প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনান করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। আর তারেক রহমান ধাপে ধাপে দলের নেতা হয়েছেন।’
Advertisement
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন- আগামী নির্বাচনে কোন পার্টি আসলো বা আসলো না তাতে কিছু আসে যায় না, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেছেন-আদালতের সাজা পেয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে, এখানে সরকারের কিছু করার নেই। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকারগ্রস্ত মনেরই বহিঃপ্রকাশ। এটা স্বৈরশাসকের কণ্ঠস্বর।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নেন তখন তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা ছিল। স্বাভাবিক গতিতে মামলা চললে ওনার যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারতো। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার জোরে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
Advertisement
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই- আপনি ‘৮১ সালে দলের সভানেত্রী কীভাবে এবং কোন দেশে থেকে হয়েছিলেন সেটা কি আপনার মনে আছে? তখন আওয়ামী লীগে অনেক বর্ষীয়ান নেতা ছিলেন, তাদেরকে ডিঙ্গিয়ে আপনি কীভাবে দলের সভাপতি হয়েছিলেন? আপনি তো আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন না। তারেক রহমান দলে ধাপে ধাপে সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং পরে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবেই জাতীয় রাজনীতির আজকের অবস্থানে উন্নীত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার যেভাবে ক্ষমতায় আসীন হয়েছে সেটির পূণরাবৃত্তির দিবাস্বপ্ন আওয়ামী নেতারা দেখতে পারেন, কিন্ত এদেশে আর একতরফা জাতীয় নির্বাচন হবে না। তাই শেখ হাসিনা যতই মহাপরিকল্পনা করুন না কেন, সেই নীলনকশার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবেন না। পরিবর্তনের ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যের আস্ফালন অন্তর্গত ভীতিরই বহিঃপ্রকাশ। আদালতকে ব্যবহার করে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়ার সাজা আদালতের ব্যাপার। কিন্তু আদালত নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার রায় এটি।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আপনি (শেখ হাসিনা) যতই মিথ্যাচার করুন না কেন, আপনার কথা জনগণ বিশ্বাস করে না। আমি জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আপনাকে পরিস্কার করে বলে দিতে চাই- বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশের জনগণ তা হতে দেবে না। আপনি যতই কূটকৌশল করেন না কেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে।’
Advertisement
রিজভী আহমেদ বলেন, “গতকাল প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন- ‘কোটা আন্দোলনে যারা ছিল তাদের ছবি-টবি সংরক্ষণ করা আছে। তখন দেখা যাবে, ওই জেলার কারা কারা আন্দোলনে ছিল সেটিও আমরা দেখব। তারপর যদি কান্নাকাটি করে তখন আমাদের কিছু করার থাকবে না।’ প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য নতুন কিছু নয়। এই বক্তব্যে তিনি তার ঐতিহ্যই বজায় রেখেছেন। জাতির তরুণদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কী চমৎকার স্নেহবর্ষণ!’
তিনি বলেন, ‘গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রধানমন্ত্রী বাকশালের বেওয়ারিশ লাশটাই বয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর মনস্তত্ত্বে যেটি নেই, সেটি হলো- সততা, সভ্যতা, অন্যের প্রতি মর্যাদা, যোগ্যতা ও সহানুভুতি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জনগণকে নিয়ে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেছেন- যারা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় তারাই এর জন্য দায়ী। কেবল জবাবদিহিহীন সরকার প্রধানের পক্ষেই এমন কথা বলা সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হচ্ছে মুলত আপনার দুুর্বিনীত সন্ত্রাসী সরকার। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী খানাখন্দে ভরা সড়ক মহাসড়ক। প্রধানমন্ত্রী রঙিন চশমা খুলে দেখুন সারা দেশের সড়কের কী বেহাল দশা। কীভাবে আপনার সোনার ছেলেরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে জিম্মি করে গণপরিবহনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনি এর দায় এড়াতে পারেন না।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘দুই সিটিতেই মন্ত্রী-এমপি’রা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মিটিং করছেন। দুই সিটিতে এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। শঙ্কা আর শিহরণের ক্ষণে ক্ষণে নৈরাজ্যের ছায়া ফেলেছে দুই সিটি কর্পোরেশনে। অতএব ভোটে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হলে সেনা মোতায়েন করতে হবে। সেনা মোতায়েন ছাড়া দুই সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। অবিলম্বে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন পুলিশ সুপার এবং খুলনা সিটির পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার করতে হবে, অন্যত্থায় দুই সিটি কর্পোরেশনেই ভোটহরণের নির্বাচন হবে।’
তিনি আরও বলেন,‘ সকল বাধার পরেও এখনও পর্যন্ত দুই সিটিতে ধানের শীষের জোয়ার উঠেছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির শ্লোগান উঠেছে। যতই পরিকল্পনা-মহাপরিকল্পনা করুন না কেন, জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত।’ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে শওকত মাহমুদ, মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মো. মুনির হোসেন, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এমবিআর/আরআইপি