জাতীয়

কোটার দরকার নেই, আবারও বললেন প্রধানমন্ত্রী

সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন কোটা রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সরকারি চাকরিতে আর কোটার দরকার নেই। এখানে ক্ষুব্ধতা বলে কিছু নেই। ছাত্ররা চেয়েছে আমি তাদের দিয়েছি।

Advertisement

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজ আপনাদের বোধোদয় হলো, ছাত্ররা যখন আন্দোলন করছিল তখনতো আপনাদের এ বিষয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি?

বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাস ভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে কথা বললেন। সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা থাকবে কী, থাকবে না তা ছাত্রদের বিষয় নয়। এটা সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়। তারপরও ছাত্ররা আন্দোলন করেছে, তারা কোটা চায় না। তাই তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। আর কোটার দরকার নেই, বাতিল করে দিয়েছি। এখন আর আলোচনার কী আছে?

Advertisement

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কেউ পরবর্তীতে জেলা কোটা না থাকার কারণে সরকারি চাকরি না পেয়ে তা চাইলেও পাবে না ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন জেলা কোটা না থাকলে আন্দোলনকারীদের কেউ পরে চাকরি না পেয়ে তা চাইলেও পাবে না। আন্দোলনে যারা যারা আছে, তাদের ছবি সংরক্ষণ করা আছে, তখন যদি কান্নাকাটি করে, তখন দেখা যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫এর পরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কি কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু করেছে? জিয়া অবৈধভাবে সরকার গঠন করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে।

তিনি বলেন, কোটায় যাদের চাকরি দেয়া হয়েছে তারাও কিন্তু মেধাবী। কারণ জেনারেল পরীক্ষায় মেধাতালিকায় তাদের আসতে হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়ের বয়সও প্রায় শেষ। এ জন্য তাদের নাতি-পুতির কথা বলেছি, যা হোক ছেলে-মেয়েরা দাবি করছে, আমি তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। এখন আবার হা-হুতাশ কেন?

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৮ এপ্রিল থেকে বড় আকারে আন্দোলন শুরু করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

Advertisement

১১ এপ্রিল শাহবাগ এবং ঢাকার সব রাস্তায় নেমে আসেন সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এরপর দেশের নানা জায়গায় সড়ক অবরোধ শুরু হয়। কোটা সংস্কারে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ১১ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা দেখা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের কোটা বাতিলের কথা বলেছেন। এদিন বিকেলে জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার ইস্যুতে প্রথমবারের মতো সরাসরি কথা বলেন। সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলেন, ‘কোটা পদ্ধতিই বাতিল।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই।’

এরপর থেকে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে তারা। ২৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারাণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে বৈঠক করে সংগঠনটি। এতে তারা সিদ্ধান্ত নেয় আগামী ৭ মে পর্যন্ত তাদের আন্দোলন স্থগিত থাকবে।

ওই বৈঠকে নানক আশ্বাস দেন যে প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে দেশে ফিরলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

এফএইচএস/জেডএ/এমএস