ফিচার

খোলা আকাশের নিচে সেলুন!

এক সময় গ্রামের হাট-বাজারে বা বড় রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে চুল কাটতে দেখা যেত। নরসুন্দর বা শীলরা এ কাজ করতেন। কখনো কখনো বড় গেরস্থের বাড়িতে গিয়েও কাজটা করে আসতেন। সে হিসেবে বছর শেষে তাদের দেওয়া হতো ধান-চাল।

Advertisement

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমনই রীতি ছিল। কালের বিবর্তনে তা আজ অনেকটাই স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সেভাবে চুল কাটাকে বলা হতো ‘খত কামানো’। খত কামানো মানে চুলের কোনো আলাদা স্টাইল বা ডিজাইন ছিল না। বড় চুল কেটে ছোট ছোট করে দেওয়া হতো। অনেকটা কদম ফুলের মতো মনে হতো মাথাটা। মাথাপ্রতি পাঁচ কি দশ টাকা নেওয়া হতো।

নরসুন্দর একটি জলচৌকির ওপর বসতেন। গ্রাহককে বসাতেন পিঁড়ির ওপর। গায়ে জড়িয়ে দিতেন একটি সাদা কাপড়। তারপর তার ভাঁজ করা দুই হাঁটুর মধ্যে গ্রাহকের মাথাটা চেপে ধরে কাচি চালাতেন। কখনো কখনো প্রখর রোদের মধ্যেই চলতো এ কাজ। কেউ কেউ বড় গাছের ছায়ায় বসতেন। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছিল চুল কাটানোর নিয়ম।

পরবর্তীতে সিনেমার নায়কদের দেখে চুলের বিভিন্ন স্টাইল আবিষ্কার হতে থাকে। অবস্থাসম্পন্ন শীলরা বাজারের কোনো একটা জায়গায় ঘর তুলে বা ভাড়া নিয়ে দেয়ালে বড় আয়না ও চেয়ার বসিয়ে একটু আধুনিক হতে থাকে। আস্তে আস্তে সেই আধুনিকতাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে।

Advertisement

চুল কাটানোর এমন ব্যবস্থা এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারেও এখন আধুনিক ব্যবস্থা। এমনকি চুল কাটাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ইলেক্ট্রিক মেশিনও। দ্রুতই হয়ে যাচ্ছে নানাবিধ স্টাইল। সালমান খানের ‘তেরে নাম’ স্টাইল থেকে শুরু করে হালের শাকিব খানের হেয়ার কাটিং অনুসরণ করছে তরুণরা।

তবে এখনো মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কিছু হাট-বাজারে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে। কালকিনির গোপালপুর হাটে দেখা মেলে কারো কারো। এ ব্যাপারে মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘গোপালপুর হাটে যে মুরব্বি চুল কাটেন, ওনার নাম হরিবল কাকা। তার বাড়ি মেদাকুল। খুব ছোটবেলা থেকেই ওনাকে দেখে আসছি। শুভ কামনা রইল হরি কাকুর জন্য।’

সজিব বলেন, ‘খতকামাইন্যা কতাডা তো মুই ভুইল্লাই গেছিলাম। এহন তো কেউ আর ওই শব্দডা উচ্চারণ করে না। তাই ভুইল্লা গেছিলাম। তবে বহুদিন পর আইজ তা দেইখা মনে পড়লো।’

হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘এখন তো উপজেলায় অনেক আধুনিক সেলুন আছে। কিন্তু যখনই বাজারে যাই, ওই চুল কাটা দেখলে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। কারণ তারা যখন চুল কাটতো, দুই হাঁটু দিয়ে আমাদের চাপ দিয়ে ধরতো। যেন নড়াচড়া না করতে পারি। ফলে যখন চুল কাটতো, তখন তার হাঁটুর উপর ঘুমিয়ে যেতাম।’

Advertisement

এসইউ/আরআইপি