চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচিত কমিটির চলতি নেতৃত্বের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল ৫ মে। গেল বছরের ওই দিনটিতেই নির্বাচনের মাধ্যমে শিল্পী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জায়েদ খান।
Advertisement
দুই বছর মেয়াদের এই কমিটি এক বছর অতিক্রম করেছে। ২৪ মে শপথ গ্রহণ করে এই কমিটি। অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি মিশা-জায়েদ প্যানেল জয়ী হয়েছিল। এক বছরে সেসব ইস্তেহার কী পূর্ণ করতে পেরেছে এই কমিটি? শিল্পী সমিতির সাফল্য-ব্যর্থতার নানা দিক নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জায়েদ খান।
জায়েদ খান বলেন, ‘প্রথমেই আমাদের নেতৃত্বের এক বছর পূর্তি হওয়ায় শিল্পী সমিতির সদস্যসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। আমরা ২১টি ইস্তেহার দিয়েছিলাম। এক বছরের মধ্যে ২০টি ইস্তেহারই পূর্ণ করেছি। আমরা একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করতে অসচ্ছল শিল্পীদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম। এটা বাকি আছে। এর কাজও শুরু হবে শিগগিরই।’
কী কী প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জায়েদ খান বলেন, ‘আমরা যেসব ইস্তেহার পূর্ণ করেছি সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- যৌথ প্রযোজনার নামে চলচ্চিত্রে প্রতারণা বন্ধ করেছি। এখন একটি সঠিক নীতিমালায় ছবি হচ্ছে। বিদেশি চলচ্চিত্র ও শিল্পী দিয়ে দেশীয় বাজার দখলের অপচেষ্টা রুখে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে অনেকটা সফলও হয়েছি আমরা। বিদেশি শিল্পীদের ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করা বন্ধ করেছি। সিনেমা নিয়ে নানা চক্রান্তে ব্যস্ত থাকাদের মুখোশ সবার সামনে তুলে ধরছি এবং তাদের হাত থেকে ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর চেষ্টাও করে যাচ্ছি। সব সিনিয়র জুনিয়র শিল্পীদের নিয়ে আমরা শিল্পী সমিতি চালাতে চেয়েছি। তার প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন। সিনিয়র শিল্পী যারা আছেন- হাসান ইমাম, চিত্রনায়ক ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চন, উজ্জল, মাসুম বাবুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজন্মের তারকা শিল্পীরাই এখন চলচ্চিত্রের খোঁজ-খবর নিয়মিত রাখেন। তারা এফডিসিতে আবারও আগের মতো আনাগোনা করেন। তাদের অনেককে নিয়ে আমরা শক্তিশালী একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করেছি।’
Advertisement
জায়েদ খান আরও বলেন, ‘শিল্পী সমিতিকে ঢেলে সাজিয়েছি। যে সমিতিতে আসতে লোকে ভয় পেত, সেই সমিতিতে ফুল ফুটিয়েছি। সবার আসার ও বসার ব্যবস্থা করেছি। এখন অনেক তারকাই শুধু মন ভালো রাখতে শিল্পী সমিতিতে আসেন। গেল বছরে বিরাট আকারে জমকালো ইফতারের আয়োজন করেছি। ঈদ বোনাস দিয়েছি ৭১ জনকে। যার মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত অনুদানও ছিল। মহা আয়োজন করে পিকনিক করেছি। পূজারও টাকা দিয়েছি। শিল্পী সমিতির ফাণ্ড তৈরি করেছি। শিল্পী সমিতির সদস্যপদের আবেদনের চাঁদা কমিয়ে একেবারেই সহনশীল পর্যায়ে এনেছি। আগে এটি ছিল ২৫,০০০, এখন সেটি ১০,০০০ টাকা। স্বাস্থ্য সেবার জন্য একটি হাসাপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এখানে আমাদের শিল্পীদের ৫০% ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।’
সঠিকভাবে সদস্যপদ হালনাগাদ করতে শিল্পীদের যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রসঙ্গে জায়েদ খান বলেন, ‘শিল্পীদের একটি যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া চালু করেছি। আমাদের সংবিধানে আছে শিল্পী সমিতির সদস্য হতে হলে কম পক্ষে ৫টি ছবিতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। আমাদের সংবিধানে আছে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কেউ সদস্য পদ লাভ করলে তাদের কমিটি পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবে। সহযোগী সদস্যেরও একটি অপশন আছে। আমরা আমাদের উপদেষ্টাদের মতামত নিয়ে ২০৮২ জন শিল্পীকে কল করেছিলাম। এর মধ্যে অনেকে উপস্থিত হননি। যারা এসেছিলেন তাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। এর মধ্যে কিছু পদ আমারা স্থগিত করেছি। কিছু পদ বাতিল করেছি। যারা উপস্থিত হননি তাদের ব্যাপারের একটা সিদ্ধান্তে আসা হবে শিগগিরই। আমরা যাচাই বাছাই করতে গিয়ে দেখলাম শিল্পী সিমিতিতে এমন কিছু শিল্পী আছে যারা শিল্পী সমিতির জন্য অসম্মানজনক। মাছের ব্যবসা করে, ধোলাই খালে পার্টসের ব্যবসা করে, দর্জি এমন অনেকে সমিতির সদস্য হয়ে আছে! এদের কেউ কেউ দুই একটা ছবিতে এক্সট্রা শিল্পীর অভিনয় করেছে, কিন্তু অনেকে কখনোই অভিনয় করেনি। তবুও রহস্যজনকভাবে তারা সদস্য পদ পেয়েছে। ২০-২৫ জন পেয়েছি যারা ছবিতে অভিনয় করেছে কিন্তু কোনো ছবিই মুক্তি পায়নি। আমরা আসলেই যারা শিল্পী তাদের নিয়ে সমিতি সাজাতে চাই। ভোটার বাড়ানোর জন্য নয়। আমরা ঈদের পরেই এজিএম করবো। সামনে রোজা আমরা একটা ইফতারের আয়োজন করবো শিল্পীদের নিয়ে। আমরা আরও একটা কাজ করেছি। শিল্পীদের ডিজিটাল কার্ডের ব্যবস্থা করেছি। এর মধ্যে অনেকেই কার্ড নিয়েছেন।’
চলচ্চিত্রে সিনেমার মান নিয়ে অনেক আগে থেকেই সমালোচনা হয়েছে। সংখ্যাও কমছে দিন দিন। এই বিষয়ে সমিতির কী ভূমিকা ছিল? জবাবে জায়েদ খান বলেন, ‘এটা সামগ্রিক চলচ্চিত্র শিল্পের ব্যাপার। আমরা শিল্পী। প্রযোজক বা পরিচালকরা আমাদের নিয়ে কাজ করতে চাইলে সেখানে কাজ করি। তবে শিল্পীরা এখন আগের চেয়ে অনেক সচেতন ভালো কাজের ক্ষেত্রে। ভালো ছবি নির্মাণে শিল্পী সমিতি একক কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। সমষ্টিগত ভূমিকার সহায়ক হতে পারি আমরা। নিজেদের জায়গা থেকে শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, দক্ষতা বাড়ানো নিয়ে আমরা কাজ করবো। অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শেখার চর্চা বাড়ানোর পরিবেশ আমরা তৈরি করেছি। সামনের দিনগুলোতে আরও সুন্দর হবে সেই পরিবেশ। আর চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সমিতিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র পরিবারে আবদ্ধ হয়ে সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা সিনেমার সমস্যা দূর করতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সাহেবের সঙ্গেও দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের উন্নয়নে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খুব শিগগিরই আমাদের সিনেমা নির্মাণেও পরিবর্তন আসবে। এরই মধ্যে এসেছেও। আর ভালো গল্প, ভালো নির্মাণে দর্শক মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র পাবেন।’
চলচ্চিত্র পরিবারের সঙ্গে মিলে সামনের এক বছরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতেকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জায়েদ খান।
Advertisement
নতুন সমিতির বর্তমান কমিটি :সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, সহসভাপতি রিয়াজ ও নাদের খান। সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ইমন, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ কমল, কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইমন সাদিক, অঞ্জনা, আলীরাজ, জেসমিন, নাসরিন, পপি, পূর্ণিমা, ফেরদৌস, নিপুণ (বিজয়ী প্রার্থী মৌসুমীর পরিবর্তে), রোজিনা, নিরব (বিজয়ী প্রার্থী নানা শাহ’র পরিবর্তে)।
সমিতিতে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল রানা, আলমগীর, কবরী সারোয়ারসহ আরও অনেকেই।
এমএবি/এলএ/এমএস