বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ডাক্তার, নার্স ও স্টাফসহ সকল রোগীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গত ৩ মাস ধরে হাসপাতালে খাবার বিশুদ্ধ পানি ও বাথরুমসহ ধোয়া-মোছার জন্য বোতলজাত পানি কিংবা বিভিন্ন পুকুর ডোবা-নালার পানি কিনে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে।
Advertisement
হাসপাতালের অভ্যন্তরের একমাত্র পুকুরটি শুকিয়ে যাওয়া এবং পৌর কর্তৃপক্ষের নামমাত্র সরবরাহকৃত পানিতে চাহিদা পূরণ না হওয়াতেই মূলত এ পানি সংকট বিরাজ করছে। এই অবস্থায় বাইরের ডোবা-নালার পানি ব্যবহার করায় প্রতিনিয়ত ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ২৩ মে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলা ও পৌর শহরসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের দুই লাখের অধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র ভরসা সরকারি এই হাসপাতালটি। শুধু মোংলা উপজেলাই নয় পার্শ্ববর্তী রামপাল, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, দাকোপ ও সুন্দরবনের বনজীবীরা দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এই হাসপাতালে ছুটে আসে।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে সুপেয় পানির চরম সংকট বিরাজ করছে। ফলে রোগীরা সেবা নিয়ে সুস্থ হওয়ার চেয়ে পানির অভাবে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়ে বোতলজাত পানি কিনে ব্যবহার করছেন ডাক্তার ও নার্সরা। আর হাসপাতালে আসা দরিদ্র রোগী ও হাসপাতালের নিম্নস্তরের চাকরিজীবীরা অর্থের অভাবে স্থানীয় ডোবা নালার অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। ডোবা-নালার অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করায় তারা পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
Advertisement
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী শাহিদা বেগম (৩৭) বলেন, ১৫দিন ধরে এই সরকারী হাসপাতালে আছি। এখানে খুব পানির কষ্ট। খাবার পানি নেই, টয়লেটের পানি নেই। টাকা দিয়ে পানি কেনার সামর্থ্যও নেই। কি করব, যাব কোথায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফরিদা বেগম (৪৩) বলেন, আমার পেটে ব্যথা, নার্সরা বেশি বেশি পানি খেতে বলেছে পানি নেই তা খাব কি। তিন দিন পর রোববার গোসল করলাম তাও পানি কিনে এনে।
হাসপাতালের পরিছন্নকর্মী মিথিলা রহমান বলেন, গত ৩ মাস ধরে হাসপাতালে পানির এ সমস্যা চলে আসছে। পানির অভাবে পরিষ্কার পরিছন্নতার কাজ করা যাচ্ছে না। যার ফলে হাসপাতালে নোংরা অবস্থা বিরাজ করছে। যারা স্টাফ আছি আমারও প্রচণ্ড পানি সংকটে ভুগছি। ডায়রিয়ার রোগীরা টয়লেটে গিয়ে পানি পাচ্ছে না। কেউই পানির ব্যবস্থা করছে না।
মোংলা হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স ফাতেমা বলেন, পানির কষ্ট সকলেরই হচ্ছে। রোগীদের দেখাশুনার পর হাত ধুতে হয়, সেই হাত ধুয়ার পানিটুকুও নেই, বাথরুমে যেতেও অসুবিধা হয়। বাইরে থেকে বোতল ও বালতি করে পানি এনে আমাদের প্রয়োজন মিটাতে হচ্ছে।
Advertisement
মোংলা হাসাপাতালের মেডিকেল অফিসার ড. মো. রাফিউল হাসান বলেন, পানির সংকটের কারণে আমি নিজেই পানি কিনে ব্যবহার করছি। রোগীরা পানির জন্য জ্বালাতন করছে কোথা থেকে পানি দিবো আমরা।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালে সুপেয় পানির প্রচণ্ড সংকট রয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক এলাকার পুকুরটি শুকিয়ে যাওয়ায় মূলত পানির সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। এছাড়া পৌরসভা পাইপ লাইনের মাধ্যমে দিনে একবার যে স্বল্প পরিমাণ পানি সরবরাহ করে হয় তা হাসপাতালের চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য। তাই এ সংকট নিরসন সম্ভব হচ্ছে না।
বাগেরহাটের সিভিজ সার্জন ডা. অরুন চন্দ্র মন্ডল হাসপাতালটিতে পানি সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, এটি সিভিল সার্জন কিংবা টিএইচও’র কাজ বা দায়িত্ব নয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
শওকত বাবু/আরএআর/এমএস