যশোরে একটি ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশ। ‘ক্ষতিগ্রস্ত মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হবে’ এমন প্রতিশ্রুতির কথা বলে মেয়ের বাবাকে তুলে নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষরও নেয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রভাব ও হুমকির মুখে ওই মেয়ের পরিবার তিনদিন প্রশাসনের দ্বারস্থও হতে পারেনি। অবশেষে বুধবার সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আইনের আশ্রয়ে এসেছে কিশোরিটি। সাংবাদিকদের পরামর্শে বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে যান মেয়েটির পরিবার। এ পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাটি শুনে বুধবার বিকেলে কিশোরীকে হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়েছেন এবং মামলা নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন।স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় গ্রামের মোড়ের দোকানে মশা নিধনের কয়েল কিনতে ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে যায় ওই কিশোরি। পথিমধ্যে নরেন্দ্রপুর মেঠোপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছলে প্রতিবেশি মারফুল শেখ জোর করে ওই কিশোরিকে (১৪) বাঁশবাগানে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এসময় সঙ্গে থাকা ছোট ভাই দৌড়ে বাড়ি গিয়ে বিষয়টি জানায়। তখন ওই কিশোরির চাচা ও প্রতিবেশি জুয়েল, সুমন, মুকুলসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোরিকে উদ্ধার ও মারফুলকে ধরে ফেলেন। ওই দিন গভীর রাতে স্থানীয় নরেন্দ্রপুর ফাঁড়িতে গিয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লালকে বিষয়টি জানান মেয়েটির পরিবার।কিন্তু এসআই বিল্লাল ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারকে মামলা নেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন। এসময় কোতয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাছ আলীকে ঘটনাটি জানানো হলে তিনিও মামলা নেয়া হবে না বলে জানান। পরের দিন ২৭ জুলাই সকালে নরেন্দ্রপুর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ক্ষতিগ্রস্তের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তাদেরকে ফাঁড়িতে আসতে বলেন। ফেরার পথে তিনি অভিযুক্ত মারফুলকে মোটরসাইকেলে করে তুলে আনেন। পরে ভিকটিমের পরিবার ফাঁড়িতে গিয়ে এসআই নাজমুলকে পাননি। এরপর তাদেরকে স্থানীয় নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রোবহান উদ্দিনের অফিসে তুলে আনা হয়। সেখানে অভিযুক্ত মারফুলকে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো। ওই কার্যালয়ে বসেছিলেন স্থানীয় ইউপি মেম্বর আব্দুল হাইসহ অনেকে। এক পর্যায়ে ভিকটিমের বাবাকে ৫টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। তিনি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে প্রথমে রাজি হননি। এসময় তাদের দুই জনের বিয়ে দেয়ার নামে মীমাংসা করার জন্য জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়া হয়।কিন্তু গত তিনদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে তালবাহানা করা হচ্ছে। উপায়ান্ত না পেয়ে বুধবার দুপুরে ভিকটিমের বাবা ও মা প্রেসক্লাব যশোরে এসে সাংবাদিকদের বিষয়টি অবহিত করেন। সাংবাদিকদের পরামর্শে তারা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হকের কাছে যান। তিনি বিষয়টি শুনে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। বুধবার বিকেলে সেখানে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা তার কাছে এসেছিলেন। ঘটনা শুনে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় হাসপাতালে। সেখানে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে এ ঘটনায় জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মামলারও প্রস্তুতি চলছে। যদিও এখনো কেউ গ্রেফতার হননি। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ফাঁড়ির অভিযুক্ত এসআই নাজমুল অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তিনি মারফুলকে চেনেন না। তাকে বাড়ি থেকে তুলেও নিয়ে আসেননি। ওই সকালে তিনি বাজারে নাস্তা করতে গিয়েছিলেন। স্থানীয় এক নেতা তাকে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। তিনি ওই নেতার অফিসে যাননি। তবে মেয়েটির চাচার সঙ্গে কথা হলে তিনি মেয়ের চাচাকে বলেছেন, মামলা দিলে আসামি ধরে দিতে পারবো। তোমরা মামলা করো আমরা সহযোগিতা করবো।অপর অভিযুক্ত এসআই বিল্লাল হোসেন বলেন, ঘটনার দিন গভীর রাতে দুই নারী ফাঁড়িতে এসে বিষয়টি জানানোর কথা স্বীকার করেছেন। ওই দুই নারী তাকে মামলা নেয়ার কথা বলেছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি ওই দুই নারীকে জানিয়েছেন, এটা ফাঁড়ি, এখানে মামলা নেয়া যাবে না। আপনার থানায় যান। এসময় তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলেন বলেও দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, ওসি তাকে বলেছেন, অভিযোগ না দিলে তুমি সেখানে যাবা কেন? এজন্য ওই রাতে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়নি।মিলন রহমান/এমজেড/আরআইপি
Advertisement