যশোরের বেনাপোলের ধান্যখোলা ও শার্শার গোগা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় উজানের পানির প্রভাবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে শত শত হেক্টর জমির আমন ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার কোদলা নদী, বেতনা নদী ও ভারতের ইছামতি নদীর সংযোগ খালগুলোতে হাজার হাজার পাটা বাঁধ ও মাটির বাঁধের কারণে কৃষকদের গলায় ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে এ সকল অবৈধ বাঁধ। এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতাকর্মী এ সমস্ত বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে ভারতীয় পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন পানির চাপে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল। ১৫ বছর পূর্বে নির্মিত ধান্যখোলা ও ঘিবা মধ্যবর্তীস্থানে অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা গির্জতলা ব্রিজটি সাধারণ মানুষের কোনো উপকারে আসছে না। ব্রিজটির অবকাঠামো এতই সংর্কীণ যে কোদলা নদীর উপরে ব্রিজটি বর্তমান সড়ক উচ্চতার চাইতে ব্রিজটি নিচু হওয়ায় ভারতের সুটিয়া স্লুইজ গেট দিয়ে পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর ওই পানি ময়লা আবর্জনার কারণে বাধাগ্রস্থ হয়ে ধান্যখোলার ধর্মদাহ খাল দিয়ে বাহাদুরপুর বাওড় হয়ে সোনামুখির বিলে পড়ছে। বিলের সরকারি জমি জবর দখল করে অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভারতের পানি যতটুকুই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ততটুকুই প্লাবিত হয়ে আমন ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।এদিকে ভারতীয় পানির চাপে ও অতি বর্ষণের ফলে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যার সিরাজুল হক মঞ্জু, নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফউজ্জামান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাহাদুরপুর ইউনিয়নসহ সীমান্তের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জরুরী ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।বাহাদুরপুর ইউনিয়নের স্বরবাংহুদা ব্রিজ তলিয়ে যাওয়ায় বেনাপোল ঘিবা সড়কে যান ও মানুষ চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীসহ ৫টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ ৪৪ বছরেও ঘিবা সড়কে প্রশস্ত ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় অনেক এলাকা পানিবন্দি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ভারতীয় পানির কারণে দিন দিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বলে জানান তারা। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে যশোরের শার্শা ও বেনাপোল নির্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। তার ওপর ভারতীয় উজানের পানির চাপে ভেসে গেছে ৪শ মৎস্য ঘেরসহ ১০ হাজার হেক্টর ফসলি ক্ষেত। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাহাদুরপুর, পুটখালি, গোগা, ডিহি ও কায়বা এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রশাসন। বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ৫০ শতাংশ ফসলি ক্ষেত বৃষ্টির পানি ও ভারতীয় পানির তোড়ে ভেসে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, দোয়ার ব্রিজ দিয়ে প্রবেশ করছে ভারতীয় পানি। বাহাদুরপুর ও সোনামুখি মাঠের ক্ষতি হয়েছে বেশি। এছাড়া ভারতে পশ্চিমবঙ্গের মেহেরানী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের শৈলগাড়ী ও দুবলার বিল হয়ে পাকশি ব্রিজ এর মাধ্যমে বনমান্ধার বিলে পানি প্রবেশ করার কথা কিন্তু পাকশি ব্রিজের প্রবাহমান মুখে পশ্চিম পাশে একাধিক অপরিকল্পিত বাঁধ দেয়ায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভারতীয় পানির চাপে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এ দিকে ইছামতি নদীর সংযোগ খালগুলোতে পাটা বাঁধ দেয়ায় মাখলার বিল, হেল্লার বিল, বল্লির বিল ডুবু ডুবু অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় তলিয়ে যেতে পারে শত শত হেক্টর আমন ধান। বেনাপোলের বাহাদুরপুর, পুটখালী, শার্শা উপজেলার ডিহি, লক্ষণপুর শার্শা, নিজামপুর, গোগা, কায়বা ইউনিয়নের আমন ধান ভারতীয় পানির চাপে তলিয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছে এসব এলাকার চাষিরা।এ ব্যাপারে ধান্যখোলা উত্তর পাড়ার আমন চাষি গোলাম হোসেন, আয়নাল হক, ইয়ারব, জিল্লুর রহমান, ডিহি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, লক্ষনপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন, বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, গোগা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, পুটখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফাফর সরদার ও কায়বা ইউপি চেয়ার্যানর আব্দুল কুদ্দুস জানান, বেতনা নদী, কোদলা নদী ও ইছামতি নদীর প্রত্যেকটি সংযোগ খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে ভারতীয় পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে নিষ্কাশন হতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতীয় পানির চাপে ইছামতি নদীর পানি সীমান্তবর্তী “দর’’ ব্রিজ, দাদখালীর ব্রিজ শিকারপুর ও নারকেল বাড়িয়ার মধ্যবর্তী স্থানে মুসতাবপুর ব্রিজ দিয়ে ডিহি ও লক্ষণপুরসহ প্রত্যেকটি এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এক সময়ের প্রমত্ত বেতনা নদী ও বেনাপোলের হাকর নদীতে বেড়িবাঁধ ও পাটা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় এখন আর পানির প্রবাহ নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার জানান, টানা বর্ষণে ও ভারতীয় পানির চাপে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। ভেসে গেছে দু‘শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর। সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার হেক্টর আমন ও আউষ ফসল। এছাড়া ৬৫৫ হেক্টর আমন ধানের বিজতলা ও ৩৩৫ হেক্টর সবজি সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ভারতীয় পানি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ অব্যাহত থাকলে মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান, টানা বর্ষণে ও ভারতীয় পানির চাপে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থে ব্যাপক জনগোষ্ঠি ক্ষতিগ্রস্থ হবে এটা পরিহার করতে হবে। এছাড়া যারা পাটা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে এবং পানি প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছে অচিরেই তাদের তালিকা অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে উচ্ছেদ করা হবে। বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এমএএস/পিআর
Advertisement