জাতীয়

যে প্রক্রিয়ায় কার্যকর করা হবে সাকার ফাঁসি

হত্যা-গণহত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায় কার্যকরে আরো ধাপ রয়েছে। ধাপগুলো পার হলেই সরকার তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে। সুপ্রিম কোর্টের আপিলের চূড়ান্ত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ-ই ধাপের শুরু।দ্বিতীয় ধাপে নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের সুযোগ পাবেন সাকা চৌধুরী। উক্ত রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করার পর তারও চূড়ান্ত পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির কাছে (মার্সি পিটিশন) ক্ষমা প্রার্থনা করার বিধান আছে তার।বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ সাকার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। এখন রাষ্ট্র ও আসামি- দুই পক্ষই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির জন্য অপেক্ষা করছে।এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষা করতে হবে। রায় হাতে পেলে দণ্ড কার্যকরের করবে সরকার। রিভিউ আবেদনের রায় অনুযায়ী পুনর্বিবেচনার আবেদনের জন্য ১৫ দিন পাবেন আসামি। তারা যখনই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন তখনই দণ্ড কার্যকর পন্থা স্থগিত হবে। তবে আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনার (মার্সি পিটশিনের) সুযোগ পাবেন। দু`টোই নাকচ হয়ে গেলে সরকার দণ্ড কার্যকর করবে।সেক্ষেত্রে মানবতাবিরোধী দুই জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসি-ই দৃষ্টান্ত। সাকার চূড়ান্ত রায়ের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আপিলে ফাঁসি বহাল থাকায় রিভিউয়ের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফায়েড কপি আসামি পাওয়ার পর রিভিউ আবেদন করলে নিয়ম অনুযায়ী তা শুনানি হবে।আসামির আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তারা এই রায়ে সন্তুষ্ট নন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে অবশ্যই রিভিউ করবেন। চট্টগ্রাম থেকে সাকা চৌধুরী ছয়বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তার কোনো অপরাধ নেই, খন্দকার মাহবুব নির্দোষ মনে করেন তাকে।অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ভারতের বিখ্যাত ডাকাত ফুলন দেবীও নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচিত হওয়া কারো অপরাধ না করার প্রমাণ নয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সাকা চৌধুরী এখন অপরাধী, দাবি করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।তিনি বলেন, রায়ের পূর্ণ অনুলিপি পেলে তারা চাইলে রিভিউ করতে পারেন। রিভিউয়ের সুযোগ আছে, তবে আমার মনে হয় না, এর মাধ্যমে তিনি নির্দোষ প্রমাণ হবেন। কারণ রিভিউ আপিলের সমকক্ষ নয়। এটাতে কেবল বড় কোনো ভুল হলে সেটা ধরিয়ে দেয়া যেতে পারে।মানবতাবিরোধী প্রথম ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কাদের মোল্লার চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ, যাতে ৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়।২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিই আবেদন নিস্পত্তি করার পর ১২ ডিসেম্বর রাতে কার্যকর হয় কাদের মোল্লার ফাঁসি। ওই সময়ের মধ্যে অবশ্য কাদের মোল্লার দণ্ড কার্যকর করা নিয়ে বিতর্ক ছিল, যে  চূড়ান্ত রায়ের পর কাদের মোল্লা রিভিউ করতে পারবেন কি-না।রায়ের আড়াই মাস পর ৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। অনুলিপি পাওয়ার পর ৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। দুই পৃষ্ঠার ওই মৃত্যু পরোয়ানা খামে ভরে লাল কাপড়ে মুড়ে সাতশ` ৯০ পৃষ্ঠার নথিসহ পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।১০ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বললেও, কাদের মোল্লার ফাঁসির মাত্র দুই ঘণ্টা আগে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আবেদন করেন। সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ রাতে এক আকস্মিক আদেশে তা স্থগিত করে দেন। দু`টি আবেদনের একটিতে রায় পুনর্বিবেচনা এবং দ্বিতীয়টিতে কাদের মোল্লার খালাস চাওয়া হয়।এরপর ১১ ও ১২ ডিসেম্বর আসামি পক্ষের আবেদনের শুনানি করে তা নাকচ করে দেন প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। ১২ ডিসেম্বর রাতে ১০টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।কাদের মোল্লার পর আপিলে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার শুনানি হয়। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে তাকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সংক্ষিপ্ত রায়ে ট্রাইব্যুনালকে ওই রায় জানিয়ে দেয় আপিল বিভাগ। এর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনো প্রকাশ পায়নি।গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের মামলা নিষ্পত্তি করে ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির রায় বহাল রাখায় আবার ফিরে আসে সেই আলোচনা। এর মধ্যেই ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাও আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করা যাবে বলে সুপ্রিম কোর্ট জানায়।এতে বলা হয়, আসামি ও রাষ্ট্র- দু`পক্ষই ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করবে। তবে রায়ের নির্ভরযোগ্যতায় খাদ আছে, বা বিচার-বিভ্রাটের শঙ্কা আছে বলে মনে করলেই আদালত তা পুনর্বিবেচনার জন্য গ্রহণ করবেন।এফএইচ/বিএ

Advertisement