বিশেষ প্রতিবেদন

বার কাউন্সিল নির্বাচনের জয়ে আশাবাদী উভয় প্যানেল

বার কাউন্সিল নির্বাচন ঘিরে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দেশের ল’ মেকারদের সনদদানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করছেন কারা? ব্যাপক উৎকণ্ঠা ও চমক দেখার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন সারাদেশের আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Advertisement

দেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৪ মে। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫৭ হাজার। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভবন ছাড়াও দেশের জেলা সদর এবং উপজেলা সদরের দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণ ও বাজিতপুরের কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা বারের গত নির্বাচনে আওয়ামীপন্থীদের প্যানেল থেকে সম্পাদকসহ ১৪টি পদে বিজয়ী হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের নিরঙ্কুশ বিজয় চিন্তার ভাঁজ ফেলে সরকারের শীর্ষ মহলের কপালে। তবে এবার তারা আশা প্রকাশ করছেন, বার কাউন্সিল নির্বাচনে এবার ভিন্ন চিত্র দেখবেন দেশের মানুষ। এ জন্য নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী প্যানেলের প্রার্থীরা

Advertisement

বার কাউন্সিল নির্বাচনে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে এবার প্রার্থী নির্বাচনের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের থেকে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং হেভিওয়েট নেতাদের প্রার্থী করা হয়েছে।

অন্যদিকে, এবারের নির্বাচনে দেশের দক্ষিণাঞ্চল তথা বৃহত্তর বরিশালের কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী প্যানেল। সে হিসেবে ওই অঞ্চলে গ্রামের বাড়ি রয়েছে তাদের মধ্যে চারজনকে মনোনয়ন দিয়েছে সরকারদলীয় আইনজীবীরা। একই অবস্থা বৃহত্তর ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও। এ কারণে এবারের ভোটের পাল্লা আওয়ামী লীগের দিকে ভারী বলে ধারণা করছেন সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা বারসহ ময়মনসিং, গাজীপুর ও কুমিল্লা বারের আইনজীবীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষে যাদের প্রার্থী করা হয়েছে তাদের নাম বললেই সবাই চিনে ফেলছেন কিন্তু বিএনপি-জামায়াতপন্থী প্রার্থীদের নাম আগে কেউ তেমন শোনেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের বার কাউন্সিল নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী প্যানেল থেকে সিনিয়র কয়েকজন বাদে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের প্রার্থী করা হয়েছে। যদিও এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। এরপরও নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে তারা আশাবাদী।

বার কাউন্সিল নির্বাচনে নিজেদের বিজয় ধরে রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে আরও সুদৃঢ় করতে সাধারণ আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে এবারও বিজয় ছিনিয়ে আনব, ইনশা আল্লাহ। সারাদেশের আইনজীবীরা আমাদের পাশে আছেন।’

Advertisement

এ বিষয়ে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী ও নির্বাচনের প্রার্থী সৈয়দ রেজাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আমরাই জয়ী হব। কারণ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবার তার পছন্দ মতো প্রার্থী ঠিক করে দিয়েছেন। আমাদের সবার মধ্যে ঐক্য রয়েছে, এ কারণে এবারও আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।’

প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘এবার আমরা বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী দিয়েছি। আশা করছি, সাধারণ আইনজীবীরা তাদের ভোট দেবেন। এছাড়া সাংগঠনিকভাবে এবার আমরা আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। আশা করছি, এবারের নির্বাচনে আমরা সবার সমর্থন পাব।’

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিচার বিভাগের ওপর সরকারের একটি প্রভাব রয়েছে। প্রভাবমুক্ত বিচার বিভাগ নিশ্চিত করতে সাধারণ আইনজীবীরা বিএনপিকে ভোট দেবেন এবং আমরা বার কাউন্সিল নির্বাচনে বিজয়ী হব।’

‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী প্রার্থীরা যেভাবে নিরঙ্কুশ বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন, এ নির্বাচনেও আমরা বিজয়ী হব’- যোগ করেন তিনি। বিএনপিপন্থী অপর আইনজীবীনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এবারের নির্বাচনে বিএনপিপ্রার্থীরাই জয়ী হবেন। কারণ এবারের নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তারাই আইনজীবীদের নেতৃত্ব দেবেন।’

জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে নিজ নিজ দলের আইনজীবীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সিনিয়র আইনজীবীরা। নির্বাচন ঘিরে আইনজীবীদের মধ্যে একটি উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। উভয় দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদেরও নজর এখন বার কাউন্সিল নির্বাচনের দিকে।

প্রসঙ্গত, প্রতি তিন বছর অন্তর বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একজন ভোটার মোট সাতটি ভোট দিতে পারেন। বার কাউন্সিল ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বাকি ১৪ জন আইনজীবীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন।

১৪ জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সারাদেশে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে সাতজন এবং দেশের সাতটি অঞ্চলের লোকাল আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে সাতজন নির্বাচিত হন।

সারাদেশের প্রায় ৫৭ হাজার আইনজীবী তিন বছরের জন্য এ নির্বাচনে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। নির্বাচন সংক্রান্ত আপত্তি শুনানির জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি ট্রাইব্যুনালও গঠন করে দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হলেন- বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। বাকি দু’জন সদস্য হলেন-বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও অ্যাডভোকেট মো. ওজিউল্ল্যাহ।

বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী প্যানেলের প্রার্থীরা

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্যানেলভুক্ত নেতারা হলেন- বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, জেড আই খান পান্না, পরিমল চন্দ্র গুহ ও শ ম রেজাউল করীম। এই সাতজন সাধারণ সদস্য পদে লড়বেন।

সাতটি আঞ্চলিক সদস্য পদে আছেন- এ গ্রুপ থেকে কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, বি গ্রুপ থেকে মো. কবির উদ্দিন ভূঁইয়া, সি গ্রুপ থেকে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, ডি গ্রুপ থেকে এ এফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী, ই গ্রুপ থেকে পারভেজ আলম খান, এফ গ্রুপ থেকে মো. ইয়াহিয়া ও জি গ্রুপ থেকে মো. রেজাউল করিম।

অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবী প্যানেলের সাধারণ সদস্য প্রার্থীরা হলেন- সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ফজলুর রহমান, তৈমূর আলম খন্দকার, বোরহানউদ্দিন, হেলালউদ্দিন মোল্লা, মো. আব্বাস উদ্দিন ও আসিফা আশরাফী পাপিয়া।

অঞ্চলভিত্তিক সদস্য পদে এ গ্রুপ থেকে মো. মহসীন মিয়া, বি গ্রুপ থেকে বাধন কুমার গোস্বামী, সি গ্রুপ থেকে শেখ মোখলেসুর রহমান, ডি গ্রুপ থেকে মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, ই গ্রুপ থেকে এস আর ফারুক ও এফ গ্রুপ থেকে মো. ইসহাককে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

এফএইচ/এমএআর/আরআইপি