ভালোও করছে। আমারও আক্ষেপ লাগে যে আমিও তো কিছু দিতে পারতাম। তবে এখনই আমার সময় শেষ হয়ে যায়নি। যদি আমি চেষ্টা করি, অবশ্যই পারব ইনশাআল্লাহ। যদি সুযোগ আসে চেষ্টা করব দলের জন্য, দেশের জন্য ভালো কিছু করার।’

আগামী মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে এই সিরিজের প্রস্তুতি ক্যাম্প। প্রস্তুতি ক্যাম্পে হয়তো জায়গা হবে না জুবায়ের লিখনের। তবে লিখন নিজেকে প্রস্তুত করছেন সামনের অন্য সিরিজগুলোর জন্য। এখনো পর্যন্ত নিজের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট লিখন বলেন, ‘প্রতিদিন ২০ ওভারের মতো বোলিং করি শাহীন (হুমায়ুন কবির) ভাইকে নিয়া। তিনি যেভাবে বলছেন সেভাবে অনুশীলন করে যাচ্ছি। বোলিংয়ের গতি, একিউরেসি এখন অনেক ভালো হচ্ছে। যেহেতু ঘরোয়া লিগে খেলিনি আমি। তাই আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা নেমে গেছে। আগে যেটা হত, ম্যাচ কম খেলা হত। এখন ছোট-বড় যেখানেই সুযোগ পাই ম্যাচ খেলছি। যদি আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পাই।’

২০১৫ সালে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, লিখনের মাঝে ৪০০ টেস্ট উইকেট নেয়ার সামর্থ্য দেখেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় লিখনের ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন আরো অনেকেই। লিখন নিজেও মনে করেন তার মাঝে ভালো কিছু করার সহজাত গুণটা রয়েছে। তবে সেই সাফল্য পেতে যে কঠোর পরিশ্রম দরকার তা-ই তিনি এখন করে যাচ্ছেন।

Advertisement

লিখনের ভাষায়, ‘সবাই বলে আমার মধ্যে ভালো কিছু করার গুণটা আছে। আসলে আমিও মনেও করি আমার ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে। আমি যদি কঠোর পরিশ্রম করি, আত্মনিবেদন দিয়ে চেষ্টা করি তাহলে ভালো কিছু দিতে পারব। এখন অনুশীলন অনেক ভাল হচ্ছে। আগে এতটা ফিট ছিলাম না। এখন বডিও ফিট হয়েছে অনেকটা, ওজনও আগের চেয়ে কমেছে।’

নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশনে লিখন সাথে পেয়েছেন ক্রিকেট বোর্ডকেও। একজন লেগস্পিনারের কদর বুঝতে পেরে লিখনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বিসিবি। লিখন জানান, ‘বোর্ড সাধারণত সব খেলোয়াড়দের ফ্যাসিলিটি দেয় না। তবে আমাকে আল্লাহর রহমতে সব সুবিধা দিচ্ছে। আমি গত বছর ঘরোয়া লিগেও খেলিনি। তবুও আমাকে এইচপি দলে রাখা হয়। বোর্ডের তরফ থেকে অনুশীলনেও সুবিধা পাচ্ছি। শুক্রবারের দিনও আমাকে উইকেট দেওয়া হয়। সব কিছু মিলিয়ে ভালো হচ্ছে। সর্বোপরি বোর্ডের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ যে, তারা আমাকে অনেক হেল্প করছে। আমার প্রতি তাদের যে প্রত্যাশা আমিও চেষ্টা করব সেটার মান রাখতে।’

এসএএস/আইএইচএস/আরআইপি