দেশজুড়ে

২৫০ টাকা হাজিরায় নির্বাচনী প্রচারণায় নারীরা

এবারের খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে নারীদের উপস্থিতি অতীতের যে কোনো নির্বাচনে রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রায় ২০ হাজার নারী এবার বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচার প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন। নারীদের উপস্থিতি এবারের নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি কেড়েছে। সকাল ও বিকেলে মোট চার ঘণ্টা কাজ করে তারা বাড়তি অর্থও উপার্জন করছেন। সময় কম হওয়ায় প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদেরকেও ব্যাপকভাবে প্রচারণায় নামিয়েছেন।

Advertisement

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র ৯ দিন বাকী। ফলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ছুটছেন নগরীর ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের ছবি-প্রতীক সংবলিত লিফলেট ও নির্বাচনী ইস্তেহার বিলি করছেন।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নারী কর্মীরা নারী ভোটারদের পাশাপাশি পুরুষ ভোটারদের কাছেও প্রার্থীদের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরছেন। নগরীর প্রত্যেক ওয়ার্ডেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে নারী ভোটকর্মী রয়েছেন। এসব নারী কর্মীরা দল বেঁধে লিফলেট নিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, অতিদরিদ্র নারী কর্মী এবার নির্বাচনে প্রচারে নেমেছেন। প্রচারে থেমে নেই ধনী নারীরাও। ধনী ও উচ্চ মধ্যবিত্ত নারীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের জন্য বিনা পারিশ্রমিকে ভোট চাচ্ছেন। আর অন্যান্য শ্রেণির নারীরা প্রতিদিন ২০০- ২৫০ টাকার বিনিময়ে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। প্রচার-প্রচারণায় বস্তির দরিদ্র নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।

Advertisement

মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মাহবুবুল আলম সোহাগ জানান, তাদের দলের নেতাদের স্ত্রী-মেয়ে, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগের মেয়েরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিলি করছে। তারা দলীয় মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীকে কেন ভোট দেবেন তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের বোঝাচ্ছেন।

তিনি বলেন, গত নির্বাচনে আমাদের নারী কর্মী কিছুটা কম ছিল। এবার অনেক নারী কাজ করছে। গত নির্বাচনে জামায়াতের নারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছিল। এবার যাতে তারা সেই কাজটি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য সচিব এহতেশামুল হক শাওন বলেন, বিএনপির নারী কর্মীরাও বসে নেই। প্রতিটি ওয়ার্ডে, পাড়া, মহল্লায় নারীদের টিম গঠন করা হয়েছে তারা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন। তাদের দেয়া রিপোর্টে ধানের শীষের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন আমরা জানতে পারছি। নারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিলি করছেন। তারা অন্য নারীদের সামনে আমাদের মেয়র প্রার্থীর সততা, যোগ্যতা এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রতিটি ওয়ার্ডে দুই শতাধিক নারী কর্মী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষেও প্রায় সমান সংখ্যক নারী কর্মী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

Advertisement

নগরীর ২১ নং ওয়ার্ডের ৪, ৫ ও ৬ নং ঘাট বস্তির আমেনা, সর্বরী বেগম, ময়না, আকলিমা, করিমন, রাহেলা বেগম জানান, সকাল ৮টা থেকে ২ ঘণ্টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ২ ঘণ্টা মোট ৪ ঘণ্টা তারা কাজ করছেন। লিফলেট বিলি-প্রচারণা চালিয়ে তারা প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা ২৫০ টাকা আয় করছেন। আর এ টাকা দিয়ে তাদের সংসারের অভাব কিছুটা পূরণ হচ্ছে।

২৪ নং ওয়ার্ডে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এ ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী তার এবং মেয়রের জন্য নারীদের কাজে লাগিয়েও ঠিকমতো টাকা দিচ্ছেন না। প্রথমে তাদেরকে ২৫০ টাকা করে দেয়া হলেও এখন দিচ্ছেন ২০০ টাকা করে।

এক কর্মী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, তাদের টিম যে পুরুষ নেতা পরিচালনা করছেন তিনি ৫০ টাকা কম দিচ্ছেন।

একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ মতে- এবারের নির্বাচনে ২০ হাজারেরও বেশি নারী প্রচারণায় নেমেছেন।

আলমগীর হান্নান/আরএআর/আরআইপি