রাজনীতি

সাজাপ্রাপ্তদের দিয়ে আ.লীগের মন্ত্রিসভা : ফখরুল

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা ভিত্তিহীন দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Advertisement

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সমস্ত সাজাপ্রাপ্ত লোকদের নিয়ে মন্ত্রিসভায় বসিয়ে রেখেছেন। আপনাদের মামলাগুলো নিজেরা তুলে নিয়েছেন। একটাও মামলা রাখেননি, সব তুলে নিয়েছেন। সবার প্রতি সমান হবে, আপনারগুলোও থাকুক, অন্যান্যগুলোও থাকুক, দেখা যাক কী হয়। আর কোর্ট নিরপেক্ষ হোক।’

বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণ সভার আয়োজন করে ‘নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ’।

Advertisement

‘বিএনপি এত বড় রাজনৈতিক দল, সেই দলে কি এমন একজন নেতা নেই, যে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেই নেতা করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আরে উনি (তারেক জিয়া) সাজাপ্রাপ্ত কিসে? আমাদের যিনি নেতা হয়েছেন, উনি আমাদের পার্টির কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আমাদের পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিবেন এটা আমাদের গঠনতন্ত্রে আছে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে তো আপনাদের (আ.লীগের) বলার কিছু নেই। উনি (তারেক রহমান) সাজাপ্রাপ্ত কোন মামলায়? যে মামলার কোনো ভিত্তি নেই, যে মামলায় তিনি খালাস পেয়েছিলেন? এবং তাকে খালাস দেয়ার জন্য ওই বিচারকের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি (এসকে সিনহা) একটা রায় দেয়ার অপরাধে দেশ থেকে বের করে দিলেন। বলা হলো, ওনার হাত নাকি অনেক লম্বা হয়ে গিয়েছে, যা যা বলার সব কথা বললেন তাকে। দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর এখন দুর্নীতির মামলা দেয়া হচ্ছে। তখন কোথায় ছিলেন, যে কয়েকজনকে ডিঙিয়ে তাকে প্রধান বিচারপতি বানালেন? তখন সুবিধা ছিল যে, তিনি আপনাদের পক্ষে রায় দিচ্ছিলেন, তাই না? বিচার বিভাগকে শেষ করে দিচ্ছেন। এবারও একজনকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। এই যদি করতে থাকেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোথায়? নিম্ন আদালতের সমস্ত ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয় ছাড়া কোনো বিচারপতির পোস্টিং, প্রোমোশনসহ কোনো কিছুই হবে না। আপনাদের আইন মন্ত্রণালয়ের একজন বিশেষ কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া কারো বিচার এবং জামিনও হয় না। এইভাবে বিচার বিভাগকে, দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।’

তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে বিএনপি মুখপাত্র বলেন, ‘যেদিন তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন সেদিন কোটি মানুষ তাকে বরণ করতে এয়ারপোর্টে উপস্থিত হবে। আমাদের নেতা আমরা নির্বাচিত করেছি। তিনি যোগ্য নেতা বলেই তাকে আমরা নির্বাচিত করেছি। উনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলাপ করছেন তাকে (তারেক রহমানকে) দেশে ফিরিয়ে আনবেন। এই ভয় আমাদের দেখাচ্ছেন কেন? দেশে যদি ফিরে আসতে হয়, উনি আসবেন। যেদিন উনি মনে করবেন দেশে ফিরে আসতে হবে সেদিন তিনি আসবেন। আর যেদিন উনি দেশে ফিরে আসবেন সেদিন দেখবেন, তার জনিপ্রিয়তা কত এবং মানুষ তাকে কতো ভালোবাসে। সেদিন দেখবেন কোটি কোটি মানুষ তাকে বরণ করবার জন্য এয়ারপোর্টে গিয়ে হাজির হয়েছেন।'

Advertisement

নির্বাচনের তফশিল অক্টোবর মাসে ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করবেন কখন? যখন জাতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। আপনারা ভয়াবহভাবে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছেন। এই দেশের মানুষ আপনাদের অধীনে নির্বাচন বিশ্বাস করে না। আপনারা সরকারে থাকবেন আর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে তা এই দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করে না বলেই, শুধু আমরা না দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল বলছে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকা উচিৎ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। সেই ব্যবস্থা আপনারা বাতিল করে দিলেন। আজকে কী হলো- ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পুরোপুরিভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছেন ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না।’

খালেদা জিয়াকে জামিন না দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এরকম মামলায় আপিল করার সঙ্গে সঙ্গে জামিন হয়ে যায়। কিন্তু দেয়া হয়নি। অথচ আপনার (শেখ হাসিনা) ক্যাবিনেটে মন্ত্রী পরিষদে তিনজন সাজাপ্রাপ্ত মন্ত্রী রয়েছে। একজনের ১৩ বছরের সাজা হয়েছে।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুু, পিন্টুর স্ত্রী এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাসিমা আক্তার কল্পনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এমবিআর/জেআইএম