খেলাধুলা

চ্যাম্পিয়ন উৎসবের দুই রাজা : মেসি-ইনিয়েস্তা

দেপোর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকটা করেছিলেন লিওনেল মেসি। সে হ্যাটট্রিকেই ৩ ম্যাচ হাতে রেখে নিশ্চিত হলো বার্সেলোনার লা লিগা শিরোপা। বিজয় উৎসব তো এখন তাদেরই মানায়। সুতরাং, উৎসব মেসিকে নিয়েই মানায়। সেখানে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা কেন কিং হবেন?

Advertisement

প্রশ্ন আসাটা অবশ্য খুব স্বাভাবিক নয়। বার্সেলোনার বিজয়মঞ্চে যে এখন মেসির সঙ্গে নায়ক থাকবেন আরো একজন সেটাই বরং স্বাভাবিক। ফুটবল খেলা যখন থেকে বুঝতে শিখেছিলেন ইনিয়েস্তা, তখন থেকেই তো তিনি জড়িয়ে রয়েছেন বার্সার সঙ্গে। বার্সার ভাগ্য যাই হোক, জড়িয়েছিলেন তিনি। ছেড়ে যাননি। তবে এবার যেতে হচ্ছে। বার্সা ছেড়ে তিনি যাচ্ছেন চাইনিজ ফুটবল লিগে। ইউরোপেই আর খেলবেন না। যাতে করে, কোনোভাবেই আর বার্সেলোনার মুখোমুখি হতে না হয়। সেটা যে তার জন্য হবে খুবই বেদনাদায়ক!

সারা জীবনে ছেড়ে যাননি, অথচ ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে বার্সা ছাড়ছেন- এরও একটা কারণ আছে। ইনিয়েস্তা হয়তো সারা জীবন ব্যায় করেছেন ক্যাম্প ন্যুতে; কিন্তু ব্যক্তিত্ব তো আর বিসর্জন দেননি। সেই ব্যক্তিত্ব রক্ষার লক্ষ্যেই মূলতঃ ক্যারিয়ারের ইতিটা আর ন্যু ক্যাম্পে থেকে ঘোষণা করতে পারেননি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে বার্সেলোনা। সুতরাং, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাদের আর খেলা নেই। কোপা ডেল রে জিতে নিয়েছেন আগেই। এবার নিশ্চিত হলো লা লিগা শিরোপাও। জাভি হার্নান্দেজ চলে যাওয়ার পর নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডটা বাধা ছিল ইনিয়েস্তার হাতেই। তার নেতৃত্বেই তো ডাবলস জিতে নিয়েছে কাতালানরা।

Advertisement

সুতরাং, যে ব্যক্তি বার্সার জন্যই ক্যারিয়ারটাকে প্রায় শেষ করে এনেছেন ন্যু ক্যাম্পে, শেষ বেলায় বিজয় মঞ্চে তিনিও ‘কিং’-এ পরিণত হবেন এটাই স্বাভাবিক। বরং, লিওনেল মেসির চেয়েও অনেক বেশি অর্জন ইনিয়েস্তার। স্পেনের হয়ে তো ইনিয়েস্তা বিশ্বকাপটা জিততে পেরেছেন। বরং, ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়সূচক গোলটি করেছেন ইনিয়েস্তাই। তার আগে এবং পরে জিতেছেন দু’দুটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা।

সেই ইনিয়েস্তার হাতে ফুটবলারদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সেরার পুরস্কারটি উঠলো না। এটা ফুটবলেরই আক্ষেপ। ব্যালন ডি’অর কর্তৃপক্ষ ফ্রেঞ্চ ম্যাগাজিন তো কিছুদিন আগেই ইনিয়েস্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে, ২০১০ সালের ব্যালন ডি’অরটা তাকে দিতে না পারার ব্যর্থতার কারণে। সেবার নিশ্চিতভাবেই পুরস্কারটা ওঠার কথা ছিল ইনিয়েস্তার হাতে। অথচ, কিছু রাজনীতি, কুটনীতি আর করপোরেট বাণিজ্যের কারণে ইনিয়েস্তার মত বিশ্বসেরা ফুটবলারের হাতে দেয়া গেল না সেরার পুরস্কার। ফ্রেঞ্চ ম্যাগাজিনের মত ফিফাও এক সময় এসে ইনেয়স্তার কাছে ক্ষমা চাইবে, বিশ্বসেরার স্বীকৃতি তাকে দিতে না পারার কারণে। এটাই এখন সময়ের দাবি।

লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের দিনই বার্সেলোনা শহরে ন্যু ক্যাম্প থেকে ছাদখোলা বাসে করে বিজয় র্যালি বের করে বার্সা ফুটবলার এবং কর্মকর্তারা। ছাদখোলা বাসের ওপর ফুটবলাররা নেচে-গেয়ে উদযাপন করে বিজয়োৎসব। সেই উৎসবেরই মধ্যমনি ছিলেন মেসি এবং ইনিয়েস্তা। মেসির জন্য হয়তো এ ধরনের উৎসব আরও আসবে; কিন্তু ইনিয়েস্তার জন্য যে এই উদযাপনটা একেবারেই শেষ!

আইএইচএস/পিআর

Advertisement