ঢাকাই চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় এক নায়কের নাম ওমর সানি। দীর্ঘদিন তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে উপহার দিয়েছেন অনেক সুপারহিট চলচ্চিত্র। অভিনয়ে আসার গল্পটা তার চমৎকার। বাবা ও মা খুব সিনেমা দেখতেন। ঢাকার ছবি, বলিউডের ছবি। বাব-মা চাইতেন ছেলেও সিনেমার নায়ক হয়ে পর্দা মাতাবে। দর্শকের মন জয় করে নিবে। ওমর সানির ভাষায়, ‘আমার বাবা প্রচুর হিন্দি ছবি দেখতেন। দিলীপ জ্বী, সায়রা বানু, দেবানন্দ, নাসিম বানু তাদের ছবি দেখতেন। তখন তিনি ভাবতেন, আমার ছেলে দিলীপ কুমারের মতো নায়ক হবে। আমার মা, তিনিও চাইতেন আমার ছেলেটা নায়ক হোক! শুধু বাবা মা নন, আমার ভাই-বোন সবাই চাইতো যেনো আমি নায়ক হই।’
Advertisement
আজ এই নায়কের জন্মদিন। ১৯৬৯ সালের ৬ মে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম ওমর সানির। জীবনের চমৎকার এই দিনটিতে ভক্ত, কাছের মানুষ ও পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন ওমর সানি।
শুরুটা হয়েছিলো নব্বই দশকের শুরুর দিকে। ৯২ সালে নুর হোসেন বলাইয়ের ‘এই নিয়ে সংসার’ ছবিতে সবার নজর কাঁড়লেন সুঠাম দেহ ও লম্বা চুলের এক নবাগত নায়ক। তিনিই ছিলেন ওমর সানি। তারপর দিনে দিনে কেবল নিজেকে প্রমাণ করেছেন, সিনেমায় বিকশিত করেছেন নিজের মেধা ও যোগ্যতাকে।
সেই সময়কার সুপারহিট জুটি ইলিয়াস কাঞ্চন ও দিতি জুটির ‘এই নিয়ে সংসার’ ছবিতে ওমর সানি নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে পেরেছিলেন। তবে এই ছবির সাফল্যের সব প্রশংসা মজুদ রইলো কাঞ্চন-দিতি জুটির উপরই। তাই নিজেকে প্রমাণের সুযোগ খুঁজছিলেন ওমর সানি। সেই সুযোগ নিয়ে হাজির হলেন পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম। অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে মুক্তিকে নিয়ে সানির সাথে জুটি বেঁধে নির্মাণ করলেন রোমান্টিক ছবি ‘চাঁদের আলো’। সুপার বাম্পার হিট হলো সেই ছবি। ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সেরা সুপারহিট ছবিগুলোর তালিকায় রয়েছে এটিও।
Advertisement
এরপর ক্যারিয়ারের পালে যেন বসন্তের হাওয়া পেলেন ওমর সানি। তবে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর ইতিহাস ও প্রাপ্তিটি তখনো অপেক্ষায় ছিলো তার জন্য। তার মুখোমুখি হন সানি ১৯৯৩ সালে। জুটি বাঁধেন আজকের সফল দম্পতি ওমর সানি ও মৌসুমি। তখন সালমান-মৌসুমি জুটি সুপারহিট। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে অনেক হিসেব নিকেশ তারা পাল্টে দিয়েছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু ‘অন্তরে অন্তরে’ মুক্তির পর দুই তারকাই ঘোষণা দিলেন আর তারা একসঙ্গে অভিনয় করবেন না। এই ঘোষণায় বেশ ভালোই ধাক্কা খান রোমান্টিক ছবির নির্মাতারা। বাধ্য হয়েই কেউ কেউ বিকল্প ভাবলেন।
সেই বিকল্প ভাবনায় নির্মাতা দিলীপ সোম বানালেন ‘দোলা’ নামের একটি চলচ্চিত্র। যেখানে ‘চাঁদের আলো’খ্যাত ওমর সানির সঙ্গে জুটি বাঁধেন সালমানের হিট ছবির নায়িকা মৌসুমী। সেই তো শুরু এই দুই তারকার মুগ্ধতার গল্পের। আজও তা বহমান। এরপর সিনেমার পর্দায় সানি-মৌসুমী জুটি বহুবারই বাজিমাত করেছেন, বাস্তব জীবনটাকে তারা রাঙিয়ে রেখেছেন সুখের দাম্পত্যে।
‘দোলা’ ছিলো সুপারহিট চলচ্চিত্র। সুপার জুটি সালমান-শাবনূরের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই এগিয়ে চললো সানি-মৌসুমীর জুটির। কখনো কখনো সালমান-শাবনূর জুটিকেও ছাড়িয়ে গেছে এই জুটির সিনেমা। দীর্ঘদিন তারা একসঙ্গে কাজ করেছেন ৪০টির বেশি সিনেমায়। উপহার দিয়েছেন ‘আত্ম অহংকার’, ‘লাট সাহেবের মেয়ে’, ‘রঙিন রংবাজ’, ‘মুক্তির সংগ্রাম’, ‘হারানো প্রেম’, ‘গরীবের রানী’, ‘প্রিয় তুমি’, ‘শান্তি চাই’, ‘মিথ্যা অহংকার’, ‘ঘাত প্রতিঘাত’, ‘লজ্জা’, ‘সংসারের সুখ দুঃখ’, ‘কথা দাও’, ‘তুমি সুন্দর’, ‘রুপসী রাজকন্যা’ ইত্যাদি। বলার অপেক্ষা রাখে না সবগুলো ছবিতেই সুপারহিট নায়ক হিসেবে দেখা দিয়েছেন ওমর সানি।
মৌসুমী ছাড়াও এই নায়ক সফল হয়েছেন অরুণা বিশ্বাস, নিশি, লিমা, শাবনূর, শাহনাজ, পপির সঙ্গে।
Advertisement
অনেকদিন ছিলেন না অভিনয়ে। সেই নিরবতা ভেঙে তিনি ফিরেছিলেন ভিলেন হয়ে। বেশ কিছু ছবিতে কাজ করে ভিলেন ওমর সানি সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু একমাত্র কন্যার আবদারের কারণে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে অভিনয় করছেন চরিত্র অভিনেতা হিসেবে।
অভিনয়ের বাইরে নানা রকম ব্যবসা দেখাশোনা করেন ওমর সানি। পাশাপাশি তিনি রাজনীতি সচেতন একজন মানুষও। মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, মানুষের জন্য কিছু করতে হলে রাজনীতি সবচেয়ে মজবুত প্লাটফর্ম। তাই শিল্পী সমিতির নির্বাচনেও তিনি সক্রিয়। সহসভাপতি হিসেবে এই সমিতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। গেল বছর লড়েছিলেন সভাপতি পদে। বন্ধু মিশা সওদাগরের কাছে হেরে গেলেও চলচ্চিত্র ও শিল্পী সমিতির প্রতি বজায় রেখেছেন শুভকামনা।
ব্যক্তি জীবনে অভিনেত্রী মৌসুমীকে নিয়ে সুখের সংসার ওমর সানির। ১৯৯৩ সালের ২ নভেম্বর রায়হান মুজিব পরিচালিত ‘আত্ম অহঙ্কার’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় ওমর সানী তার নিজের একটি স্বর্ণের চেন উপহার দিয়েছিলেন মৌসুমীর জন্মদিন উপলক্ষে। তখন সিলেটের জৈন্তাপুরে শুটিং চলছিল। সেই থেকে ওমর সানী মৌসুমীর প্রেম, ভালোবাসার শুরু। শুরু একসঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে সিনেমায় অভিনয় করা। সেই সম্পর্কের হাত ধরেই ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন তারা।
সুখের দাম্পত্যে সানি-মৌসুমীর সংসার আলো করে রেখেছে এক পুত্র ফারদিন এহসান স্বাধীন ও এক কন্যা ফাইজা। নিজের জন্মদিনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার দোয়া চেয়েছেন তিনি।
এলএ/এমএস