দেশজুড়ে

টাকার জন্য পা কাটাতে পারছেন না জসিম

এক সময় রঙিন দিন ছিলো জসিমের। তখন শুধু মা-ছেলের সংসার ছিল তাদের। সেই সংসার চালাতে কখনও সিএনজি কখনও টমটম চালিয়েছেন তিনি। তার আগে রিকশাও চালিয়েছেন জসিম। সব মিলে ভালোই চলতো তাদের সংসার। এর মধ্যে বিয়ে করেন তিনি। দুই বছর পর তার ঘর আলো করে আসে একমাত্র ছেলে শাহীন আহমেদ। ছেলের বয়স এখন ৯ বছর।

Advertisement

ছেলের জন্মের এক বছর আগে জমিতে কাজ করতে গিয়ে কাদার নিচ থেকে কিসের যেন আঘাত লাগে তার বাম পায়ের আঙুলে। সেই আঘাতের কারণে ওই স্থানে ঘা হয়ে যায় তার। এক বছর পর পুরো পায়ে ইনফেকশন ছড়িয়ে পরে তার। শুরু হয় প্রচণ্ড জ্বালা যন্ত্রণা। রাতের পর রাত কাটিয়েছেন তিনি চিৎকার দিয়ে কান্না করে। ডাক্তার পরামর্শ দিলেন পা কেটে ফেলতে। পায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় জসিমের পরিবার। এ অবস্থা দেখে সন্তানকে ফেলে বাবার বাড়ি চলে যায় তার স্ত্রী।

জসিমের বিষয়টি জানার পর প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর তাকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন। সেই টাকায় পায়ের চিকিৎসা করান তিনি। কেটে ফেলা হয় তার বাম পা। এরপর সুস্থ হয়ে উঠেন জসিম। এবার এক পা দিয়েই সংসারের হাল ধরেন তিনি। শুরু করেন টমটম চালানো। এতে প্রতিদিন ৩০০/৪০০ টাকা আয় হতো তার। মা ও সন্তানকে নিয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার। কিন্তু গত এক বছর ধরে আবারও তার ডান পায়ে শুরু হয় যন্ত্রণা। দিন যত বাড়ে, যন্ত্রণাও বাড়ে। এতে বন্ধ হয়ে যায় তার আয় উপার্জন।

এরই মধ্যে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ডান পা কেটে ফেলতে হবে। এখন আর চিকিৎসা করানোর মতো কোনো টাকা নেই জসিমের। তাই উপায় না পেয়ে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৫ দিন হলো বাজার হয়নি। ঘরে কিছুই নেই। ছোট বোন নাদিয়া আক্তার ভাইকে দেখতে এসে ২শ টাকা দিয়ে চাল ডাল কিনে দিয়েছে। এতে কয়েক দিন পর পেট ভরে খাওয়া হলো পঙ্গু জসিম ও তার পরিবারের। জসিম আহমদ (৩৫) মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলখুড়া ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামের বাসিন্দা।

মা সুফিয়া বেগম মানুষের কাছ থেকে সাহায্য আর অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চললেও ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে পারেন না তিনি। বর্তমানে অনিশ্চিত জীবন যাপন করছেন জসিম উদ্দিন।

জসিম জনালেন, নিজের চিকিৎসা করা তো দূরের কথা, একমাত্র ছেলের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে পারছি না। অভাবের কারণে ছেলের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে গেছে। জসিমের বোন নাদিয়া জানান, ডাক্তার বলেছে আমার ভাইয়ের পা পচে গেছে। সেটিও কেটে ফেলতে হবে। কিন্তু পা কাটানোর জন্য টাকার দরকার। সেই টাকাও জোগার করতে পারছি না। অভাবের কারণে এখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করাচ্ছি।

জসিমের মা বলেন, জানি না আল্লাহ কেন আমার ছেলেকে এই শাস্তি দিচ্ছেন। আমার জীবন নিয়েও যদি আমার ছেলেকে ভালো করে দিতেন। চোখের সামনে ছেলের এতো কষ্ট সহ্য হয়না।

Advertisement

জসিমের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় আখাইলখুড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর মিরপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গৌছ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, জসিমের পরিবারটি এখন খুব অভাবি। তার চিকিৎসা করাতে এমন অবস্থা হয়েছে তাদের। শুনেছি তার পা কেটে ফেলতে হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি তার চিকিৎসার জন্য। এখন টাকার অভাবে সে তার পা কাটাতে পারছে না।

অসহায় জসিম ও তার মায়ের পাশে কেউ দাঁড়াতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭৪৫-৫৮৫৭১৩ নম্বরে।

রিপন দে/এমএএস/পিআর